অন্দরে ঐতিহ্যের ছোঁয়া

পুরোনো জিনিসে সেজে উঠুক অন্দর
পুরোনো জিনিসে সেজে উঠুক অন্দর

‘ভাগনির শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে দেখলাম ছাদের এক কোণে পড়ে আছে একজোড়া ভাঙা চেয়ার। জানতে পারলাম চেয়ারজোড়া তার শ্বশুরের। কোনো কাজে আসছে না দেখে এভাবেই  ফেলে রাখা আছে ছাদের কোণে। সব সময়ই এখানে–সেখানে ছড়িয়ে থাকা জিনিস দিয়ে ঘর সাজানো আমার নেশা। তখনই চটজলদি ভাবনাটা এল মাথায়। পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী জিনিসগুলো তো অন্দরসজ্জায় কাজে লাগানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই চেয়ারজোড়া নিয়ে এলাম বাসায়। ভাঙা চেয়ারজোড়া দিয়ে নতুনভাবে রং করালাম। গড়ে উঠল নান্দনিক বসার বেঞ্চ।’ কথাগুলো বলছিলেন নাসরীন হক। জানালেন পুরোনো আসবাব হয়তো পড়ে থাকে ঘরের কোণে, না হয় থাকে অকেজো। একটু নান্দনিকতার ছোঁয়া আনতে পারলে এসব আসবাবেও সাজাতে পারেন ঘর। এমনটাই তিনি করেছেন তাঁর বাসায়।

শিল্পী দম্পতি প্রাণ রায় আর শাহনেওয়াজ কাকলি সংগ্রহ করেন পুরোনো দিনের নানা জিনিস
শিল্পী দম্পতি প্রাণ রায় আর শাহনেওয়াজ কাকলি সংগ্রহ করেন পুরোনো দিনের নানা জিনিস

এদিকে অনেকের আবার আছে এমন পুরোনো আসবাব সংগ্রহের নেশা। যেমনটা করে থাকেন শিল্পী দম্পতি প্রাণ রায় আর শাহনেওয়াজ কাকলি। তাঁরা বললেন, ‘আমরা দুজনেই যখন চারুকলায় পড়তাম তখন থেকেই পুরোনো জিনিস সংগ্রহের প্রতি ছিল ভীষণ নেশা। এখানে–সেখান থেকে সংগ্রহ করতাম পুরোনো জিনিস। বিয়ের পর সেগুলো দিয়েই সাজালাম ঘর।’ এদিকে বিয়ের পর একবার শুটিং করতে ঢাকার বাইরে গিয়েছিলেন শাহনেওয়াজ কাকলি। তো সেখানে দেখা মিলল এক পুরোনো আসবাব বিক্রেতার সঙ্গে। সেখান থেকেই কিনে ফেললেন খাটসহ আরও অনেক জিনিস। একইভাবে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ঘুরে সংগ্রহ করেছেন পুরোনো টেলিফোন, ঘরের খাট, নানা ধরনের তৈজস, কুপির মতো আরও জিনিস। শাহনেওয়াজ কাকলি মনে করেন, পুরোনো এসব আসবাবের আছে নিজস্ব ভাষা। শুধু এনে এখানে–সেখানে ফেলে রাখলেই হবে না। এগুলোকেও রাখতেও হবে নান্দনিকভাবে। তবেই না এসব পুরোনো জিনিসেও ঘর পাবে নতুন ভাষা।

সাবেকি নকশার খাটে ফুটে উঠেছে আভিজাত্য
সাবেকি নকশার খাটে ফুটে উঠেছে আভিজাত্য

এমন অনেক জিনিসই কমবেশি কারও না কারও বাড়িতে থাকে। সেগুলো একটু পুনর্নির্মাণ করে ব্যবহার করতে পারেন ঘর সাজানোর কাজে। আগেকার দিনে ট্রাংক ব্যবহারের বেশ প্রচলন ছিল। যদি কারও বাসায় এমন ট্রাংক থেকে থাকে তাহলে সেই ট্রাংকে পেইন্ট করিয়ে নিয়ে রাখতে পারেন ঘরের কোণে। জলচৌকিতে বা হারিকেনেও একইভাবে করিয়ে নিতে পারেন অঙ্কনচিত্র। পুরোনো ঘড়ি, রেডিও এগুলোও ব্যবহার করতে পারেন ঘর সাজানোর কাজে। তবে ঘুরেফিরে বলতে হয় সেই পুরোনো কথা। পুরোনো এসব পণ্য রাখার ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে অন্দরসজ্জার কিছু নিয়ম। যেমন, পুরোনো সেলাই মেশিনের টেবিল থাকলে তার ওপর সাজিয়ে রাখতে পারেন অ্যান্টিকের শোপিস। এ ছাড়া পুরোনো ল্যান্ডফোন যাঁদের বাড়িতে আছে, তাঁরা সেটিও ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন ঘরের কোণে এ জন্য একটি টেবিল বসিয়ে নিন। এর ওপরে টেলিফোনটি রাখুন। সঙ্গে জুড়ে দিন পুরোনো একটা ল্যাম্পশেড। এবার ইনডোর প্ল্যান্ট রেখে তা বসিয়ে দিন টেবিলে ওপর। দেখুন না কেমন নান্দনিক হয়ে উঠেছে আপনার ঘরের কোণ। বাসার ঘরগুলোতে চাইলেই রাখা যায় পুরোনো ধাঁচের ছোঁয়া। এতে ঘরের একটা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে উঠবে।

নতুন যুগের বাড়িতে পুরোনো আমলের দরজা
নতুন যুগের বাড়িতে পুরোনো আমলের দরজা