ভূপর্যটক রবীন্দ্রনাথ ও আমার রবি পরিক্রমা

মেঘালয়ের শিলংয়ে রবিঠাকুরের বাড়ি, ২০১৪। ছবি: লেখক
মেঘালয়ের শিলংয়ে রবিঠাকুরের বাড়ি, ২০১৪। ছবি: লেখক

ঘরকুনো বাঙালি বলে যে অপবাদ বা বিশেষণ আমাদের কাঁধে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে, তার কারণ আমাদের ঘরোয়া জীবনযাপন নাকি অ্যাডভেঞ্চার বিমুখতা, সে হিসাব গবেষকেরা এখনো কষেই যাচ্ছেন। তবে বাঙালি যে ঘরকুনো নয়, সেই মতের পক্ষে ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস, বিমল মুখোপাধ্যায়, বিমল দে, কর্নেল সুরেশ বিশ্বাস প্রমুখের কথা বলা হলেও আমাদের চোখের সামনে দিবস রজনী যে বিশ্ব পথিক জ্বলজ্বল করতে থাকেন, অন্য নানা শত বিশেষণে খচিত যাকে আর আলাদাভাবে ভ্রমণবিদ হিসেবে দেখানো হয় না, তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। এবং আমার জানামতে তাঁর মতো ভ্রমণপিপাসু বাঙালি ইতিহাসে আর দুটি নেই। কিন্তু কেন?

যে বিপুল ভ্রমণ তিনি দেশে–বিদেশে করে গেছেন আজীবন, তা সামান্য তলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, আজীবন অন্য সব কাজের মধ্যেও নতুন জায়গায় ভ্রমণ কী পরিমাণে তাঁর মনন দখল করে রেখেছিল। সর্বকালের সেরা বাঙালি পর্যটক মনে হয় রবীন্দ্রনাথ নামের ওই চিরতরুণ মানুষটিই, যিনি ঘোড়ার গাড়ি আর জাহাজে চেপে ঘুরেছেন জাপান থেকে মেক্সিকো, ইরান থেকে আমেরিকা, রাশিয়া থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

কিউবার হাভানায় রবি ভাস্কর্য, ২০১১। ছবি: লেখক
কিউবার হাভানায় রবি ভাস্কর্য, ২০১১। ছবি: লেখক

তাঁর বিপুল ভ্রমণের মধ্যে একটি ঘটনা আমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে। ১৯৩২ সালের এপ্রিলে সত্তর বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ ইরান গিয়েছিলেন পারস্যরাজের আমন্ত্রণে, রাজকীয় অতিথি হিসেবে। কিন্তু শুধু অতিথি হিসেবে মহাখাতিরে নিয়ে গেলেও ওই বয়সে মানুষ, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষ, নোবেলজয়ী কবি ও দার্শনিক হিসেবে যার জগতজোড়া খ্যাতি, যিনি পাঁচটি মহাদেশের ৩০টির বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন, তিনি কেন সেই বৃদ্ধ বয়সে কিছুটা ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়েই জীবনে প্রথমবারের মতো বিমানে চেপে কলকাতা থেকে এলাহাবাদ হয়ে বোম্বে বন্দর থেকে ফের জাহাজে চেপে দূরের দেশ ইরানে যাবেন? আবার ইরানের তেহরানেই শুধু নয়, বেশ দূরের সিরাজ নগরীতে গিয়ে কবি হাফিজ ও শেখ সাদির সমাধিতে সময় কাটাবেন? বেদুইনের তাঁবুতে দুম্বার মাংস খাবেন, এক ফাঁকে সীমান্ত অতিক্রম করে ইরাকেও একটু ঘুরে আসবেন? উত্তর একটাই, তিনি জন্মভবঘুরে, অন্তরে প্রবলভাবেই ভ্রমণপিপাসু! অজানাকে জানার প্রবল ইচ্ছা যেমন সারা জীবন তাঁকে তাড়া করে গেছে, উৎসাহ জুগিয়েছে জীবনপথে চলার জন্য, তেমনই অদেখা কিন্তু জানা জায়গাকে দেখার আগ্রহও তাঁর ছিল সব সময়। শত কাজের ভিড়েও তাই তিনি চেষ্টা করেছেন সব কাজ সুচারুভাবে শেষ করে ভ্রমণ করতে। সেই ১৯৩০ সালের কথা বাদই দিলাম; সে থেকে প্রায় শতবর্ষ পরে এখনো কজন বাঙালি পাঁচটি মহাদেশ ঘুরে এসেছেন? এখানেও পর্যটক রবি ঠাকুর স্বমহিমায় সমুজ্জ্বল।

