করোনা: মনোবল থাকুক অটুট

পরিবারের সঙ্গে বসে টিভি দেখে ও গল্প করে সময় কাটানো যেতে পারে। মডেল: নাসিম আহমেদ, দিনা আলম, আনিলা ও আয়মান, ছবি: সুমন ইউসুফ
পরিবারের সঙ্গে বসে টিভি দেখে ও গল্প করে সময় কাটানো যেতে পারে। মডেল: নাসিম আহমেদ, দিনা আলম, আনিলা ও আয়মান, ছবি: সুমন ইউসুফ

‘আশা হোক ভয়ের প্রতিষেধক। 

সংহতি হোক দোষারোপের প্রতিষেধক। 

মানবিক আচরণ হোক সব হুমকির প্রতিষেধক।’

—তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস

মহাপরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন বৈশ্বিক মহামারি। যেকোনো বৈশ্বিক মহামারির প্রভাব কেবল সেই রোগের সংক্রমণ, চিকিৎসা আর প্রতিরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বৈশ্বিক মহামারি পরিবর্তন করে মানুষের মনোজগৎ। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনেও এর ঢেউ এসে পড়ে। এ সময় রোগ সংক্রমণ আর অসুস্থ হয়ে যাওয়ার ভয় থেকে মৃত্যুভীতি, অবসাদে ভোগা, উদ্বিগ্ন হওয়া, হঠাৎ রেগে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক থেকে মনের ওপর তৈরি হয় বাড়তি চাপ। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ব্যক্তিগত রোগপ্রতিরোধকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং সামষ্টিক প্রতিরোধের ধাপগুলোকেও দুর্বল করে দেবে। যেকোনো বিপদ মোকাবিলার সময় চাই ধৈর্য, দায়িত্বশীল আচরণ আর সাহস। 

ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটির মতে, বৈশ্বিক মহামারির সময়গুলোতে মানসিক চাপের কারণে যে প্রতিক্রিয়াগুলো বেশি দেখা যায়, সেগুলো হলো—

● সংক্রমণ আর মৃত্যুর ভয়।

● সংক্রমণের ভয়ে অন্যান্য সাধারণ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ না করে হাসপাতাল/ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো এড়িয়ে চলা।

● কাজ বা চাকরি হারানোর ভয়।

● সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তির (বিদেশফেরত বা তাঁদের সংস্পর্শে আসা অন্যরা) নিজের পরিবার বা সমাজ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ভয়।

● হতাশায় ভোগা—কিছুই করতে পারব না ভেবে ভেঙে পড়া।

● সংক্রমিত হলে চিকিৎসা না পাওয়ার শঙ্কা।

● গণমাধ্যমে সংক্রমণের বা মৃত্যুর খবর ইত্যাদি দেখে আরও আতঙ্কিত হওয়া। 

যাঁদের জন্য মনোসামাজিক সহায়তা প্রয়োজন

এই আতঙ্ক আর উদ্বেগের সময় প্রায় সবার জন্যই মনোসামাজিক সহায়তা প্রয়োজন। যে ছয় স্তরের মানুষের জন্য বিশেষ মনোসামাজিক সহায়তা প্রয়োজন তারা হচ্ছে—

● কোভিড-১৯ ভাইরাসের নিশ্চিত সংক্রমণ হয়েছে এমন ব্যক্তি এবং যাঁরা কোভিড-১৯–এর সংক্রমণে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাঁদের স্বজন। 

● কোভিড-১৯ ভাইরাস সংক্রমণ হতে পারে, এমন সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি (নিশ্চিত সংক্রমণ হয়েছে এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা পরিবারের সদস্য বা পরিজন বা ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে ফেরত আসা ব্যক্তি)।

● কোভিড-১৯ ভাইরাসের নিশ্চিত সংক্রমণ হয়েছে, লক্ষণ রয়েছে, এমন রোগীদের সরাসরি চিকিৎসা দিচ্ছেন অথবা এ ধরনের হাসপাতালে কাজ করছেন, এমন সামনের সারির চিকিৎসক, নার্স, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী—বিশেষ করে উপযুক্ত প্রতিরক্ষামূলক পোশাক ছাড়া যাঁরা চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে বাধ্য হচ্ছেন। 

