ঘরে মরুর দেশের গাছ

নানা ধরনের ক্যাকটাস। ছবি: সুমন ইউসুফ
নানা ধরনের ক্যাকটাস। ছবি: সুমন ইউসুফ

গাছ ভালোবাসেন না, এমন কেউ আছেন কি? কিন্তু ব্যস্ত জীবনে সময় বের করে গাছের যত্ন নেওয়াটা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্যই বটে। জায়গা ও সময়ের স্বল্পতা, প্রতিদিন পানি দেওয়ার ঝামেলা, দু-চার দিন বাইরে থাকলেই গাছ মরে যাওয়াটা বাগান করার উৎসাহে ভাটা ফেলার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু এমন সমস্যা মেনেও শুধু একচিলতে রোদকে ভালোবেসে দারুণ সব গাছে ছেয়ে যেতে পারে আপনার অন্দর।

অল্প জায়গায়, কম যত্নে, অল্প পানি দিলেই খুব ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারে কষ্টসহিষ্ণু কিছু গাছ। ক্যাকটাসজাতীয় উদ্ভিদ, সাকুলেন্ট ও অ্যাডেনিয়াম বেছে নেওয়া যেতে পারে ইচ্ছেমতো। জলাবদ্ধতা এদের মূল শত্রু। একবার পানি দিলে সেই পানি গাছগুলো ধারণ করে রাখতে পারে বলে প্রতিদিন পানি দেওয়ার দরকার হয় না। বরং গোড়ায় পানি শুকিয়ে যাওয়ার তিন-চার দিন পর পানি দিলেই এসব গাছ ভালো থাকে। ক্যাকটাস বীজ থেকে এবং কাণ্ডের অংশবিশেষ ভেঙে লাগিয়ে দিলেই চারা তৈরি করা সম্ভব। সাকুলেন্ট পাতা, চারা, বীজ ও ডাল থেকে এবং অ্যাডেনিয়াম বীজ ও কাটিং থেকে চারা তৈরি করা যায়। এসব গাছে রোগবালাই কম হয় বলে শখের বাগানিরা অনায়াসেই রাখতে পারেন সংগ্রহে।

বাংলাদেশ ক্যাকটাস লাভারস সোসাইটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মাদ আসিফ ইকবাল জানান, পানিতেই মরুর দেশের গাছেদের মৃত্যু হয়। সপ্তাহে এক দিন কিংবা খুব খরায় দুই দিন পানি দেওয়াটাই যথেষ্ট। তবে পাত্রের নিচের অংশে ছিদ্র থাকা বাধ্যতামূলক। গোড়ায় পানি জমলে এসব গাছ বাঁচানো সম্ভব হয় না। গাছে নয়, বরং গাছ থেকে কিছুটা দূরে পানি দেওয়া উচিত। শীতকালে বিকেলে পানি দেওয়া যাবে না কিছুতেই। তবে সারা বছর ভোরে পানি দেওয়ার উপযুক্ত সময়। এসব গাছ রোদে থাকলে ছত্রাকের আক্রমণ থেকে একদিকে যেমন সুরক্ষিত থাকে, তেমনি ফুল বেশি ধরে। তবে ছায়ায় বড় হওয়া গাছেদের হঠাৎ করেই তীব্র রোদে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেবেন না। এতে গাছ পুড়ে মারা যেতে পারে।

ক্যাকটাস
শহুরে মানুষের কাছে এই কাঁটাযুক্ত সৌন্দর্যমণ্ডিত ক্যাকটাস এখন ঘরের গাছ হিসেবেই বেশি পরিচিত। প্রচলিত ক্যাকটাসের মাথা কেটে তাতে লাল, খয়েরি, গোলাপি কিংবা হলুদ রঙের ক্যাকটাসের কলম করে বানানো হয় রঙিন ক্রাউন ক্যাপ গ্রাফটিং ক্যাকটাস। দেখতে আকর্ষণীয় এমন গ্রাফটিং ক্যাকটাস অনেকেই রাখেন তাঁদের নিজেদের সংগ্রহে। সব ধরনের ক্যাকটাসেই রোদের দরকার হয়। তবে নিতান্তই যদি রোদ না আসে, তবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস আসা-যাওয়া করে, এমন স্থানেই ক্যাকটাস রাখা ভালো। কাঁটায় ভরা গাছের সৌন্দর্য ছাড়াও ক্যাকটাসের ফুল খুব সুন্দর। ছোট টবে রাখা ক্যাকটাস অনায়াসেই স্থান পেতে পারে ছাদে কিংবা বারান্দায়। আলাদা জাতের ক্যাকটাস ভিন্ন ভিন্ন টবে তো বটেই, ইচ্ছা হলে কিছুটা বড় টবে একত্রে কয়েক জাতের ক্যাকটাস লাগিয়ে দিলেও দেখতে ভালো লাগবে। কাঠ, বাঁশ বা রডের তৈরি স্ট্যান্ড বানিয়ে নিলে অনায়াসেই নান্দনিকভাবে গুছিয়ে পরিপাটি করে অন্দরের দ্যুতি ছড়াতে পারে এই কণ্টকিত ভালোবাসার। ফেরো, নোটো, মেলো, ক্লেসট্রো, র্যাট টেইল, লবিভিয়া, পেরেস্কিয়া, বানি ইয়ারস এ দেশে বেড়ে ওঠা জনপ্রিয় ক্যাকটাসের জাত। 