এখন আমার ব্যক্তিগত এক শখের কথা বলি। তবে তা যেহেতু রবীন্দ্রনাথ–সম্পর্কিত, কাজেই নিছক ব্যক্তিগত বাতিক না থেকে সেটি বাঙালির শখের মধ্যে পড়ে গেছে। সে শখ হলো, দেশে–বিদেশে যেখানেই যাই না কেন, সব সময়ই খুঁজে বের করি যে রবি ঠাকুর সেখানে গিয়েছিলেন কি না অথবা সেখানে তাঁর স্মৃতিবিজড়িত কিছু আছে কি না; তিনি গেলে কোথায় ছিলেন এবং সেই জায়গা এখন কোন অবস্থায় আছে ইত্যাদির খবর নেওয়ার চেষ্টা করা। এবং মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখি তিনি প্রায় সবখানেই আমাদের অনেকের আগে ভ্রমণে গিয়েছেন। কেবল পদচিহ্ন এঁকে আর ছবি তুলেই চলে আসেননি, বোঝার চেষ্টা করেছেন স্থানীয় জনজীবন।

ইংল্যান্ডে শেকসপিয়ারের বাড়ির বাগানে রবি ভাস্কর্য, ২০১৯। ছবি: লেখক
ইংল্যান্ডে শেকসপিয়ারের বাড়ির বাগানে রবি ভাস্কর্য, ২০১৯। ছবি: লেখক

দেশের বাইরে আমার প্রথম রবি যাত্রা শুরু হয়েছিল সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমের নোবেল পুরস্কার জাদুঘরে। একরাশ আনন্দ নিয়ে দেখি সব জাদুঘরে হাজারো নোবেলজয়ী ব্যক্তির অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন থাকলেও সেখানে আবক্ষ ভাস্কর্য মাত্র একজনেরই আছে, তিনি আমাদের রবি ঠাকুর! ব্যস, মাথায় গেঁথে গেল সারা গ্রহে ছড়িয়ে থাকা রবি চিহ্ন খোঁজার চিন্তা।

লন্ডনে রবীন্দ্রনাথ ১৭ বছর বয়সে যে এলাকায় থাকতেন, যে উদ্যানে সদ্য কৈশোরোত্তীর্ণ রবি তাঁর ভাইপো-ভাতিজিকে নিয়ে খেলতে যেতেন, সেখানে তাঁর একটিক ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের অপূর্ব স্মৃতিকথা ‘পিতৃস্মৃতি’ পড়ে জানতে পারি, লন্ডনের চ্যারিংক্রস মেট্রো স্টেশনে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবারে মতো পাতাল রেলে চাপেন এবং বিজ্ঞানের জয়যাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই থেকে লন্ডন ভ্রমণে গেলে কোনো কাজ ছাড়াই চ্যারিংক্রস পাতালরেল স্টেশনে একবার হলেও গিয়ে তাঁকে বিস্ময়ের সঙ্গে স্মরণ করি।

স্টার্টফোর্ড অন অ্যাভনে শেকসপিয়ারের বাড়ির বাগানেও রবি ঠাকুরের বিশাল ভাস্কর্য আছে এবং তিনি যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে এক বিশাল সেতুবন্ধ তৈরি করেছিলেন, সেই লেখা দেখা বাঙালি হিসেবে গর্বিত হই বারবার।

হাঙ্গেরির বালাতনে রবি ভাস্কর্য ও রবীন্দ্রনাথের লাগানো লাইম গাছের সামনে লেখক, ২০১৩। ছবি: লেখক
হাঙ্গেরির বালাতনে রবি ভাস্কর্য ও রবীন্দ্রনাথের লাগানো লাইম গাছের সামনে লেখক, ২০১৩। ছবি: লেখক

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসের শহরতলিতে, যেখানে রবি ঠাকুর প্রায় দুই মাস ছিলেন প্রিয় বন্ধু ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর (যাঁর বাংলা নাম দিয়েছিলেন বিজয়া) সান্নিধ্যে। উল্লেখ করে রাখি, রবীন্দ্রনাথ সমুদ্রপথে পেরু যাওয়ার জন্য রওনা দিলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য। পথিমধ্যে আর্জেন্টিনায় থামতে বাধ্য হন। ভিক্তোরিয়া ওকাম্পোর বাসভবন বিখ্যাত ভিয়া ওকাম্পো (Villa Ocampo) আজ ইউনেসকোর অন্তর্গত জাদুঘর, শহরকেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের সান ইসিদ্রো মহল্লায় অবস্থিত।