● গণমাধ্যমকর্মী, যাঁরা এ বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করছেন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, যাঁরা এই ইস্যুতে দায়িত্ব পালন করছেন।

● নীতি নির্ধারকেরা—যাঁরা সংক্রমণ প্রতিরোধের নিয়মনীতি তৈরি করছেন ও বড় মাপে প্রতিরোধের উপায়গুলো নির্ধারণ করছেন।

● সব নাগরিক—যাঁরা প্রচারমাধ্যমে করোনা সংক্রমণের খবর হালনাগাদ পাচ্ছেন। 

এমন সময়ে মানসিক চাপে ভোগা কি অস্বাভাবিক?

উত্তর হচ্ছে, এই সময় মানসিক চাপে ভোগা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা সংক্রমণের এ সময়ে আতঙ্কিত হওয়া, উদ্বিগ্ন হওয়া, অবসাদে ভোগা, রেগে যাওয়াই স্বাভাবিক। এই সময় মানুষের চিন্তার পরিবর্তন হয়, আবেগের পরিবর্তন হয় আর সেই সঙ্গে আচরণের পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তন স্বাভাবিক, তবে তা সংক্রমণ প্রতিরোধে ক্ষতিকর। 

‘মানসিক চাপে ভুগবেন না, আতঙ্কিত হবেন না’, বলতে বলতে আমরা যেন মানুষকে ‘সেন্স অব ইনভালনারেবিলিটি’ পর্যায়, অর্থাৎ ‘আমার কিছু হবে না, আমি নিরাপদ’—এই অবস্থায় পৌঁছে না দিই। তাহলে সমূহ বিপদ। মানুষকে আশান্বিত করতে হবে, সেই সঙ্গে আসন্ন বিপদের স্বরূপও বোঝাতে হবে। 

তাহলে কেন মানসিক চাপ সামলাতে হবে

অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা স্ট্রেস ব্যক্তিগত রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা কমাবে। মানসিক চাপের সময় শরীরে হরমোন আর নিউরোট্রান্সসিটারের পরিবর্তনের কারণে ব্যক্তিগত রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত হয়। পাশাপাশি মানসিক চাপের সময় যথার্থ সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হতে পারেন কেউ কেউ। এই সময় হতবিহ্বল হয়ে যাওয়া, রেগে যাওয়া, নিজের মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারাসহ কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে সামগ্রিক সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায়গুলো দুর্বল হতে থাকে। নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয়ে যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম/ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিপ্রচার বা অপপ্রচারের ঘটনা ঘটতে পারে। 

এ ছাড়া সংক্রমণ বেশি মাত্রায় ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে হতাশা বেড়ে যাবে। ‘ফ্রাস্টেশন অ্যাগ্রেশন হাইপোথিসিস’ অনুযায়ী হতাশ মানুষ সহজে রেগে যাবে, আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। আন্তব্যক্তিক (ইন্টারপারসোনাল) সম্পর্ক খারাপ হতে থাকবে। সংক্রমণের ঝুঁকি আছে, এমন মানুষ বৈষম্যের শিকার হতে থাকবে। এসব কারণে মানসিক চাপ মোকাবিলা করা বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। এটি বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইন্টার এজেন্সি স্ট্যান্ডিং কমিটি, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিসেফের ওয়েবসাইটে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বিষয়ে একাধিক দিকনির্দেশনা প্রকাশ করেছে।

মানসিক চাপ সামলাতে কী করা উচিত

শুধু আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন: এই আতঙ্কময় সময়ে কেবল আস্থাভাজন ব্যক্তিদের পরামর্শ নিন। তাঁরা আপনাকে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে সহায়তা করবেন নানাভাবে। 

গুজবে কান দেবেন না: বিভিন্ন মাধ্যমে এখন উড়ছে অতিপ্রচার, অপপ্রচার এবং নানা রকম গুজব। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যা–ই পাবেন, তা যাচাই না করে বিশ্বাস করবেন না, আপনি নিজেও কোনো অসমর্থিত তথ্য ছড়িয়ে দেবেন না। গুজব আপনার আতঙ্ককে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে, সামগ্রিক প্রতিরোধের উপায়গুলো নষ্ট করে দেবে।

