ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ৮ পরামর্শ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ডায়াবেটিস রোগীদের জটিলতার ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি। তাই তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। করোনা ঠেকাতে এ সময় সবাইকে ঘরে থাকতে হচ্ছে। এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীরা মূলত আট ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। এগুলো হলো:

 অতিরিক্ত খাওয়া ও খাওয়ার সময়সূচি ঠিক না থাকা

 খাদ্যতালিকায় অস্বাভাবিক পরিবর্তন

 হাঁটা বা ব্যায়ামে সীমাবদ্ধতা

 ওষুধ বা ইনসুলিনের সময়সূচি ঠিক রাখতে না পারা

 নিদ্রাহীনতা

 মানসিক চাপ, উদ্বেগ

 চিকিৎসকের কাছে রুটিন ফলোআপ করাতে না পারা

 কোনো জরুরি সমস্যায় স্বাস্থ্য সহায়তা পেতে সমস্যা

রক্তে শর্করার বিপাকক্রিয়ার জটিলতার কারণে ডায়াবেটিসের রোগীদের এমনিতেই রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম থাকে। যেকোনো সংক্রমণই তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া তাঁদের অনেকেরই ডায়াবেটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা ইত্যাদিও আছে। কাজেই ঘরে থাকার এ সময় রুটিনে ব্যত্যয় ঘটায় রক্তে শর্করার ওঠা-নামা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে আটটি বিষয় মেনে চললে জটিলতা এড়ানো যায়।  

ডায়াবেটিস রোগীরা এ সময় পারতপক্ষে বাইরে যাবেন না। ঘরে-বাইরে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলবেন। বারবার হাত ধোবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। এমন ঘরে অবস্থান করুন, যেখানে যথেষ্ট আলো-বাতাসের প্রবাহ রয়েছে।

খাবার রুটিনে ব্যত্যয় ঘটতে দেবেন না। আগে যে সময়ে যে খাবারটি খেতেন, এখনো সেটাই করতে চেষ্টা করুন। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খান।

হাঁটা বা ব্যায়ামের জন্য পার্কে, রাস্তায়, জিমে যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতে হাঁটুন। জায়গা না থাকলে ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে জগিং করুন। 

আগের রুটিন এখনো মেনে চলুন। যেমন আগে যদি বিকেল ৫টায় ব্যায়াম, রাত ১০টায় ঘুম আর সকাল ৮টায় ওঠার অভ্যাস থেকে থাকে, তাহলে এখনো তা অব্যাহত রাখুন। তা না হলে রক্তে শর্করা ওঠানামা করবে। 

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কিছুতেই ওষুধ পরিবর্তন বা বন্ধ করবেন না। অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হয়ে দোকানের সংশ্লিষ্ট সব ওষুধ, ইনসুলিন, গ্লুকোমিটারের স্ট্রিপ, নিডল ইত্যাদি কিনে ফেলারও দরকার নেই। বাজারে এসবের সরবরাহ আছে এবং থাকবে। তবে কয়েক দিনের বা কয়েক সপ্তাহের ওষুধ কিনে রাখতে পারেন।

বাড়িতে সপ্তাহে দু-তিনবার বিভিন্ন সময় রক্তের শর্করার মাত্রা মাপুন। একটা খাতায় লিখে রাখুন চার্ট করে। সুগার বেড়ে বা কমে গেলে চিকিৎসককে ফোন করে পরামর্শ নিন।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি এবং ইউরোপের অ্যাসোসিয়েশন অব ডায়াবেটিস স্টাডি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে, মহামারি চলাকালে আপনার রুটিন ফলোআপে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। জরুরি অসুস্থতা ছাড়া হাসপাতাল, চিকিৎসকের চেম্বার কিংবা ক্লিনিকে যাবেন না। প্রয়োজনে টেলিমেডিসিনের সাহায্য নিন। খুব দরকার হলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখা করুন।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বাতায়ন, বঙ্গবন্ধু     শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতাল টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছে। নম্বরগুলো এখনই সংগ্রহ করে রাখুন।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