চোখ থাক সতেজ সুন্দর

ঘরোয়া কিছু যত্নেই চোখ হয়ে উঠবে সতেজ।  মডেল: মাশিয়াত ছবি: নকশা
ঘরোয়া কিছু যত্নেই চোখ হয়ে উঠবে সতেজ। মডেল: মাশিয়াত ছবি: নকশা

‘ভোমর-কালো চোখ দুটিতে নাই কৌতুক-হাসি,

সেখান দিয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু রাশি রাশি।’

পল্লিকবি জসীমউদ্‌দীনের বর্ণনায় সেই রসুলপুরের আসমানীর চোখ। আজকের ওলট-পালট হয়ে যাওয়া দুনিয়ায় অনেকেই আমরা প্রাণভরে হাসতে ভুলে গেছি। চোখও বুঝি আর হাসে না। মানসিক চাপ-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কিংবা প্রিয়জনের নিরাপত্তার দুশ্চিন্তা সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা অন্য রকম। ভেতরের সেই চাপের ছাপ পড়ছে চেহারায়, চোখে। আবার এলোমেলো হয়ে পড়া দিনলিপিতে ‘রাতজাগা পাখি’ হয়ে উঠেছেন অনেকে। রাত জেগে পড়ছেন বই, দেখছেন টেলিভিশন কিংবা চোখ মেলে থাকছেন ইউটিউব-নেটফ্লিক্সে। সব মিলিয়েই তাই চোখ থাকছে ভীষণ চাপে। এতে চোখের নিচে কালি পড়তে পারে, চোখ বসে যেতে পারে।

চোখজোড়াকে সুস্থ, সতেজ, সুন্দর রাখতে তাই চোখেরও চাই বিশ্রাম, চাই পর্যাপ্ত পুষ্টি। ডিজিটাল পর্দায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে কাটানো সময়টা যেন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। অন্ধকারে বা খুব কম আলোতে ডিজিটাল পর্দায় বা গ্যাজেটে সময় কাটাবেন না। হতাশা-দুশ্চিন্তাকে দূরে রাখতে চেষ্টা করুন।

চাই সু-অভ্যাস

ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী জানালেন, সুষম খাদ্যাভ্যাস সব সময়ই প্রয়োজন। এ সময়ও তার ব্যতিক্রম নয়। সঠিক সময়ে খাওয়া, সুষম পরিমাণে খাবার গ্রহণ, সঠিক সময়ে ঘুম—সুস্বাস্থ্যের সর্বজনীন নিয়মগুলো ভুলে গেলে চলবে না। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা থেকে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে চেষ্টা করুন, ওষুধের মাধ্যমে এসব উপাদান গ্রহণের চেয়ে এটাই উত্তম পদ্ধতি।

বাদাম, ডিম, দুধ (ফর্টিফায়েডও হতে পারে), রঙিন শাকসবজি, টাটকা ফলমূল, ছোট মাছসহ অন্যান্য মাছ, মাংস, ডাল সবই খেতে হবে সঠিক পরিমাণে। তবে ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ খাবার যেমন—রঙিন শাকসবজি, ফলমূল, ডিম, গরুর কলিজা ইত্যাদি গ্রহণের সময় সামান্য তেলসমৃদ্ধ একটি খাবার গ্রহণ করাও জরুরি, তা না হলে শরীরে এই ভিটামিন সঠিকভাবে শোষণ হয় না। যেমন, সেদ্ধ ডিম খাবার সময় আলুভাজি খাওয়া হচ্ছে, তাহলে আলুভাজির তেলেই ডিমের ভিটামিন এ শোষণ হবে। গাজর আমরা কাঁচা খেয়ে থাকি, গাজরের ভিটামিন এ ভালোভাবে শরীরে শোষণ হয় যদি ভাত-তরকারি খাওয়ার সময় সালাদ হিসেবেই এটি গ্রহণ করা হয়। আবার শাক বা কলিজা রান্নার সময় তেল ব্যবহার করা হচ্ছে, কাজেই এগুলোর সঙ্গে আর তেলে রান্না অন্য খাবার না খেলেও সমস্যা নেই।

রোজনামচায় আরও যা

ঢাকার রেড বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বলেন, ‘অন্য রকম পরিস্থিতিতে আমরা মন ভালো রাখার জন্য বই পড়ছি, টেলিভিশন দেখছি। তবে মনে রাখতে হবে, মন ভালো রাখার এই কাজগুলোই যেন আমাদের জন্য চাপের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। যেমন—ঘুমের আগে মন খারাপ করে দেওয়া সিনেমা দেখা ঠিক নয়। মানসিক চাপ বাড়ায়, এমন কিছু দেখবেন না। বরং দেখতে চাইলে মজার আনন্দদায়ক কিছু দেখতে পারেন।’

 এ ছাড়া লম্বা সময় একটানা বই পড়া কিংবা স্মার্টযন্ত্রে সময় কাটানো উচিত নয় বলেই জানালেন আফরোজা পারভীন। মাঝেমধ্যে উঠে বিরতি দিতে হবে। চোখ দেবে যাচ্ছে, এ রকম মনে হলে চোখে প্রসাধনী ব্যবহার না করাই ভালো।

ঘরোয়া যত্ন

ঘুম থেকে উঠে চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন ১০ থেকে ১৫ বার। এভাবে সারা দিনে ৫-৭টি ভিন্ন সময়ে চোখেমুখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দেওয়ার অভ্যাস করুন। একটানা বই পড়া বা ডিজিটাল পর্দায় সময় কাটানোর মধ্যেও একই নিয়মে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিন।

চোখের কালচে ভাব দূর করতে সমপরিমাণ আলু ও শসা গ্রেট করে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। ঠান্ডা হলে বের করে চোখের ওপর দিন। চোখে আরাম দেবে। আলুর কষ চোখের কালচে দাগ দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে। চোখের ওপর দেওয়ার পর অন্তত ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিনই একবার ব্যবহার করুন।