পরিবারের সঙ্গে পর্যাপ্ত সময় কাটান

সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন: রুটিন বিষয়গুলো, যেমন ঘুম, ঠিক সময়ে খাওয়া, বাড়িতে হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি বন্ধ করবেন না। সুষম আর নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ করুন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলুন, সময়মতো ঘুমান, হালকা ব্যায়াম করুন এবং অবশ্যই নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। ধূমপান, মদ্য পান বা নেশা এড়িয়ে চলুন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঘরোয়া খেলা খেলুন।

শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও সবার খোঁজ রাখুন: প্রায় আবদ্ধ শহরে বিচ্ছিন্নতার জন্য অসহায় লাগতে পারে। তাই বন্ধু আর স্বজনদের সঙ্গে ই-মেইল, টেলিফোন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন। পরস্পরের খোঁজ রাখুন। করোনা–সংক্রান্ত কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে কীভাবে, কার কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য সাহায্য গ্রহণ করবেন, তার একটি আগাম পরিকল্পনা তৈরি করে রাখুন।

বিশ্বাসযোগ্য তথ্যে ভরসা রাখুন: কেবল বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া সঠিক তথ্যের ওপর ভরসা রাখুন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সাহায্যকারী এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধিসংক্রান্ত তথ্যগুলো নিজে জানুন আর পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখুন। তথ্যের জন্য কেবল নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানসম্মত উৎস, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় বা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) ওয়েবসাইট, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা বিশেষজ্ঞের ওপর আস্থা রাখুন।

লক্ষ রাখুন ঘরের শিশুর দিকেও

শিশুদের প্রস্তুত করুন, অভিজ্ঞ করুন, সঠিক তথ্য দিন: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ইস্যুতে বড়দের মতো শিশুরাও মানসিক চাপে ভুগতে পারে। এ সময় তারা বাবা–মাকে একটু বেশি আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়, উৎকণ্ঠিত হয়, নিজেকে গুটিয়ে রাখে, অস্থির হয়, রাগ করে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, কেউবা হঠাৎ বিছানায় প্রস্রাব করা শুরু করে। মানসিক চাপজনিত এ ধরনের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের কথাগুলো মন দিয়ে শুনুন, একটু বেশি সময় দিন। শিশুকে নিজের মতো করে ঘরোয়া খেলা খেলতে দিন। করোনাভাইরাস সংক্রমণের সব পর্যায়ে শিশুকে তার মা-বাবা ও পরিবারের সঙ্গেই রাখুন এবং তাদের আলাদা করা থেকে বিরত রাখুন। হাসপাতালে ভর্তি, কোয়ারেন্টিন বা যেকোনো কারণে যদি আলাদা করতেই হয়, তবে টেলিফোন বা অন্য মাধ্যমের সাহায্যে যোগাযোগ রক্ষা করুন এবং শিশুদের নিয়মিত অভয় দিন।

চারপাশে যা হচ্ছে, সে বিষয়ে শিশুকে তার বয়স উপযোগী করে প্রকৃত তথ্য দিন। শিশু কীভাবে নিজেকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে পারবে, সেটা বুঝিয়ে বলুন। সংক্রমণ থেকে দূরে থাকার স্বাস্থ্যবিধিগুলো শিশুকেও শেখান। শিশু বা তার পরিবারের কেউ অসুস্থ বোধ করলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনীয়তা শিশুর সঙ্গে আলোচনা করে রাখুন, আগাম জানিয়ে রাখুন যে জরুরি প্রয়োজনে পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য কিছুদিনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে। সেই সঙ্গে জানান যে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই, সবার সুস্থতা আর নিরাপত্তার জন্য চিকিৎসকই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। 

কী করবেন, কী করবেন না

স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: কর্তৃপক্ষ নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। প্রয়োজনে কোথায় সাহায্য পেতে পারেন, সেই যোগাযোগের নম্বরগুলো আগে থেকেই হাতের কাছে রাখুন।