ভিয়া ওকাম্পোর মূল ভবন আর বিখ্যাত বাগানটি দেখার সাধ ছিল। সেখানে ঢোকার মুখে বাংলাদেশ থেকে এসেছি বলায় প্রহরী বলেছিলেন, ‘তোমার দেশের সেই কবি কিন্তু বাগানেই খুব সময় কাটাতেন!’ এই বাগানেই হয়তো মেতে উঠতেন তাঁরা নবসৃষ্টির আনন্দে, সাহিত্যের ঝংকারের উন্মাদনায়। বিশাল সব মহিরুহ, এখানেই আমাদের রবি প্রত্যহ তাঁর বিজয়াকে নিয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন হতেন, লিখতেন কবিতা। সেদিন ভেবে পুলকিত হয়েছিলাম যে এই একই আকাশের নিচে রবির প্রিয় নদী পদ্মা পাড়েরই একজন আজ দাঁড়িয়ে আছে!

জেনেছিলাম তাঁর নামে একটা রাস্তাও আছে ওই দূর দেশে। জাদুঘর দেখে বেরিয়ে আশপাশে তিন-চারজনকে জিজ্ঞাসা করেও সুবিধা হলো না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা ট্যাগোর শুনলেই তাঁরা বলেন, এত বড় নামের কোনো রাস্তা নেই! ততক্ষণে জেদ চেপেছে ভীষণ— আলবৎ রাস্তা আছে। এই অঞ্চলেই আছে। সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সব গলি-উপগলি-তস্যগলি খুঁজে ঠিকই বের করে ফেলব। এই প্রতিজ্ঞা অবশ্য সেবার মিনিট তিনেকের বেশি টিকল না। একটা রাস্তার নাম দেখলাম আর. টগের! বোঝা হয়ে গেল এটির সন্ধানেই আমরা ব্যস্ত। রবীন্দ্রনাথকে সংক্ষেপে আর (R) বানিয়ে রেখেছে, তাতেই যত বিপত্তি! শেষ পর্যন্ত দেখা পেলাম সেই বাড়ির, যেখানে থাকতেন আমার মাতৃভাষার সবচেয়ে বড় শিল্পী। এককালের অজানা, অচেনা দেশ আজও সযত্নে বুকে রেখে লালন করে চলেছে তাঁর একদা উপস্থিতির চিহ্ন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বড় দ্বীপদেশ কিউবা ভ্রমণের সময় রাজধানী হাভানায় এক কমলা রঙের উজ্জ্বল সকালে অভিভূত হয়ে আবিষ্কার করেছিলাম, ক্যারিবিয়ান সাগরের তীরে এক সবুজ উদ্যানে চিরপরিচিত রবীন্দ্রনাথের ভাস্কর্য! না তিনি কিউবা যাননি। কিন্তু সেখানকার মানুষ ভালোবেসে তাঁর ভাস্কর্যকে ঠাঁই দিয়েছেন তাঁদের উদ্যানে এবং তাঁর কবিতাকে মনে!

আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে রবীন্দ্রনাথের নামে রাস্তার নামফলক। ছবি: লেখক
আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস এইরেসে রবীন্দ্রনাথের নামে রাস্তার নামফলক। ছবি: লেখক

এভাবেই গত সেপ্টেম্বরে মধ্য এশিয়ার দেশ তাজিকিস্তানের রাজধানী দুশানবেতে দেখা মিলে ছিল আরেক রবি ভাস্কর্যের! রবীন্দ্রনাথের ওপরে অসাধারণ ফ্রেস্কো দেখেছি ইতালিতে।

‘শেষের কবিতা’ যে শহরের পটভূমিকায় লেখা, সেই মেঘালয়ের শিলং শহরে তাঁর একাধিক জাদুঘর বাড়ি দেখা হয়েছে, কিংবা পাহাড়ি শহর কালিম্পংয়ে বা মংপুতে! বাংলাদেশে শিলাইদহ, পতিসর, শাহজাদপুর রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত এ তিন কুঠিবাড়িতেই হয় নিত্য যাওয়া–আসা এবং যাওয়া হয়েছে তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনার দক্ষিণদিহিতে। জোড়াসাঁকো বা শান্তিনিকেতনের কথা আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। কিন্তু কোনখানে সবচেয়ে বেশি সম্মানের সঙ্গে সংরক্ষিত রবীন্দ্র স্মৃতি?

