যখন পিঠাপিঠি সন্তান

দুই সন্তানের বয়সের ব্যবধান কম হলে তাদের সামলাতে কৌশলী হতে হয়।  মা তানিয়ার সঙ্গে নোরা ও নেফরা। ছবি: অধুনা
দুই সন্তানের বয়সের ব্যবধান কম হলে তাদের সামলাতে কৌশলী হতে হয়। মা তানিয়ার সঙ্গে নোরা ও নেফরা। ছবি: অধুনা

পিঠাপিঠি ভাইবোন। একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। এক সঙ্গেই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সব বাঁকে পৌঁছানো। একসঙ্গে পথচলার অনন্য এক বাঁধন। তবে এই সন্তানদের বড় করতে মা-বাবারা খানিক বিপত্তিতে পড়তে পারেন। বিশেষ করে শিশুকালে। এক সন্তান হয়তো ঘুমাল, অন্যজন তখনই কান্না জুড়ে দিল! ঘুমন্ত জনও কাঁচা ঘুম ভেঙে উঠে শুরু করল কান্নাকাটি।

তবে একটু বুদ্ধি করে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারেন। সব বিষয়েই দুজনের কথা মাথায় রাখুন। আর সেভাবেই গড়ে তুলুন ওদের। ঝামেলার মনে হলেও বিষয়টা অত জটিল নয়। পরিস্থিতি সামলে চলাটাই বড় কথা। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার বলেন, সাধারণত অন্তত ৩-৪ বছর ব্যবধান রেখে সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করার কথা বলা হয়ে থাকে। তবে পিঠাপিঠি সন্তান যদি হয়েও থাকে, তাদের যত্ন এবং মায়ের সুস্থতার জন্য পরিবারের সবাইকেই সচেষ্ট হতে হবে। একলা মায়ের ঘাড়ে সব দায়দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে চলবে না। সন্তানের বাবা এবং সম্ভব হলে অন্য নিকটাত্মীয়রা মাকে সাহায্য করবেন। সময়-সুযোগ না মিললে অন্য মানুষের সহায়তাও নিতে হতে পারে। আর শিশু দুটির খাওয়া-দাওয়া, গোসল, পড়ালেখা—সব একসঙ্গে অভ্যাস করতে থাকলে শিশুদের আগ্রহ বাড়ে। একজনকে দেখে আরেকজন শেখে। নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ আর চেষ্টাও থাকে ছোট থেকেই। 

একসঙ্গে খাই-দাই

ওদের একই সঙ্গে খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যদি ছোট সন্তানটির বয়স ছয় মাসের কম হয়, সেই সময় অবশ্য একটু মুশকিল হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তুলনামূলক বড় সন্তানটির জন্য খাবার রান্নাবান্না এবং তাকে খাওয়ানোর দায়িত্ব মা ছাড়াও অন্য কাউকে নিতে হবে। দুটি শিশু যখন একসঙ্গে খাওয়ার বয়সে আসবে, তখন অবশ্যই একসঙ্গে খাওয়ানো উচিত। 

এ ছাড়া শিশু দুটির নিয়মিত গোসল, পোশাক পরিবর্তন, ঘুম, খাওয়া—সবকিছুতেই মাকে সাহায্য করতে হবে পরিবারের বাকি সদস্যদের। তবে কিছুতেই যেন একটা শিশুর দিকে বেশি মনযোগ না থাকে। এতে আরেকটি শিশু দুঃখ পুষে বড় হতে পারে, যা তার ব্যক্তিজীবনে পরবর্তী সময়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর মাকে সাহায্য না করলে মা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পরে। এর ফলে মায়ের অসুস্থতায় শিশুদের ওপর তার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। 

একসঙ্গে বড় হই

একটি দৃশ্যকল্প। একটি শিশু খুব ছোট। মা আবার গর্ভধারণ করলেন। এ রকম পরিস্থিতিতে শিশু আর মা দুজনের পুষ্টি ও সুস্থ থাকা নিশ্চিত করতে হবে পরিবারকে। শিশুটি খেলার ছলে মায়ের পেটে ব্যথা দিতে পারে। কিন্তু তাকে বোঝাতে হবে, মায়ের কাছেই তার একজন খেলার সঙ্গী আছে, যে খুব শিগগির চলে আসবে। সেই সময় থেকেই ভাইবোনের মায়াময় সম্পর্কটি বোঝাতে শুরু করুন। বিষয়টি যতটা ভালোভাবে শিশুর মস্তিষ্কে ঢুকে যায়, ততটাই আন্তরিক হবে সে পরিবারের নতুন সদস্যটির প্রতি।