আপনার মুখের কথা: সবাই, বিশেষ করে নীতিনির্ধারক বা গণমাধ্যমে যাঁরা কথা বলেন বা লেখেন, তাঁদেরকে শব্দচয়নের বিষয়ে লক্ষ রাখতে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাগুলো। যেমন ‘কোভিড-১৯/ করোনা কেস’, ‘কোভিড-১৯/ করোনার শিকার’—এই শব্দগুলো বলা যাবে না, লেখা যাবে না। বলতে হবে ‘কোভিড-১৯ বা করোনাযুক্ত ব্যক্তি’। বলতে হবে ‘কোভিড–১৯–এর চিকিৎসাধীন ব্যক্তি’। কারও নামের সঙ্গে ‘করোনার শিকার’ শব্দটি বলা যাবে না। ‘অমুক থেকেই প্রথম এই রোগ ছড়ায়’—এভাবে কাউকে পরিচয়সহ চিহ্নিত করা যাবে না। রোগটিকে কোভিড-১৯ বা নভেল করোনাভাইরাসজনিত রোগ বলতে হবে, ‘চায়নিজ ফ্লু’ বা ‘এশিয়ান ভাইরাস’ বলা যাবে না।

প্রত্যেকের নির্ধারিত কাজটুকুই করতে হবে: প্রত্যেকের ওপর অর্পিত দায়িত্বটুকু পালন না করে অন্যের দায়িত্বগুলো নিতে যাবেন না। স্বাস্থ্যবিধি আগে নিজে মানুন, এরপর অন্যকে সেটি মানতে উৎসাহিত করুন। প্রকৃত তথ্য শেয়ার করুন, অসমর্থিত তথ্য ছড়িয়ে দেবেন না।

বৈষম্য নয়: কোভিড-১৯ রয়েছে এমন ব্যক্তি বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকুন।

অহেতুক কেনাকাটা নয়: আতঙ্কিত হয়ে অহেতুক কেনাকাটা করতে থাকলে তা নৈরাজ্যের সৃষ্টি করবে, যা একটি বৈশ্বিক মহামারি প্রতিরোধকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

মেজাজ সামলে চলুন: এই সময় অহেতুক বা তুচ্ছ কারণে রাগ বেড়ে যেতে পারে। নিজের মেজাজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখুন। প্রয়োজনে রাগ নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করুন। ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে রিলাক্সেশন থেরাপি বা ব্রিদিং এক্সারসাইজ (শ্বাসের ব্যায়াম) করতে পারেন, যা আপনার উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ও রাগ কমাতে সাহায্য করবে। 

প্রয়োজনে অনলাইনে/ টেলিফোনে মনোচিকিৎসকের সাহায্য গ্রহণ করুন।

সব সময় ‘করোনা’ ‘করোনা’ করবেন না

দুশ্চিন্তা আর অস্থিরতা যাতে না বাড়ে, সে জন্য আপনি নিজে বা পরিবারের সদস্যরা সর্বক্ষণ প্রচারমাধ্যমে/ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করোনা সংক্রমণ আর এর পরিণতি নিয়ে তথ্য, সংবাদ ও ভিডিও দেখবেন না। সব সময় এটি নিয়ে কথা বলবেন না। এতে নিজের ওপর মানসিক চাপ বাড়বে, পরিবারের সদস্যদের ওপরও মানসিক চাপ বাড়বে। করোনা নিয়ে সঠিক তথ্য জানার পাশাপাশি পরিবারের সবাই মিলে অন্যান্য অনুষ্ঠানও উপভোগ করুন।

আস্থা রাখুন নিজের ওপর: অতীতে বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার দক্ষতা আর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান। আত্মপ্রত্যয়ী থাকুন। এতে আপনার মানসিক চাপ অনেকাংশে লাঘব হবে।

সময়টা কাজে লাগান: কর্তৃপক্ষের নির্দেশে যদি ঘরে থাকতে হয়, তবে হতাশ হয়ে আঙুল কামড়াবেন না। ঘরে বসে বই পড়ুন, মুভি দেখুন, ডায়েরি লিখুন। আপনার যদি কোনো সৃষ্টিশীল গুণ থাকে, তবে বেশি বেশি সেগুলোর চর্চা করুন।

আহমেদ হেলাল
সহযোগী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।