আমার সামান্য ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বলে, মধ্য ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে। ১৯২৬ সালে এক কবিতা উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্য বিশ্বকবি হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে অবস্থান করছিলেন। সেই সময় অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁকে ‘হাঙ্গেরির সাগর’ বলে বিখ্যাত বালাতন হ্রদের তীরে অবস্থিত এক সানাটেরিয়ামে আনা হয়েছিল দুই সপ্তাহের জন্য।

বছর কয়েক আগে বালাতন স্টেশনে নেমেই ম্যাপ দেখে পদব্রজে যাওয়া হয়েছিল হ্রদটির তীরে এবং তার সঙ্গে অবস্থিত দুপাশে সবুজ গাছের সারি দিয়ে ঘেরা এক অপূর্ব রাস্তায়। পুরো হাঙ্গেরিতে এমন রাস্তা নাকি আর দুটি নেই! তাই অনেকে একে হাঙ্গেরির রোমান্টিকতম রাস্তাও বলেন, যার নাম ঠাকুর রোড! রবি ঠাকুর হাসপাতালে থাকাকালীন এই রাস্তা ধরে রোজ প্রত্যুষে হাঁটাহাঁটি করতেন। তাঁর সেই স্মৃতি অমর করে রাখার জন্য অনেক দশক আগে এলাকাবাসী রাস্তার এই নামকরণ করে রেখেছেন। সানাটেরিয়াম, যা এখন হাঙ্গেরির বিখ্যাত হৃদ চিকিৎসা কেন্দ্র, সেখান ঢুকেই দেখি লিফটের পাশে হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় এক ফলকে লেখা, ‘১৯২৬ সালের নভেম্বরে নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ এই হাসপাতালে অবস্থান করেছিলেন।’ বাংলাদেশ থেকে গিয়েছি বলতেই একজন নার্স রবীন্দ্রনাথ যে ঘরে ছিলেন সেখানে নিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি আমরা সবই ধরে রেখেছি, এই ঘরের সব আসবাব তাঁর ব্যবহৃত। তাঁর লেখা চিঠি, নানা ছবি, কবিতা এখানকার দেওয়ালে দেয়ালে। আরও বিশেষ আকর্ষণ প্রখ্যাত ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের তৈরি ভিন্ন ধাঁচের এক আবক্ষ ভাস্কর্য।’

বুয়েনস এইরেসের শহরতলিতে ওকাম্পোর বাড়ি ‘ভিয়া ওকাম্পো’। এখানে রবি ঠাকুর প্রায় দুই মাস ছিলেন। এটি এখন ইউনেসকোর অন্তর্গত জাদুঘর। ২০১২। ছবি: লেখক
বুয়েনস এইরেসের শহরতলিতে ওকাম্পোর বাড়ি ‘ভিয়া ওকাম্পো’। এখানে রবি ঠাকুর প্রায় দুই মাস ছিলেন। এটি এখন ইউনেসকোর অন্তর্গত জাদুঘর। ২০১২। ছবি: লেখক

অবাক হয়ে চিন্তা করেছিলাম, হাঙ্গেরি অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এমন কোনো সম্পদশালী দেশ নয়। অথচ দেশের সবচেয়ে সেরা হৃদ হাসপাতালের একটি কক্ষ তারা প্রায় এক শ বছর ধরে জাদুঘর করে রেখেছে ভিনদেশি এক কবির সম্মানে!

হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে হ্রদ পর্যন্ত নানা ধরনের গাছগাছালি। এর মধ্যে একটা বিশেষ গাছ খুঁজছিলাম আমরা, শতবর্ষী এক লাইম গাছ। ১৯২৬ সালে রবি ঠাকুর স্বয়ং গাছটি লাগিয়েছিলেন। অবশেষে তাঁরই আরেকটি আবক্ষ ধাতব ভাস্কর্য দেখে বিখ্যাত গাছটিকে চেনা গেল। গাছ ঘিরে রাখা বেদির কয়েকটি ফলকে হাঙ্গেরিয়ান, বাংলা, ইংরেজিতে কবি সম্পর্কে কিছু কথা লেখা আছে এবং এই গাছ নিয়ে অপূর্ব এক কবিতা খোদাই করা আছে। গাছটিকে আলতো স্পর্শ করে শিহরিত হয়েছিলাম।

এভাবেই রবি পরিক্রমা চলতে থাকে আমার। হয়তো কোনো দিন জাপানের ইয়োকোহামায় তাঁর নিজের হাতে লাগানো গাছটি স্পর্শ করতে যাব কিংবা ইরানের সিরাজ নগরীতে কবি হাফিজের সমাধি পাশে বাসে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি তর্পণ করব। সম্মান জানাব আরও একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামের সেরা বাঙালি পর্যটককে।

লেখক: ভূপর্যটক