করোনা যখন পরিবারে

আলো–বাতাস খেলা করে—এমন ঘরই আইসোলেশনের জন্য আদর্শ। ছবি: অধুনা
আলো–বাতাস খেলা করে—এমন ঘরই আইসোলেশনের জন্য আদর্শ। ছবি: অধুনা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অনেকে অসুস্থ হন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মৃদু—ঘরেই এর মোকাবিলা সম্ভব। কিন্তু ঘরের অন্যান্য সদস্য কীভাবে সুস্থ থাকবেন? ছোঁয়াচে এই ভাইরাস পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব আর সহকর্মীদের মধ্যে ছড়ায়। জানা গেছে, চীনে প্রথম ৭৫-৮০ শতাংশ সংক্রমণ ঘটেছিল পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) বক্তব্য, কাশি, জ্বর নিয়ে অসুস্থ—এঁরা ঘরেই নিজের খেয়াল নেবেন, তবে গুরুতর হলে, যেমন শ্বাসকষ্ট হলে হাসপাতালের সেবা নেবেন । তবে আগে থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাখতে হবে।

যাঁদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি, আর যাঁদের অন্তর্গত অন্য অসুখ আছে, যেমন ডায়াবেটিস, ক্যানসার, কিডনির রোগ, শ্বাসযন্ত্রের ক্রনিক রোগ—তাঁদের মৃদু উপসর্গ হলেও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে জানাতে হবে।

*রোগী থাকবেন আলাদা ঘরে। কাজে যাবেন না, ঘরের বাইরে যাবেন না। ঘরে প্রচুর আলো–বাতাস খেলবে। ঘরের অন্য কাজ, যেমন বাইরে মুদির দোকানে, ফার্মেসিতে যাবেন বাসার অন্য লোক। ঘরে সুস্থ তরুণ সদস্য রোগীর দেখভাল করবেন, বাইরেও তিনি যাবেন। রোগীর চলাচল সীমিত হবে। তাঁর ঘরেই তিনি বেশির ভাগ সময় থাকবেন।

যদি আলাদা ঘর না থাকে, তবে সবাই মেডিকেল মাস্ক পরে রোগীর কাছ থেকে অন্তত ৩ থেকে ৬ ফুট দূরে থাকবেন।

*রোগীসহ ঘরের সব সদস্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। হাত সবাই ধোবেন বারবার—খাবার আগে আর পরে, টয়লেটে যাওয়ার পর। হাঁচি–কাশি দেওয়ার পর। খাবার প্রস্তুত করার আগে, আর পরে হাত ধুতে হবে। যিনি রোগীর দেখভাল করবেন, তিনি রোগী সেবার পর হাত ধোবেন। হাত সাবান–জল দিয়ে ভালো করে ধুতে হবে—অন্তত ২০ সেকেন্ড। হাতের সামনের দিক, পেছনের দিক, আঙুলের ফাঁক, নখের নিচ ভালো করে ধোবেন। ডিসপোজেবল পেপার টাওয়েল ব্যবহার করে হাত শুকিয়ে নিতে হবে। সাবান না থাকলে ব্যবহার করতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার (৬০ শতাংশ অ্যালকোহল)। হাত শুকাতে হবে। হাত অপরিচ্ছন্ন মনে হলেও ধুতে হবে।

*রোগীর জন্য আলাদা স্নানঘর থাকা ভালো। তা না হলে প্রতিবার ব্যবহারের পর ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে।

*ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিস, যেমন খাবার বাসন, ডিশ, কাপ, গ্লাস, তোয়ালে, বিছানার চাদর রোগীর সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না। রোগীর জন্য এসব জিনিস আলাদা থাকবে।

*কাশির শিষ্টাচার সবাই মানবেন। মুখ, নাক টিস্যু দিয়ে ঢেকে হাঁচি–কাশি দিতে হবে। এরপর সেই টিস্যু মুখ ঢাকা বিনে ফেলতে হবে। টিস্যু হাতের কাছে না থাকলে হাতের কনুই ব্যবহার করতে হবে। পরে তা ধুয়ে নিতে হবে।

*রোগী নেবেন যথেষ্ট বিশ্রাম, প্রচুর তরল গ্রহণ করবেন, প্রচুর ঘুমাবেন আর পুষ্টিকর খাবার খাবেন। ব্যথা–বেদনা থাকলে বেদনাহরণ ওষুধ খাবেন।

*চোখ, নাক, মুখ অপরিচ্ছন্ন হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।

*যেসব স্থানে হাতের ছোঁয়া বেশি লাগে, যেমন দরজার হাতল, টেবিলের উপরিতল, কাউন্টার, চাবি, তালা, টেলিফোন, সুইচ, কি–বোর্ড—এসবের জীবাণু শোধন করুন।

*ঘরে একজনের সংক্রমণ হলে সবাই ঘরবন্দী থাকবেন ১৪ দিন।

*রোগী আলাদা তাঁর ঘরে খাবেন, খাবার তাঁর বাসনে দরজার বাইরে রেখে তাঁকে জানাবেন। তিনি নিজে সে বাসন ভেতরে নিয়ে খাবেন।

*সবাই দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাবেন, ব্যায়াম করবেন, প্রচুর ঘুমাবেন। অন্য সদস্যরা নিজেদের খেয়াল রাখবেন, উপসর্গ হলো কি না, নজর রাখবেন; দৈনিক তাপমাত্রা মাপবেন।

*অনাবশ্যক ঘরে অতিথি না আসা উচিত।

*রোগীর সঙ্গে ফোনে, টেক্সট মেসেজ, ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ হবে, সংস্পর্শে না আসা উচিত।

*চিকিৎসক আর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে ফোনে, অনলাইনে কথা বলুন। হাসপাতালে নেওয়া, পরীক্ষা করা—এসব ব্যাপারে পরামর্শ নিন। তাদের অবহিত রাখলে পরে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।

*রোগীর শ্বাসকষ্ট, প্রবল জ্বর—এমন উপসর্গ দেখা দিলে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

*রোগীকে মনে সাহস দিন। সংস্পর্শে আসা না গেলেও দূর থেকে আদর, যত্ন আর ভালোবাসার দেহভঙ্গি রোগীকে আশ্বস্ত করে। তিনি মনে করেন, তিনি একা নন। পরিবারের অন্যরা তাঁর পাশে আছেন। ঘরে শিশুর কাছ থেকে হাতে লেখা চিঠি, ভিডিও কল এ সময় অনেক মূল্যবান।

সময় বৈরী, ভয়ের—এ সময় ভাইরাসের সম্প্রচারকে ভালোবাসার সম্প্রচার দিয়ে হটিয়ে দিতে হয়, আর মনের জোর আমাদের সেরে উঠতে অনেক সাহায্য করে। মনের বিষণ্নতা, একাকিত্ব কাটাতে চাই ট্রান্সমিট লাভ—যা এই সময়ে খুব প্রয়োজন।