ক্যাকটাস বাঁচে অনেক দিন। কৃতজ্ঞতা: নাদিয়া আনোয়ার
ক্যাকটাস বাঁচে অনেক দিন। কৃতজ্ঞতা: নাদিয়া আনোয়ার

সাকুলেন্ট
সাকুলেন্ট সাধারণভাবে পরিচিত রসাল পাতা বা কাণ্ডের সুন্দর গড়নের জন্য। সবুজ ও রঙিন দুই ধরনের সাকুলেন্ট আমাদের দেশে দেখতে পাওয়া যায়। সবুজ রঙের সাকুলেন্ট অনায়াসেই আপনার অন্দরের শোভা বাড়াতে ঘরের ভেতর রাখতে পারবেন। বেশি আলো পায়, এমন স্থানে রাখাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। রঙিন সাকুলেন্ট আপনাকে ঘরের বাইরে সরাসরি সূর্যালোকে রাখতে হবে। বেশির ভাগ সাকুলেন্ট শীতের মিষ্টি রোদে দারুণভাবে হাসি ছড়ায়। শীতকালের সাকুলেন্ট বেশির ভাগই গরম আসার সঙ্গে সঙ্গে মারা যেতে থাকে। আবার কিছু কিছু জাত গরমেই সতেজতা বেশি ছড়ায়। সাধারণত তিন-চার বছর বয়স হলে সাকুলেন্টে ফুলের দেখা পাওয়া যায়। ঘৃতকুমারী ও পাথরকুচি আমাদের দেশের অতিপরিচিত সাকুলেন্ট। একেভেরিয়া, সেডাম, এনিভারিয়া, কালাঞ্চু, সেন্সিভারিয়া জাতের সাকুলেন্ট, যেগুলো কাছের কোনো নার্সারিতে খোঁজ করলেই খুব সহজেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

অ্যাডেনিয়াম
অ্যাডেনিয়ামকে বলা হয় মরুর গোলাপ বা ডেজার্ট রোজ। অন্য একটি বাংলা নাম ‘কিন্নরী’। বেশ শক্ত ধাঁচের গাছ এরা, মাটি বা বালু ছাড়াও শুধু পাথরকুচিতেও বেড়ে উঠতে সক্ষম। গাছটি ক্যাকটাস নয়, তবে একধরনের সাকুলেন্ট বা রসাল প্রকৃতির গাছ। তবে সাকুলেন্ট হিসেবে পরিচিতি না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে অ্যাডেনিয়াম আলাদা গড়নের গাছ ও হৃদয় হরণকারী মোহময় ফুলের কারণে পরিচিত হয়ে উঠেছে। গাছ দেখতে বনসাইয়ের মতো বলে অনেকেই ভালোবেসে একে প্রাকৃতিক বনসাই বলে অভিহিত করেন। প্রায় সারা বছরই কমবেশি ফুল ফোটে আর গোড়ার গড়ন গোদের মতো মোটা হওয়ার কারণে কম জায়গাতেও অন্য রকম রূপ ছড়িয়ে চলেছে অ্যাডেনিয়াম।

দরদাম
ঢাকার ধানমন্ডির গাছ বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন জানান, মান ও আকারভেদে ক্যাকটাস ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা, সাকুলেন্ট ১০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা ও অ্যাডেনিয়াম ৪০০ টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে দাম হয়ে থাকে। 

কোথায় পাবেন
এসব গাছের বিশাল সংগ্রহ আছে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডে ব্র্যাকের নার্সারি ব্র্যাক কাননে। দোয়েল চত্বরের কাছের নার্সারি, ধানমন্ডি ও আগারগাঁওয়ের নার্সারিগুলোও দারুণ পসরা বসিয়েছে এসব গাছের। এ ছাড়া আছে অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন দোকান।