মিষ্টি মিষ্টি

>মিষ্টিমুখ করতে পছন্দ না—এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। সেই মিষ্টি যদি বাড়িতে বানানো হয়, তাহলে তো কথাই নেই। রেসিপি দিয়েছেন ফারাহ্​ সুবর্ণা

গুড়ের রসগোল্লা

উপকরণ: পূর্ণ ননিযুক্ত তরল দুধ ১ লিটার, ভিনেগার ২ টেবিল চামচ, খেজুর গুড় ১ কাপ (২৫০ গ্রামের মতো), চিনি ১ কাপ, পানি ৫ কাপ।
প্রণালি: একটা পাত্রে দুধ জ্বালে বসিয়ে একবার ফুটে উঠলেই তাতে ভিনেগার দিয়ে ঘন ঘন নেড়ে দুধ ফেটে গেলেই চুলা বন্ধ করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর ছানার পানি ঝরিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে, যাতে ভিনেগারের গন্ধ না থাকে। তারপর একটা সুতি কাপড়ে ছানা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে পানি একেবারে ঝরিয়ে নিতে হবে। পানি ঝরে গেলে ছানা একটা পাত্রে বা থালায় নিয়ে খুব ভালো করে মেখে মসৃণ করে নিন। ছানা হাতের তালু দিয়ে মাখতে থাকুন। যতক্ষণ পর্যন্ত হাত তেলতেলে হয়ে ছানা একদম নরম আর না মসৃণ হয়, ততক্ষণ মাখতে হবে। এতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগতে পারে। এরপর ছানা থেকে ছোট ছোট বল আকারে তৈরি করে নিন। এ সময় দুইটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। প্রথমত, ছানার বল বেশি বড় করা যাবে না। কারণ, গুড়ের শিরায় ভেজানোর পর রসগোল্লা ফুলে উঠবে। দ্বিতীয়ত, বল বানানোর সময় তাতে যেন কোনো ফাটল না থাকে। তাহলে শিরায় দেওয়ার পর ভেঙে যাবে। অপর একটা ভারী তলানির বড় পাত্রে কুচোনো গুড় আর চিনি পানিতে দিন। জ্বাল দিয়ে ভালো করে গলিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে এক এক করে সব ছানার বল ছেড়ে দিয়ে বেশি আঁচে ৩৫-৪০ মিনিটের মতো জ্বাল দিন। কিছুক্ষণ পরপর নেড়ে দিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে শিরা বেশি ঘন হয়ে এলেই আধা কাপ করে পানি মিশিয়ে শিরা পাতলা করে নিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পর চুলা থেকে নামিয়ে ঘণ্টাখানেক ভালোভাবে শিরায় ভিজতে দেওয়ার জন্য রেখে পরিবেশন করা যাবে।

কাঁচাগোল্লা

উপকরণ: ছানা ১ কাপ, গুঁড়া চিনি আধা কাপ, পানি ২ টেবিল চামচ, এলাচিগুঁড়া সিকি চা-চামচ, ঘি আধা চা-চামচ, মাওয়া প্রয়োজনমতো।
প্রণালি: প্রথমে ছানা, এলাচিগুঁড়া ও চিনি মসৃণ করে মেখে নিতে হবে। তারপর প্যানে ঘি গলিয়ে তাতে মাখানো ছানা দিয়ে অনবরত নাড়তে হবে, পাত্রে যেন লেগে না যায়। অল্প পানি দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে ছানা নাড়তে নাড়তে যখন মোটামুটি শুকিয়ে আসবে (একদম শুকানো যাবে না, নরম থাকবে), তখন নামিয়ে নিন। অল্প ঠান্ডা করে তা থেকে অল্প অল্প করে ছানা নিয়ে বলের আকারে তৈরি করে মাওয়ায় গড়িয়ে নিতে হবে। পুরোপুরি ঠান্ডা করে তারপর পরিবেশন করতে হবে। 

মাওয়া 

উপকরণ: তরল দুধ ১ কাপ, গুঁড়া দুধ ১ কাপ।
প্রণালি: পাত্রে দুধ জ্বাল দিয়ে সিকি ভাগ হয়ে এলে তাতে অল্প অল্প করে গুঁড়া দুধ মিশিয়ে ডোয়ের মতো তৈরি করে হালকা ঠান্ডা করে নিন। একটা বড় বলের আকারে তৈরি করে ফ্রিজে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিন। ঠান্ডায় শক্ত হয়ে গেলে তা গ্রেটারে গ্রেট করে যেকোনো মিষ্টিতে ব্যবহার করা যাবে।

আফলাতুন

উপকরণ: ময়দা সিকি কাপ, সুজি সিকি কাপ, গুঁড়া দুধ সিকি কাপ, ঘি সিকি কাপ, ডিম ২টি, চিনি আধা কাপ, এলাচিগুঁড়া আধা চা-চামচ, বেকিং পাউডার ১ চিমটি।
প্রণালি: চিনি, ডিম ও ঘি ভালোভাবে ফেটিয়ে রাখতে হবে। ময়দা, সুজি, গুঁড়া দুধ, এলাচিগুঁড়া আর বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন। একটু একটু করে চিনি-ডিমের মিশ্রণে মিশিয়ে নিন। কেকের মিশ্রণের মতো তৈরি করে নিন। এবার একটা চারকোনা কেকের প্যানে ঘি মাখিয়ে তাতে মিশ্রণ ঢেলে ১৬০ ডিগ্রিতে প্রি-হিট করা ওভেনে ৩৫ মিনিটের মতো বেক করুন। খেয়াল রাখুন, ওপরটা গাঢ় সোনালি হলে তারপর নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হওয়ার পর প্যান থেকে নামিয়ে আফলাতুনের আকারে (আয়তাকারে) কেটে পার্চমেন্ট পেপারে মুড়ে পরিবেশন করতে হবে।

