করোনা-কবলিত দিনে লেবুপানি

লেবুপানি এই সময়ে শরীরের জন্য উপকারী। মডেল: খুশবু, ছবি: অধুনা
লেবুপানি এই সময়ে শরীরের জন্য উপকারী। মডেল: খুশবু, ছবি: অধুনা

ঝাঁজালো রোদের প্রখর চৈত্রের মাঝামাঝি চলছে। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘প্রহরশেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস/ তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ’ তা সর্বনাশের কথা থাক। করোনা নিয়ে এমনিতেই জেরবার দশা, তার ওপর এই সঙ্গনিরোধ অবস্থায় হৃদয়ঘটিত ব্যাপারস্যাপারে ফেঁসে না যাওয়াই উত্তম। তবে এই ঝাঁজালো দিনে গলা শুকিয়ে কাঠ হতেই পারে কারও কারও। সে ক্ষেত্রে উদ্বেগের কিছু নেই। তৃষ্ণা নিবারণকারী হিসেবে বিশুদ্ধ পানির জুড়ি নেই। এরা সঙ্গে লেবুর রস যোগ করলে লেবুপানি তৃষ্ণা নিবারণের পাশাপাশি শরীরে এমন বেশ কিছু উপকার সাধন করবে, যার খোঁজ অনেকেরই অজানা।

লেবুর কদর আসলে তার রসে। এই রসের পাঁচ শতাংশ সাইট্রিক অ্যাসিড। লেবুতে ভিটামিন সি বিপুল পরিমাণ। মাঝারি আকারের একটি লেবুতে এর পরিমাণ প্রায় ৪০ মিলিগ্রাম, যা একজন মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন সি–এর চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট। অনেকভাবেই এই রস পান করা যায়—সালাদে, শরবতে।

ঢাকার বারডেম হাসপাতালের পুষ্টি বিভাগের প্রধান পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বিস্তারিত জানালেন লেবুপানি বা লেবুর শরবতের গুণপনার কথা। তিনি প্রথমেই বললেন, এখন সর্দিকাশি, করোনা এসব নিয়ে জনমনে বেশ উদ্বেগ–শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। লেবুপানি সর্দিকাশিতে উপকারী, করোনার ক্ষেত্রেও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

গরমের সময় অতিরিক্ত ঘামে আমাদের শরীর থেকে অনেক পানি বের হয়ে যায়। পানির ঘাটতি হওয়ায় তৃষ্ণাও বাড়ে। অতিরিক্ত পানি বের হয়ে গেলে রক্তের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। শামছুন্নাহার নাহিদ বললেন, লেবুপানি প্রথমত শরীরে পানি ও ইলেকট্রোলাইটের সমতা রক্ষা করে। দ্বিতীয়ত, গরমের সময় প্রচুর ঘাম হওয়ায় শরীরে অনেক রকম ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস জন্মে। লেবুপানি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, এতে শরীর স্বাভাবিক নিয়মেই এসব অণুজীব ধ্বংস করে ফেলে। রোগে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কাও কমে। এ কারণেই লেবুপানি করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য উপকারী হিসেবে কাজ করবে। লেবুপানি যকৃতের সংক্রমণও প্রতিরোধ করে, পরিপাকের ক্ষমতা বাড়ায়।

লেবুপানি রক্ত পরিশোধনেও ভালো কাজ করে। রক্তের লোহিতকণিকার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন। লেবুপানি হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা তিন গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। আর শ্বেতকণিকার পরিমাণও বাড়ায়। তবে যাঁদের চড়া মাত্রার অ্যাসিডিটি বা আলসার আছে, কিংবা কিডনিতে সমস্যা, তাঁরা পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া আগবাড়িয়ে লেবুপানি বা শরবত পান করতে যাবেন না।