হঠাৎ ছুটিতে

ছুটির এই সময়ে শিশুকে ইচ্ছেমতো সময় কাটাতে দিন। মডেল: এলিজা, ছবি: সুমন ইউসুফ
ছুটির এই সময়ে শিশুকে ইচ্ছেমতো সময় কাটাতে দিন। মডেল: এলিজা, ছবি: সুমন ইউসুফ

করোনাভাইরাসের আক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। আর তাই হঠাৎ করে শিশুরাও বেশ কিছুদিনের জন্য ছুটি পেয়েছে স্কুল থেকে। শুধু স্কুল নয়, এ সময়ে বড়দের মতো শিশুদেরও বাইরে না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। এমনিতে স্কুল, টিউশন, কোচিংসহ নানা ক্লাসের চাপে শিশুরা পরিবারের সঙ্গে খুব একটা সময় কাটাতে পারে না। এ সময়টা তাই সন্তানদের জন্য বরাদ্দ করতে পারেন পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে। 

সাধারণ সময়ে ছুটির দিনেও খাওয়া, ঘুম, পরদিনের পড়াশোনা এগিয়ে রাখতে রাখতেই শেষ। তাই অনেকটা সময় পারিবারিক বলয়ে কাটানোর জন্য এ সময়ে পাওয়া ছুটি প্রত্যেক শিশুর জন্য এক বাড়তি পাওনা বটে। তাই মা–বাবারাও চাইছেন এ সুযোগে শিশুকে যতটা সম্ভব নিজেদের সঙ্গে রেখে গুণগত সময় দিতে। 

ঢাকার রন্ধনশিল্পী আতিয়া আমজাদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কয়েকটি খণ্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। যেখানে তাঁর মেয়ে বাবার সঙ্গে সোফায় বসে গাইছে বাপ্পা মজুমদারের ‘আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে’ গানটি। কারাওকে পদ্ধতিতে গাওয়া সেই গান বাবা–মেয়ে মিলে গেয়েছেন বেশ মজা করে। তবে মেয়ের গান করা দেখে দিব্যি বোঝা যাচ্ছিল, গানের কথার সঙ্গে মোটেও মেয়ের মনের কথার মিল নেই। বরং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ বলে বাবার সঙ্গে গান করতে পেরে মেয়ে দিব্যি খুশি। 

সন্তানদের এই সময়ে ঘরে রাখার জন্য এমন দাওয়াই দিতে পারেন আপনিও। শিশুকে গিটার, তবলা, বাঁশি বা বেহালার মতো বাদ্যযন্ত্র শেখাতে পারেন ঘরে। সেটা যে একদম শিক্ষক ডেকে এনেই কাল থেকে শুরু করতে হবে, এমনটা নয়। তার যদি ভালো লাগে বা আগ্রহ থাকে তাহলে করোনা–পরবর্তী সময়ে সেটা প্রশিক্ষক দিয়ে এগিয়ে নেওয়া যাবে। এখন কিনে দিতে পারেন ছবি আঁকার উপকরণ। নাচের জন্য ঘুঙুরও কিনে দিতে পারেন। এ ছাড়া নানা রকম ঘরোয়া খেলায় সময় কাটানো যেতে পারে শিশুদের সঙ্গে। লুডু, ক্যারম বা দাবার সরঞ্জাম কিনে বসে যেতে পারেন সন্তানকে নিয়ে। এসব না দিতে চাইলে স্বল্প পরিসরে খেলা যায় এমন নিজের শিশুকালের খেলা পাঁচঘুঁটি, লুকোচুরি, চোর-পুলিশ, জোড়-বিজোড়, বরফ-পানি, রুমালচোর, চার কড়ি, গানের কলি, এলোমেলো অক্ষর সাজিয়ে লেখা, ক্লু মিলিয়ে শব্দ তৈরি, ধাঁধা ইত্যাদি প্রায় হারিয়ে যাওয়া খেলার সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিতেই পারেন। এ প্রসঙ্গে ঢাবার সরকারি গার্হ্যস্থ অর্থনীতি কলেজের শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাফিকা সুলতানা বলেন, ‘এমন সময় ছেলে ও মেয়ে উভয় ধরনের শিশু তাদের মা ও বাবাকে ঘরের কাজে সাহায্য করবে। ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্ন ও গুছিয়ে রাখবে, সৃজনশীল কাজ করবে, চা বানানো, বাসন–কোসন মাজা থেকে কেক পর্যন্ত বানাতে পারে। বয়স অনুসারে তাঁর পছন্দের যেকোনো সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকবে, যে কাজটি করতে শিশু পছন্দ করে, সেটি করতে তাকে উৎসাহ ও সুযোগ করে দিতে হবে।’ 

আবার খালি কণ্ঠে গান, ছড়া বা কবিতাও হতে পারে ঘরে বসে বাড়তি শেখা। শুধু তা–ই নয়, এটা অনেক বড় সুযোগ শিশুকে ঘরের কাজ শেখানোর। বাড়িঘর গুছিয়ে রাখা, নিজের কাজ নিজে করা, পরিচ্ছন্ন থাকার অভ্যাস গড়ে তোলার এটাও বিশেষ সময়। শিশু যদি আগ্রহী থাকে, তাহলে নানা রঙের কাগজ দিয়ে অরিগামি শেখানো যেতে পারে। আবার বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে ভিন্ন ধাঁচের যেকোনো কিছু তৈরি করাটাও শিশুর সময় কাটানোর জন্য খুব ভালো মাধ্যম হতে পারে। শিশুর যদি ভাইবোন থাকে, তবে সেটি শিশুর জন্য নিঃসন্দেহে এক বাড়তি পাওনা, কারণ সে সব সময় সঙ্গী পায়। কিন্তু যে শিশু মা–বাবার একমাত্র সন্তান, তাঁর জন্য মা–বাবাই হতে হবে সবচেয়ে কাছের ও পাশের বন্ধু। বকাঝকা বা ধমক না দিয়ে, আনাড়ি শিশুকে আদর ও উৎসাহ দিয়ে তার পছন্দের যেকোনো কাজ শিখিয়ে দেওয়া যায়। একই সঙ্গে শিশুকে গড়ে তোলা যায় দক্ষ মানুষ হিসেবে। তাকে গল্পের বই পড়ে শোনাতে পারেন। এ সময়ে চাইলে শিশুকে একটা নোটবুক দিয়ে প্রতিদিনের ঘটনাগুলো টুকে রাখা শেখাতে পারেন। অনেক বছর পরে বড়বেলায় একদিন পুরোনো নোটবুক পেয়ে হঠাৎ ছুটির দিনগুলো মনে করে হয়তো কিছুটা সময় ভালো কাটবে। হারিয়ে যাবে স্মৃতির শৈশবে। মন্দ কী!