করোনাকে জয় করবেন যেভাবে

বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন। ছবি: রজত কান্তি রায়
বাইরে মাস্ক ব্যবহার করুন। ছবি: রজত কান্তি রায়

করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, শুধু সতর্ক থাকুন। করোনার মতো প্রাদুর্ভাব আমাদের এই অঞ্চলে আগেও এসেছিল, আবার এসেছে এবং ভবিষ্যতেও আসবে। অন্তত অতীতের কথা যদি একটু খেয়াল করেন, তাহলেই বুঝবেন। একসময় কলেরা এবং গুটিবসন্ত মহামারি হিসেবে দেখা দিয়েছিল আমাদের এই অঞ্চলে। দীর্ঘ সময় লেগেছে সেগুলো থেকে মুক্তি পেতে। তখন মানুষ এত কিছু না জেনেও মহামারি পার করে এসেছে। হ্যাঁ, অনেক কিছু জানত না বলে তখন মৃত্যুর মিছিল ছিল দীর্ঘ। এখন জানার ফলে মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখার অনেক প্রচেষ্টা চলছে।

যুদ্ধে যখন নেমেছেন, তখন প্রস্তুতি নিয়েই নামুন। বাইরে যাওয়ার সময়:

• মাস্ক ব্যবহার করুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক। প্রয়োজনে সঙ্গে বিশেষভাবে প্যাকিং করে অতিরিক্ত মাস্ক রাখুন। তবে গ্লাভস ব্যবহার না করলেও চলবে। কারণ আপনাকে হাত ধুতে হবে সুযোগ পেলেই।

• চশমা ব্যবহার করেন? তাহলে চোখে সেটা সব সময় রাখুন। আর যদি ব্যবহার না করে থাকেন, তাহলে ব্যবহার শুরু করুন। চাইলে সানগ্লাস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ, ভাইরাস চোখ দিয়েও ছড়ায়।

• ডাক্তার ও ভাইরাস বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, হাত ধুতে হবে বাইরে যেখানে যখন সুযোগ পান। তার মানে কিন্তু ঘণ্টায় ঘণ্টায় হাত ধোয়া নয়। কিছু ধরতে হলো বা টাকাপয়সা নাড়তে হলো, তো হাত ধুয়ে নিন। হাত ধোয়া আপনার সংক্রমণ ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সাধারণ সাবান পানি দিয়েই হাত ধুয়ে নিন। তবে বাইরে যাওয়ার সময় সঙ্গে রাখতে পারেন পকেটে বহনযোগ্য অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজার কিংবা জীবাণুনাশকের শিশি। সাবান পানি না পেলে এগুলো দিয়ে বাইরে হাত পরিষ্কার করতে পারেন।

• ব্যাপারটা এমন নয় যে হাত ধুয়েছেন বলে বারবার চোখে–মুখে হাত দেবেন।

• পানি দিয়ে পরিষ্কার করা যায়, বাইরে যাওয়ার জন্য এমন জুতা বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। বাইরে থেকে ফিরে সাবান পানি দিয়ে কিংবা জীবাণুনাশক ছিটিয়ে এই জুতা বা স্যান্ডেল আবার পরিষ্কার করুন। জুতা বা স্যান্ডেল বাসার বাইরেই রাখুন।

• এক-আধা কিলোমিটার যাওয়ার জন্য এখন হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাতে সামাজিক দূরত্বও ঠিক থাকল আবার সংক্রমণেরও ভয় কমল অনেকটাই। মাস্ক, সানগ্লাস ব্যবহার করছেন বলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা ভুলে যাবেন না যেন।

• অনেকেই ঘড়ি ব্যবহার করেন। মোবাইল ফোন যখন সময় দেখার কাজ করে দিচ্ছে, নির্দিষ্ট সময় অ্যালার্ম দিয়ে আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে সবকিছু, তখন ঘড়ির প্রয়োজন কী? ঘড়ি, চুড়ি, ব্রেসলেটসহ যেকোনো ধাতব অলংকার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। যেকোনো ধাতুতে ৫ ঘণ্টার মতো ভাইরাস জীবিত থাকতে পারে।