বালুশাই

উপকরণ: ময়দা ২ কাপ, ফেটানো টক দই ৬ টেবিল চামচ, ঘি ৪ টেবিল চামচ, বেকিং সোডা আধা চা-চামচ, জায়ফলগুঁড়া সিকি চা-চামচ, লবণ ১ চিমটি, চিনি ২ কাপ, পানি ১ কাপ, তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য, মাওয়া পরিমাণমতো।
প্রণালি: ময়দা, বেকিং সোডা, লবণ আর জায়ফলগুঁড়া একটা চালনিতে নিয়ে চেলে নিতে হবে। চেলে নেওয়া ময়দার সঙ্গে ঘি মিশিয়ে নিন। ভালোমতো ঝরঝরে করে মেখে নিন। তারপর টক দই অল্প অল্প করে দিয়ে রুটি বানানোর ডো বা খামিরের মতো তৈরি করে নিন। আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিতে হবে। খুব বেশি মাখানো যাবে না। যদি প্রয়োজন হয় তবে টক দইয়ের পাশাপাশি অল্প পানিও ব্যবহার করা যেতে পারে। নির্দিষ্ট সময় পর খামিরগুলো দিয়ে ছোট চ্যাপ্টা (মাঝের দিকে একটু বেশি চ্যাপ্টা) আকারের মিষ্টি তৈরি করে নিন। প্যান বা কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে অল্প আঁচে একটু সময় নিয়ে সোনালি করে ভেজে তুলে নিতে হবে। মিষ্টি তেলে ভাজা হতে হতে চিনির শিরা তৈরি করে নিন। পানি আর চিনি একটা পাত্রে বসিয়ে জ্বাল দিয়ে চিনি মিশে গেলে নামিয়ে নিন। মিষ্টি ও শিরা দুটোই হালকা ঠান্ডা হয়ে এলে শিরায় মিষ্টি ডুবিয়ে দিয়ে ৫ মিনিট রেখে তুলে ফেলতে হবে। একটা ছড়ানো প্লেটে মাওয়া নিয়ে তাতে বালুশাই মিষ্টিগুলো গড়িয়ে নিয়ে পরিবেশন করুন।

ছানার সন্দেশ

উপকরণ: ছানা ১ কাপ, চিনি আধা কাপ, এলাচিগুঁড়া ১ চিমটি, ঘি অল্প, পেস্তাকুচি/কিশমিশ সাজানোর জন্য।
প্রণালি: একটা ননস্টিক পাত্রে ছানা, চিনি আর এলাচিগুঁড়া নিয়ে কম আঁচে অনবরত নেড়ে রান্না করতে হবে। চিনি গলে ছানার সঙ্গে মিশে আঠালো হয়ে এলে তা চুলা থেকে নামিয়ে একটা ঘি মাখানো ট্রেতে সমান করে বিছিয়ে দিন। ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর পছন্দসই আকারে কেটে ওপরে পেস্তাকুচি বা কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। ছাঁচে দিয়ে সুন্দর নকশাদার সন্দেশও করা যেতে পারে।

কালোজাম

উপকরণ: গুঁড়া দুধ ১ কাপ, ময়দা সিকি কাপ, বেকিং পাউডার ১ চা-চামচ, ডিম ১টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, চিনি ২ কাপ, পানি ২ কাপ, তেল ডুবো তেলে ভাজার জন্য, এলাচি ২টি, লাল খাবার রং সামান্য, মাওয়া পরিমাণমতো (সাজানোর জন্য)।
প্রণালি: একটা পাত্রে ডিম ও ঘি ভালো করে ফেটিয়ে রাখতে হবে। গুঁড়া দুধ, ময়দা ও বেকিং পাউডার একসঙ্গে মিশিয়ে তাতে ডিমের মিশ্রণ অল্প অল্প করে দিয়ে নরম ডো বা খামির বানিয়ে নিয়ে তা আধা ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে হাতে অল্প ঘি মেখে খামির থেকে লেচি কেটে কালোজাম মিষ্টির আকারে (একটু চিকন আর লম্বাটে) তৈরি করে নিয়ে ডুবো তেলে কম আঁচে ভেজে নিতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, মিষ্টি তেলে ছাড়ার সময় তেল যেন বেশি গরম না থাকে। তাহলে মিষ্টির বাইরের দিক তাড়াতাড়ি লালচে হয়ে যাবে আর ভেতর দিক কাঁচা থেকে যাবে। মিষ্টি প্রথমে লালচে হবে, পরে ঘন ঘন নেড়ে কালচে করে (কালোজাম যেমন রঙের হয়) ভেজে নামিয়ে নিতে হবে। অন্যদিকে, আরেকটা পাত্রে চিনি ও পানি জ্বাল দিয়ে শিরা তৈরি করে তাতে ভেজে রাখা মিষ্টি দিয়ে মিনিট ১৫ মাঝারি আঁচে ঢাকনা দিয়ে রান্না করুন। মাঝে দু–একবার একটু হালকা হাতে নেড়ে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময় পরে চুলা থেকে নামিয়ে আরও আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিয়ে শিরা থেকে কালোজাম তুলে নিন। ওপরে মাওয়া ছড়িয়ে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।