ডেঙ্গু মৌসুমে জ্বর

এই সময়ে জ্বর এলে, তা ডেঙ্গুও হতে পারে। হেলাফেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো। ছবি: সুমন ইউসুফ
এই সময়ে জ্বর এলে, তা ডেঙ্গুও হতে পারে। হেলাফেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা ভালো। ছবি: সুমন ইউসুফ

এই সময় জ্বর মানেই আতঙ্ক। করোনা মহামারির সময় যেকোনো জ্বর ও সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলেই নিজেকে আলাদা করে রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মানা আর কোভিড-১৯ পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। কিন্তু মনে রাখা দরকার যে এটা ডেঙ্গু জ্বরেরও মৌসুম। বাংলাদেশে মার্চ–এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত বছর পর্যন্ত এই সময়ে জ্বর হলেই ডেঙ্গু সন্দেহে পরীক্ষা করার কথা বলা হতো। এখন যুক্ত হয়েছে আরেক রোগ—কোভিড–১৯।

বুঝবেন কীভাবে

কোভিড–১৯ বা ডেঙ্গু—দুটোই ভাইরাসজনিত জ্বর। দুটোতেই কিছু উপসর্গ একেবারে এক রকম। যেমন: জ্বর বা জ্বর–জ্বর ভাব, শরীর মেজমেজ করা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি। তবে এদের কিছু বিশেষত্বও আছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের হাড়ে ব্যথা থাকে। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, অরুচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়।

লক্ষণীয় যে ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা দুটোতেই হতে পারে। দুটো ক্ষেত্রেই ক্ল্যাসিক্যাল উপসর্গ না–ও থাকতে পারে। তাই জ্বর ডেঙ্গু না করোনার কারণে, বোঝা মুশকিল হতে পারে অনেক সময়। তাই এ সময় জ্বর হলে দুটো পরীক্ষাই করে ফেলা ভালো। আর রোগের কিছু ইতিহাস, যেমন ঘনিষ্ঠ কারও করোনা হওয়া বা করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসার ইতিহাস থাকলে তা গুরুত্বপূর্ণ।

পরীক্ষার সমস্যা

জ্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই দুটোর পরীক্ষা করে ফেলতে পারবেন। ডেঙ্গুর জন্য নেওয়া হবে রক্ত—তাতে ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। আর করোনার জন্য সাধারণত নেওয়া হয় নাক বা শ্বাসতন্ত্রের নিঃসরণ। করা হয় আরটি–পিসিআর টেস্ট। আর দুই ক্ষেত্রেই রক্তের সিবিসি, প্লাটিলেট কাউন্ট, যকৃৎ ও কিডনির পরীক্ষা করা হলে ভালো। কারণ, চিকিৎসার ক্ষেত্রে এগুলোর রিপোর্ট কাজে লাগতে পারে।

সিঙ্গাপুর ও ব্রাজিলের কিছু কেসস্টাডি দেখাচ্ছে যে কোনো এক অজ্ঞাত কারণে একই সঙ্গে দুটি ভাইরাস দিয়ে সংক্রমণ হলে করোনা পজিটিভ হলেও ডেঙ্গু এনএসওয়ান নেগেটিভ আসতে পারে। ডেঙ্গু একধরনের আরবো ভাইরাস আর করোনা হলো সার্স ভাইরাসের গোত্রভুক্ত। তারপরও এই সমস্যা কেন হয়, তা বোঝা মুশকিল। তাই প্রয়োজনে একাধিকবার পরীক্ষা করা লাগতে পারে, যদি রোগীর উপসর্গ ও লক্ষণ সন্দেহের সৃস্টি করে। ডেঙ্গু আর করোনা একসঙ্গে হতে পারে কি? হ্যাঁ, হওয়াটা বিচিত্র নয়। তবে এ দুটি একত্রে হলে জটিলতার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেবে।

কী করণীয়

সত্যি বলতে কি ভাইরাসজনিত রোগের তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। ডেঙ্গু বা করোনা—দুইয়ের বেলায়ই এ কথা সত্য। যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা উপসর্গ ও জটিলতাভিত্তিক। তবে জ্বর হলে যেকোনো ব্যক্তিকে এখন বাড়িতে অন্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। মাস্ক পরা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ সব নিয়ম মানতে হবে। দুই ক্ষেত্রেই পান করতে হবে প্রচুর পানি ও তরল। দরকার বিশ্রাম। জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল–জাতীয় ওষুধ খেতে পারবেন। পরীক্ষা করা ও রিপোর্ট পাওয়ার আগপর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে উপসর্গগুলো খেয়াল করুন। ডেঙ্গুর জটিলতা হিসেবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে, মাড়ি, ত্বক বা অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তপাত হতে পারে। এ রকম হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে স্যালাইন নিতে হতে পারে।

আবার করোনার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, রক্তে অক্সিজেন কমে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন আর রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধের ইনজেকশন নিতে হতে পারে। এখানে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডেঙ্গুতে রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ে আর করোনায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। এ দুটি একে অন্যের বিপরীত। তাই খুব সতর্কভাবে চিকিৎসা করার দরকার হয়। রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা, হিমাটোক্রিটের হিসাব, ডি ডাইমার, বুকের এক্স-রে ইত্যাদি রিপোর্ট তখন বিশেষভাবে কাজে আসবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদি খাওয়া বিপজ্জনক। তাই নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। দুটো রোগই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নিজে নিজেই সেরে যায়। তাই মনোবল ধরে রাখুন। আর সবচেয়ে বেশি নজর দিন প্রতিরোধে। হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব পালন করার পাশাপাশি বাড়িতে ও আশপাশে পানি জমে আছে কি না, মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে কি না, সেদিকে লক্ষ রাখুন।