• নারীরা বড় চুল ঢাকার জন্য ওড়না কিংবা স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন। বড় চুলের পুরুষেরাও চুল ঢাকার জন্য পুরুষদের স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারেন।

• টাকাপয়সা ব্যবহারের জন্য মোবাইল ওয়ালেট কিংবা কার্ড ব্যবহার করতে পারেন। ব্যবহারের পর কার্ড স্যানিটাইজ করে নিন।

• অফিসে বা কাজের জায়গায় গিয়েই কাজে বসে যাবেন না। হাত-মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। প্রয়োজনে বাইরে থেকে যে জামাকাপড় পরে এসেছেন, সেগুলো খুলে পলিথিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে বেঁধে রাখুন। তারপর অফিসে রাখা নতুন জামাকাপড় পরুন। অ্যালকোহল প্যাড দিয়ে মোবাইল পরিষ্কার করে নিন। মানি ব্যাগও অ্যালকোহল প্যাড দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। চাইলে ধাতব কয়েন এবং টাকাও ওই প্যাড দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে পারেন।

• প্রতিদিন ব্যবহার করেন সে রকম জিনিসপত্র আগে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। ল্যাপটপ, মাউস, চেয়ার, ডেস্ক, মেশিনপত্র ইত্যাদি সব প্রথমে পরিষ্কার করে নিন। এগুলোর জন্য অফিসের ব্যবস্থা থাকলে ভালো। নইলে নিজেই ব্যবস্থা করে নিন। ছোট ছোট জিনিস পরিষ্কার করার জন্য অ্যালকোহল প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। বড় জিনিসের জন্য স্প্রে। নিজের কাপ-মগ-পানির বোতল-খাবার প্লেটও ব্যবহারের আগে পরিষ্কার করুন।

• কারও সঙ্গে কথা বলার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। যতটা দূরে থাকা যায় ততটা দূরে থাকুন সহকর্মীদের কাছ থেকে। সব ধরনের যোগাযোগ মেইল কিংবা ফোনে সেরে ফেলুন।

• যত দূর হেঁটে ওঠা যায় সিঁড়ি ভেঙে তত দূর হেঁটেই উঠুন। লিফট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম মানুষ উঠুন। আগে যদি ১০ জন মানুষ একসঙ্গে উঠতেন, এখন ৪–৫ জন উঠুন। তাতে দূরত্ব মানা সম্ভব হবে। লিফটের বোতাম টিপতে কনুই ব্যবহার করুন অথবা টিস্যু পেপার। ব্যবহারের পর টিস্যু এবং যেকোনো ব্যবহৃত জিনিস নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলুন।

• সুযোগ থাকলে অফিসের যানবাহন ব্যবহার করুন।

• প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ব্যবহার করুন।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করুন। ছবি: রজত কান্তি রায়
প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করুন। ছবি: রজত কান্তি রায়

• অফিস থেকে বা যেখান থেকেই বাসায় ফিরুন না কেন, বাসায় ঢোকার আগে আপনার জুতা-স্যান্ডেল পরিষ্কার করে নিন। সম্ভব হলে বাইরেই আপনার সঙ্গে থাকা মোবাইল, মানি ব্যাগ ইত্যাদি জিনিসপত্র জীবাণুনাশক কিংবা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। তারপর বাসায় ঢুকে সোজা চলে যান বাথরুমে। সাবান মেখে স্নান সেরে ফেলুন। তারপর কিছুক্ষণ একা থাকুন।

• এ সময় লেবু-পানি পান করতে পারেন। কিংবা গ্রিন টি অথবা গরম চা। অথবা যদি পছন্দের কোনো ভেষজ পানীয় থাকে, সেটাও পান করতে পারেন।

• মানসিক প্রশান্তি আনতে একা একা গান শুনতে পারেন।

• পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম আপনার রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

সবচেয়ে বড় কথা, সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেও স্বাভাবিক জীবনযাপনের চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন: