পিপিই নিয়ে এক প্রস্থ

কোভিড-১৯ রোগীর সরাসরি পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরো পিপিই সেট পরার দরকার রয়েছে। ছবি: খালেদ সরকার
কোভিড-১৯ রোগীর সরাসরি পরিচর্যাকারী, চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীদের পুরো পিপিই সেট পরার দরকার রয়েছে। ছবি: খালেদ সরকার

পিপিই বা ব্যক্তিগত সুরক্ষাসামগ্রী। করোনাভাইরাসের এই সময়ে পিপিই (পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) যেন আলোচিত বিষয়ের একটি। সবাই মোটমুটি ব্যক্তিগত সুরক্ষার ব্যাপারে সচেতন। তবে কেউ কেউ মানতে চাইছেন না এই স্বাস্থ্যবিধি, আবার কেউ কেউ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি করে ফেলছেন। আবার যতটুকু ব্যক্তিগত সুরক্ষা মেনে চলেছেন, তা মানসম্মত কি না, তা অনেকেই জানেন না।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেন, ব্যক্তিগত সুরক্ষা কেমন হবে, তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রথমেই খেয়াল করতে হবে যে করোনাভাইরাস আমাদের শরীরে কীভাবে প্রবেশ করে। যেহেতু এটি নাক, মুখ ও চোখ দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাই এর ঢোকার পথগুলোকে সুরক্ষিত করা গেলেই এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। আর শরীরের এই অঙ্গগুলোতে নিজের জানা বা অজানাতেই স্পর্শ করা হয় হাত দিয়ে। তাই হাত যেন সব সময় পরিষ্কার থাকে।

যেখানে–সেখানে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। নাক, মুখ ও চোখে অপ্রয়োজনীয় স্পর্শ যথা সম্ভব পরিহার করতে হবে। একেক সংক্রামক রোগ একেকভাবে ছড়ায়। তাই সংক্রামক রোগভেদে পিপিই ভিন্ন হবে।

পিপিই কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

যেখানে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেখানে পিপিই পরা জরুরি। কারণ, এ ক্ষেত্রে শুধু তিনিই সংক্রমিত হবেন না, বরং তাঁর মাধ্যমে আরও অনেকেই সংক্রমিত হতে পারেন। যেমন হাসপাতালে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এখানে লক্ষণ ছাড়া আক্রান্ত চিকিৎসকের কাছ থেকেও রোগীর মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি ১০ জন রোগীর মধ্যে একজন রোগী চিকিৎসকদের মাধ্যমেই সংক্রমিত হয়। অন্যদিকে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও রোগীদের মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারেন। ইতালিতেও এমনটি দেখা গেছে।

সাধারণত গ্লাভস, মাস্ক, বিশেষ গগলস পরলে সুরক্ষিত থাকা যাবে
সাধারণত গ্লাভস, মাস্ক, বিশেষ গগলস পরলে সুরক্ষিত থাকা যাবে

কী কী নিয়ে পিপিই

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পর্যাপ্ত সুরক্ষার জন্য পিপিইতে মোট পাঁচটি উপকরণ থাকতে হবে। এগুলো হলো মুখে পরার মাস্ক, চোখ ঢাকার জন্য মুখের সঙ্গে লেগে থাকে এমন চশমা, মুখের আবরণ (ফেস শিল্ড), গ্লাভস বা দস্তানা এবং গাউন।

পিপিই কেমন হওয়া দরকার?

পিপিই তৈরিতে এমন কাপড় ব্যবহার করা হয়, যেন তা কোনোভাবেই তরল শুষে নেবে না বা পিপিইকে সম্পূর্ণ শুষ্ক রাখবে। এটা এমন পদার্থে তৈরি হওয়া উচিত, যাতে তা কোনো ধরনের তরলকে ধারণ না করে এবং সেটা গড়িয়ে পড়ে যায়।

পিপিইতেই কি সুরক্ষা?

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকার উত্তম উপায় ঘরবন্দী থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। এক কথায় যথাসম্ভব বাসায় থাকা। কারণ, পিপিই ব্যবহার করলেই শতভাগ নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। মাস্ক ভেদ করেও ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। আবার যে মাস্ক অনেকেই ব্যবহার করছেন, তার মান নিয়ে বিস্তর বিতর্ক আছে। সত্যি কথা বলতে, অনেকেই মাস্ক ঠিকমতো পরতেই পারছে না। একই মাস্ক অনেকবার ব্যবহার করা হচ্ছে। তাতে উল্টা বিপদ হতে পারে। একজন ব্যবহারকারীকে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করে পিপিই পরতে এবং খুলতে হবে, না হলে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অনেক সময় পিপিই দূষিত হয়ে পড়তে পারে।

সবার কি গাউনসহ পিপিই দরকার?

সবার গাউনসহ পিপিই দরকার নেই। সঠিক মানের পিপিই পরে অনেক্ষণ থাকাও সম্ভব নয়। দেখা যাচ্ছে, পুরো অফিস সময়ে বা বাইরে থাকালীন অনেকে গাউন পরে থাকেন। ঘেমে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে আবার শরীর থেকে লবণপানি বের হয়ে দুর্বল লাগা শুরু করতে পারে। আবার ঠান্ডা লেগে সর্দি-জ্বর হতে পারে। তবে সবাইকে নাক, মুখ ও চোখকে সুরক্ষিত রাখতেই হবে। ঘন ঘন হাত ধুতে হবে বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। হাত দিয়ে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষকথা সুরক্ষা নিজের কাছে। অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে না যাওয়া। জরুরি প্রয়োজনে বাইরে গেলে সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহার করা। সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা।