করোনায় আক্রান্তরা শোবেন যেভাবে

করোনায় আক্রান্ত রোগীর শ্বাসকষ্ট কমানো ও অক্সিজেন ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য শোবার ধরন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধোমুখ বা উপুড় হওয়া, কাত হওয়া, অর্ধশায়িত অবস্থায় ধরন পাল্টানো যাকে ‘প্রোন পজিশন’ বলা হচ্ছে, এটি কার্যকরী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত। দেখা গেছে, এসব ধরন মেনে চললে আইসিইউতে ইনটুবেশন বা ভেন্টিলেশনের হার কমানো সম্ভব। বাড়িতে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায়ও এসব অনুসরণ করতে হবে।

উপুড় হয়ে শুলে যেভাবে শ্বাসকষ্ট কমে

ফুসফুস পেছনের দিকে বেশি বিস্তৃত হওয়ায় উপুড় হয়ে শুয়ে থাকলে ফুসফুসের ওপর চাপ কম পড়ে। ফলে ফুসফুসে সহজে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে। ফুসফেসের সংকোচন-প্রসারণ সামর্থ্য বাড়ে, মিউকাস বা শ্লেষ্মা নিঃসৃত হয়, শ্বাসনালি বন্ধ হওয়ার প্রবণতা কমে যায়, ফুসফুসে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়।

কাদের জন্য প্রযোজ্য নয়

উপুড় হয়ে শোবার ধরন সবার জন্য প্রযোজ্য নয়। যাঁরা বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা এই ধরনের পজিশনিংয়ের আগে অবশ্যই একজন রেসপিরেটোরি ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নেবেন।

যাঁরা উপুড় হয়ে শোবেন না

*  যাঁদের শ্বাসতন্ত্রে তীব্র সমস্যা হচ্ছে এবং জরুরি ভিত্তিতে ইনটুবেশন প্রয়োজন।

*  যাঁদের রক্ত সঞ্চালনে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে (সিস্টোলিক প্রেসার ৯০-এর নিচে)।

*  মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ব্যক্তি, যাঁরা নিজে নিজে পজিশন পরিবর্তন করতে পারেন না বা উপযুক্ত সাড়া দিতে অক্ষম।

*  বুকে আঘাত, মুখে আঘাতপ্রাপ্ত বা সাম্প্রতিক সময়ে যাঁদের পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে।

*  যাঁদের ঘন ঘন খিঁচুনি হয়।

*  যাঁদের উরু বা কোমরের হাড়ে আঘাত বা ভাঙা আছে।

*  গর্ভবতী নারী।

কীভাবে করবেন

*  প্রতি ১-২ ঘণ্টা পরপর ধরন পরিবর্তন করতে হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ফুসফুসের সব এলাকায় পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছানো। প্রতিটি ধরনে শোবার ১৫ মিনিট পর পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে অক্সিজেনের ঘনত্ব পরিমাপ করতে হবে। যে অবস্থানে শোয়ায় অক্সিজেনের ঘনত্ব বাড়বে না, সেই ধরন বাদ দিয়ে পরবর্তী ধরনে যেতে হবে।

*  প্রতিটি ধরনে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। তবে তা নির্ভর করবে রোগীর সহ্য ক্ষমতা, আরামের ওপর। যে ধরনে রোগী আরাম বোধ করবে না, সে ধরন বাদ দিতে হবে।

*  যাঁরা বাড়িতে মৃদু উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাঁরা চেষ্টা করবেন দিনে কমপক্ষে দুবার ধরনগুলো ধারাবাহিকভাবে করতে। যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন (মাঝারি থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে), তাঁরা দিনে ১৬ ঘণ্টা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি টিমের তত্ত্বাবধানে অক্সিজেন থেরাপির পাশাপাশি শোবার ধরনগুলো চেষ্টা করবেন।

*  দীর্ঘ সময় না করা গেলে ৪ ঘণ্টা পরপর ৪টি সেশনে ভাগ করে নিতে হবে।

*  খাওয়ার পরপরই ধরনগুলো চর্চা করা উচিত নয়।

ধারাবাহিকভাবে শোবার ধরন

উপুড় হয়ে শোয়া
উপুড় হয়ে শোয়া

১. উপুড় হয়ে শোয়া

সোজা বিছানায় পেটের ও বুকের নিচে বালিশ দিয়ে ৩০ মিনিট-২ ঘণ্টা পর্যন্ত উপুড় হয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করুন। যাঁরা অক্সিজেন থেরাপি নিচ্ছেন, তাঁরা খেয়াল রাখবেন যাতে অক্সিজেনের নলটি খুলে না যায়।

ডান কাত হয়ে শোয়া
ডান কাত হয়ে শোয়া

২. ডান কাত হয়ে শোয়া

সোজা বিছানায় দুই হাঁটুর মাঝখানে ও মাথার নিচে বালিশ নিয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করবেন ৩০ মিনিট–২ ঘণ্টা পর্যন্ত।

অর্ধশায়িত অবস্থায় শোয়া
অর্ধশায়িত অবস্থায় শোয়া

৩. অর্ধশায়িত অবস্থায় শোয়া

সোজা বিছানায় কোমর ও পিঠের দিকে বালিশ রেখে ৩০-৬০ ডিগ্রি পজিশনে আধা শোয়া অবস্থায় থাকতে হবে ৩০ মিনিট-২ ঘণ্টা পর্যন্ত।

বাম কাত হয়ে শোয়া
বাম কাত হয়ে শোয়া

৪. বাম কাত হয়ে শোয়া

সোজা বিছানায় দুই হাঁটুর মধ্যে ও মাথার নিচে বালিশ নিয়ে শুয়ে থাকার চেষ্টা করবেন ৩০ মিনিট–২ ঘণ্টা পর্যন্ত। তারপর আবার উপুড় হয়ে শুতে হবে। এভাবে শোবার ধরনের প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চালিয়ে যেতে হবে।

লেখক: ফিজিওথেরাপি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