হবু মায়ের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

খাদ্যাভাস হবু মায়ের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মডেল এলভিনের ছবিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা। ছবি: খালেদ সরকার
খাদ্যাভাস হবু মায়ের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। মডেল এলভিনের ছবিটি গত ফেব্রুয়ারি মাসে তোলা। ছবি: খালেদ সরকার

পরিস্থিতি মনের কথা শোনার অনুকূল নয়। বিশ্ব আক্রান্ত মহামারিতে। নিরাপদ কেবল আপন বসত। এই লড়াইয়ে ঝুঁকিতে আছেন যাঁরা, তাঁদের একটা অংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী।

ঢাকার এভার কেয়ার হাসপাতালের (সাবেক অ্যাপোলো হাসপাতাল) প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী জানালেন, গর্ভাবস্থায় জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে। এ সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে খাবারদাবারের দিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আমিষ, জিংক, সেলেনিয়াম, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই এবং গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ নিশ্চিত করুন প্রতিদিন। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, এমন কোনো খাবার নেই, যা সরাসরি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করবে। তবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে পারে এমন খাবারদাবার আপনার সুস্থতায় ভূমিকা রাখবে।

ফলমূল-শাকসবজি
রঙিন শাকসবজি খেতে হবে অবশ্যই। প্রকৃতির এসব রঙের মধ্যেই পাবেন জীবনকে রঙিন রাখার উপাদান—ভিটামিন এ। বেগুনের বেগুনি রং, গাজরের কমলা রং, টমেটোর লাল বা গাঢ় সবুজ রঙের শাক দেখতে যেমন আলাদা, পুষ্টিগুণেরও তেমনি আছে ভেদাভেদ। মিশ্র সবজি রাখতে পারেন প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায়। 

শাকের মধ্যে থাকা আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচাবে। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে খাবারের রুচি কমতে পারে। রুচি কমে গেলে প্রয়োজনীয় খাবার ঠিকভাবে খেতে পারবেন না। গর্ভাবস্থায় এমনিতেও অনেকের খাবারে অনীহা হতে দেখা যায়, কেউ আবার পেটের অস্বস্তিতে ভুগতে পারেন। এ রকম ক্ষেত্রে একই উপাদান দিয়ে তৈরি খাবার বিভিন্নভাবে তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। যেমন গাজর বা চালকুমড়া দিয়ে হালুয়া কিংবা কোনো একটা স্যুপ। 

কাঁচা সালাদের পরিবর্তে ভালোভাবে রান্না করা সবজি খেতে হবে। শাকসবজির সঙ্গে সামান্য তেল অবশ্যই দিতে হবে রান্নার সময়। সঙ্গে হালকা মসলা থাকল। আর সেদ্ধ সবজি খেতে চাইলে এর সঙ্গে তেলে রান্না করা অন্য খাবার (যেমন তেলে রান্না করা মুরগির মাংস বা মাছ) খেতে হবে। তেল ছাড়া শাকসবজির সব পুষ্টি উপাদান শরীরে সঠিকভাবে শোষণ হয় না। আর ফলমূল তো খাবেনই।

ফলমূল অবশ্যই ভালোমতো ধুয়ে খাবেন। টকজাতীয় ফলে পাবেন ভিটামিন সি। ভিটামিন সি পেতে শুধু লেবু নয়, বরং একেক দিন একেক ধরনের মৌসুমি টক ফল খেতে পারেন।

আমিষ ও অন্যান্য
মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম ও ডালজাতীয় খাবারে পাবেন আমিষ। মাছ, লাল মাংস, দুধ থেকেই মিলবে জিংক। বাদাম, ছোলা, শিমজাতীয় খাবার থেকে এগুলোর তুলনায় কিছুটা কম মাত্রায় জিংক পাওয়া যায়। দুধ আর কলিজায় পাবেন সেলেনিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ। সবুজ শাক, ভেজিটেবল অয়েল, ডিম, মাংস, দুধ, বাদাম থেকে পাবেন ভিটামিন ই। 

আমিষজাতীয় খাবার আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি গর্ভের শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। হয়তো আগে এক বেলায় খেতেন দুই টুকরা মাছ বা মাংস, এখন তার বদলে খেতে হবে তিন টুকরা। এক বেলা মাছ, অন্য বেলা মাংস, এভাবেও খেতে পারেন। কোনো বেলা মাছ বা মাংস হয়তো তেমন খাওয়া হলো না, সে ক্ষেত্রে দুধ, ডিম, ডালের পরিমাণ একটু বাড়িয়ে দিতে হবে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার না খাওয়াই ভালো। এর পরিবর্তে হোল গ্রেইন–জাতীয় খাবার বেছে নিন। প্রতিদিন খানিকটা সময় রোদে থাকুন (ঘরের যে স্থানে রোদ পড়ে)। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা ভালো, ঘরেই হাঁটুন। পর্যাপ্ত ঘুমান।