করোনা পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ সামলাবেন কী করে

করোনার সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন সবাই। সেটাই স্বাভাবিক। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। আতঙ্ক, অহেতুক রাগ বা অবসাদের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। কিন্তু যেকোনো বিপদ মোকাবিলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস। কীভাবে এই সময় আপনার প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত, কেমন করে আপনি নিজের পরিবার-স্বজনদের নির্ভরতা দেবেন, সে সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করবেন?

আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন: এই আতঙ্কময় সময়ে কেবল আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন। তাঁরা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সহায়তা করবেন বিভিন্নভাবে।

গুজবে কান না দিয়ে পরিবারের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম কাটান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: বিভিন্ন মাধ্যমে এখন উড়ছে অতিপ্রচার, অপপ্রচার এবং বিভিন্ন গুজব। গুজবে কান দেবেন না। পরিবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটান। সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন, রুটিন বিষয়গুলো, যেমন ঘুম, ঠিক সময়ে খাবার, বাড়িতে হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি বন্ধ করবেন না। সুষম আর নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। সময়মতো ঘুমান, হালকা ব্যায়াম করুন এবং অবশ্যই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ধূমপান, মদ্য পান বা নেশা এড়িয়ে চলুন।

শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও সবার খোঁজ রাখুন: প্রায় আবদ্ধ শহরে বিচ্ছিন্নতার জন্য অসহায় লাগতে পারে। তাই বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। পরস্পরের খোঁজ রাখুন। করোনায় সংক্রান্ত কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন।

বিশ্বাসযোগ্য তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন: কেবল বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া সঠিক তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত তথ্যসমূহ নিজে জানুন আর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞের ওপর আস্থা রাখুন।

সব সময় করোনা ভাইরাস নিয়েই পড়ে থাকবেন না: দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আপনি নিজে বা পরিবারের সদস্যরা প্রচারমাধ্যমে/সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আর এর পরিণতি নিয়ে তথ্য, সংবাদ ও ভিডিও দেখবেন না। এতে নিজের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হবে। করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য জানার পাশাপাশি অন্যান্য অনুষ্ঠানও উপভোগ করুন।

আস্থা রাখুন নিজের ওপর: নিজের ওপর আস্থা রাখুন। অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। আত্মপ্রত্যয়ী থাকুন; এতে আপনার মানসিক চাপ অনেকাংশে লাঘব হবে।

শিশুদের প্রস্তুত করুন, অভিজ্ঞ করুন, সঠিক তথ্য দিন: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ইস্যুতে বড়দের মতো শিশুরাও মানসিক চাপে ভুগতে পারে। এ সময় তারা মা-বাবাকে একটু বেশি আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, উৎকণ্ঠিত হয়, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, অস্থির হয়, রাগ করে কেউবা হঠাৎ করে বিছানায় প্রস্রাব করা শুরু করে। মানসিক চাপজনিত এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন, একটু বেশি সময় দিন। শিশুটিকে নিজের মতো করে ঘরোয়া খেলা খেলতে দিন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সকল পর্যায়ে শিশুকে তার মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গেই রাখুন এবং তাদের আলাদা করা থেকে বিরত রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি, কোয়ারেন্টিন বা যেকোনো কারণে যদি আলাদা করতেই হয়, তবে টেলিফোন বা অন্য মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করুন এবং শিশুদের নিয়মিত অভয় দিন।

চারপাশে যা হচ্ছে সে বিষয়ে শিশুকে তার বয়স উপযোগী করে প্রকৃত সত্য তথ্য প্রদান করুন এবং কীভাবে সে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে, সেটা বুঝিয়ে বলুন। সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার স্বাস্থ্যবিধিগুলো শিশুকেও শেখান। শিশু বা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা শিশুর সঙ্গে আলোচনা করে রাখুন, সেই সঙ্গে জানান যে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সবার সুস্থতা আর নিরাপত্তার জন্য চিকিৎসকই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, চাইল্ড এডোলেসেন্ট ও ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।

আরও পড়ুন: