তাঁর আগের গার্লফ্রেন্ড তাঁকে ব্ল্যাকমেইল করছে

মেহতাব খানম
মেহতাব খানম
পাঠকের কাছ থেকে সন্তান পালন, মনোজগৎ ও ব্যক্তিজীবনের সমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে নানা রকমের প্রশ্ন এসেছে। সেগুলো থেকে নির্বাচিত একটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম

প্রশ্ন: আমার বয়স ১৯ বছর। এক ছেলের সঙ্গে আমার তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক। দুজনের পরিবারের সবাই রাজি হওয়া সত্ত্বেও বিয়ের কথা তুললে সে অমত করে। পরে জানতে পারি, সে অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। ইদানীং সে আমার সঙ্গে খুবই খারাপ ব্যবহার করছে, যা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। আমি মানসিকভাবে এতটাই ভেঙে পড়েছি যে পড়াশোনায় মন দিতে পারছি না। এ অবস্থায় আমি কী করব?

উত্তর: অল্প বয়সে অনেক দিন একটি সম্পর্ক থাকার জন্য ছেলেটির প্রতি তোমার আবেগীয় নির্ভরশীলতা তৈরি হয়েছে। তুমি তাকে সম্পূর্ণ বিশ্বাসও হয়তো করেছ। ছেলেটি যে দুই পরিবারের পূর্ণ সম্মতি থাকা সত্ত্বেও বিয়েতে অমত করছে, তাতে তুমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বোধ করছ। এরপর যখন জানতে পারলে, সে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে, তখন তোমার নিজেকে প্রতারিত মনে হচ্ছে। ছেলেটি সততার সঙ্গে নিজেই তোমাকে অন্য সম্পর্কটির কথাটি জানাতে পারত। সে তোমার সঙ্গে কেন খারাপ ব্যবহার করছে জানি না।

তুমি কি তার কাছে প্রতারণার কারণটি বারবার জানতে চাইছ? তোমার মধ্যে কী ঘাটতি আছে, তা ভাবতে থাকো বলে, তাকেও একই প্রশ্ন করছ? অন্য মেয়েটির মধ্যে এমন কী পেল বা কত দূর পর্যন্ত তাদের সম্পর্কটি গড়িয়েছে, তার বর্ণনা কি শুনতে চাইছ? এ ব্যাপারগুলো থেকে অন্য পক্ষও বিরক্ত হলে অনেক সময় দুর্ব্যবহার করে ফেলে।

তুমি চেষ্টা করো, ছেলেটির সঙ্গে কথা বলা থেকে নিজেকে যথাসম্ভব বিরত রাখতে। ছেলেটি যে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে, সেটি দ্বারা কিন্তু প্রমাণিত হয় না যে তুমি তার যোগ্য নও বা তোমার মধ্যে ভালো গুণাবলি নেই। তোমার বয়স এখনো অনেক কম। নিজেকে আরও উচ্চশিক্ষিত করে তোলার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও। এই বিশেষ সম্পর্ক এবং এর পরিণতি থেকে তুমি নিজের ও ছেলেটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে যা শিখলে, সেটিকে পুঁজি করে ভবিষ্যতের পথচলাকে নিশ্চয়ই আরও গতিময় করতে পারবে। নিজের প্রতি শ্রদ্ধা, আস্থা আর ভালোবাসা কীভাবে বাড়ানো যায়, সে উপায়গুলো খুঁজে তা চর্চা করো। অর্থাৎ তোমার ভেতর যে সুন্দর মানুষটি রয়েছে, তাকে প্রতিদিন অনুভব করো। সারা দিনের রুটিনে তোমার যে কাজগুলো করতে ভালো লাগে, তা অবশ্যই রাখবে। এ ছাড়া বিশ্বস্ত কারও সঙ্গে শেয়ার করা, শরীরচর্চা, ধ্যান ও যোগব্যায়াম করে নিজের সম্পূর্ণ যত্ন নিশ্চিত করো।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৩ বছর। কিছুদিন আগে আমার একটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। তার আগে অনেক বছর ধরে আমরা বন্ধু ছিলাম। আমার আগে তার একটি মেয়ের সঙ্গে ৫ বছরের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক ভাঙার কিছুদিন পর আমার সঙ্গে সম্পর্ক হয়। কিন্তু এখন তার আগের গার্লফ্রেন্ড তাকে বিভিন্নভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছে, আত্মহত্যার ভয়ও দেখিয়েছে। উল্টাপাল্টা কিছু যেন করে না ফেলে, এ জন্য আমার বয়ফ্রেন্ড তার মেসেজের উত্তর দেয় এখনো। আমাকে সব মেসেজ দেখিয়েছে। সেখানে আপত্তিকর কিছু নেই, শুধু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করছে যেন চরম কোনো কিছু করে না বসে। কিন্তু ও আমার সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায় অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, এটা আমি কোনোভাবেই মানতে পারছি না। এখন এটা কি আমার মেনে নেওয়া উচিত?

উত্তর: এই বন্ধুর সঙ্গে বর্তমানে তোমার রোমান্টিক সম্পর্ক থাকার পরও ছেলেটি যে সারাক্ষণ আগের সম্পর্কের মেয়েটির সঙ্গে মেসেজ বিনিময় করছে, তাতে তোমার কষ্ট হওয়াই স্বাভাবিক। ছেলেটির আগের সম্পর্কটি মোটামুটি দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিল। তাদের মধ্যে কি প্রায়ই মনোমালিন্য হতো? তুমি তো তার ভালো বন্ধু ছিলে, তোমার কাছে কি ছেলেটি তাদের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে কখনো আলোচনা করেছে?

সম্পর্কটি কীভাবে ভেঙে গিয়েছে, তুমি নিশ্চয়ই সেটি জানো। তোমার কী মনে হয়, ছেলেটি এখন সেটি নিয়ে কোনো অপরাধবোধে ভুগছে বা এর জন্য নিজেকে দায়ী করছে? ছেলেটির পূর্ব ইতিহাস তুমি জানো, এরপরও সেই মেয়েটি কীভাবে ওকে ব্ল্যাকমেইল করছে, তা বুঝতে পারলাম না। যদি ছেলেটি ভয় বা অপরাধবোধের কারণে মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখে, তাহলে এর ফলাফল খুব ভালো হওয়ার কথা নয়, এতে করে তার আগের প্রেমিকার মনে আবার নতুন করে ছেলেটিকে ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশা তৈরি হতে পারে।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত হলে সেবাদানকারীরা নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রেখে, তাদের মনের যত্নের প্রতি মনোযোগী হয়ে মানুষের আত্মহত্যার প্রবণতা রোধের জন্য কাজ করেন। এই ছেলেটির পক্ষে তো মেয়েটিকে এই অবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনা একেবারেই সম্ভব নয়। উপরন্তু সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে তোমাদের দুজনের সম্পর্কটির প্রতি মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হবে। ওকে তুমি বলো, তার আগের প্রেমিকাকে কাউন্সেলিং সেবা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করতে। মেয়েটির জীবন রক্ষার দায়িত্ব কিন্তু ওর ওপর বর্তায় না। প্রত্যেকটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দায়িত্ব হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার প্রদত্ত জীবনকে একটি অমূল্য সম্পদ মনে করে সেটির প্রতি সম্পূর্ণ যত্নশীল হওয়া। কাজেই মেয়েটির শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে সে যেন আন্তরিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে নিজের দায়িত্বটি পালন করে। এটি হয়তো তোমাদের সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।