নানা উপায়ে খান ভিটামিন সি

শুধু শরবত নয়, আরও নানা উপায়ে খেতে পারেন লেবু বা মাল্টা। ছবি: অধুনা
শুধু শরবত নয়, আরও নানা উপায়ে খেতে পারেন লেবু বা মাল্টা। ছবি: অধুনা

বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ অসুস্থ হয় গরমকালে। রোদের তেজে শরীর থেকে ঘাম বের হয়ে হাঁসফাঁস অবস্থা। সঙ্গে দেহের শক্তি তো কমতেই থাকে। গরমের সময় প্রকৃতিতে আসা পরিবর্তনের কারণে সাধারণত সর্দি, কাশি, জ্বর, চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, গলাব্যথা ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। সেই সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে করোনাভাইরাস মহামারি। এসব রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তাই অবশ্যই এই সময়ে পুষ্টিকর খাবারের প্রতি মনযোগী হতে হবে। বিশেষ করে ভিটামিন সি জাতীয় খাবার। কারণ শরীর ভালো না থাকলে মন–মেজাজও ভালো থাকে না। গরমে শরীর ও ফিটনেস ঠিক রাখতে কিছু কার্যকরি উপায় রয়েছে, যেগুলো ঠিকমতো খেলে গরমেও থাকা যাবে সতেজ ও প্রাণবন্ত। শরীরকে সতেজ রাখতে ভিটামিন সি–যুক্ত এই সময়ের খুব সহজলভ্য খাবারের মধ্যে আছে লেবু, মাল্টা, আমলকীর মতো ফল।
তবে প্রতিদিন এমন ফলমূল খেতে একঘেয়েমি আসতে পারে। সেই লেবু বা মাল্টা টুকরা করে চিবানো বা শরবত করে খাওয়া। গতানুগতিকভাবে শুধু শরবত নয়, গুণাগুণ ঠিক রেখে এসব ফল খাওয়া যায় আরও নানা উপায়ে। আজ তেমন কিছু উপায় জানাব, যাতে আমাদের রসনায় আসবে তৃপ্তি।

লেবুর রকমফের
লেবুর শরবত খাবার হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তবে প্রতিদিন তো সেই শরবত কারও মুখে ভালো লাগবে না। তাই স্বাদ বদলে লেবু খেতে পারেন উষ্ণ গরম পানিতে মধু আর লেবু দিয়ে। এভাবে বানানো পানি শরীরের মেদ কমাতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া লেবু ডিটক্স হিসেবে হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে। নানা ধরনের খাবার বেক করতে লেবু ব্যবহার করা হয়। তাতেও মিলবে ভিটামিন সি। ছোট মাছ চচ্চড়িতে লেবু যুক্ত করে রান্নায় আনতে পারেন ভিন্ন স্বাদ। যেকোনো মাছের ডিম রান্নায়ও লেবুর রস ব্যবহার করা যায়। এমনকি কচুর লতি ও কচুরমুখী (ছড়া) রান্নায় খোসাসহ লেবু কুচি করে দিলে স্বাদ ও গন্ধ দুটোই অতুলনীয় হয়।
লেবুর আচার তৈরি করেও খেতে পারেন। ভিন্ন ভিন্নভাবে লেবু দিয়ে তৈরি আচার আমাদের রসনা আর পুষ্টি দুটোই পূরণে সাহায্য করে।

মাল্টা বা কমলার স্বাদ
মাল্টা অনেকের কাছে প্রিয় একটি ফল। জনপ্রিয় এই ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। মাল্টাতে ভিটামিন সি ছাড়াও ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও চর্বিমুক্ত ক্যালরি আছে। শুধু তা–ই নয়, এটির স্বাস্থ্যগুণও কম নয়! সর্দি, নাক বন্ধ থাকা, টনসিলের সমস্যা, গলাব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব, হাঁচি-কাশি, মাথাব্যথা, ঠান্ডাজনিত দুর্বলতা—এ জাতীয় সমস্যাগুলো দূর করে মাল্টা। সাধারণত মাল্টা বা কমলা কেটে বা ছিলে টুকরা করে খেতে দেখা যায়। মাল্টা রস করে খাওয়ারও প্রচলন আছে। এর বাইরে কমলা বা মাল্টার জ্যাম-জেলি বাসায় তৈরি করতে পারেন। সকালের নাশতায় পাউরুটির সঙ্গে একটু স্বাদ বদল তো হবেই, সঙ্গে প্রতিদিনের ভিটামিন সিটুকুও পাওয়া যাবে সহজে। মাল্টা বা কমলার রস দিয়ে বিভিন্ন রকম কেক তৈরি করে খেতে পারেন। এতে পরিবারের বাকিদেরও আগ্রহ বাড়বে। এ ছাড়া মাল্টার সস দিয়ে মুরগি ও গরুর মাংস রান্না করে খেতে পারেন।

আমলকীতেও বাড়তি কিছু
সর্দিতে প্রায় নাজেহাল অবস্থা! ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন? প্রতিদিন এক চামচ আমলকীর রস করে তার সঙ্গে একটু মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। উপশম হবে, পাবেন ভিটামিন সি। এ ছাড়া আমলকীর রস হজম ক্ষমতা বাড়ায় ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে। তাই আমলকী শুধু চিবিয়ে না খেয়ে আচার বা মোরব্বা তৈরি করে খেতে পারেন। মুগ ডাল রান্নার সময় তাতে যোগ করতে পারেন আমলকী। ভাতের সঙ্গে খেতে বসে চেনা স্বাদ বদলে যাবেই। শর্ষে দিয়ে মেখেও খেতে পারেন। ছোট মাছ চচ্চড়িতেও আমলকীর ব্যবহার চোখে পড়ে। এমনকি কাঁচা মরিচ, লবণ দিয়ে চাটনি করেও খাওয়া যায় এই সুস্বাদু ফল। এতে একঘেয়েমি দূর হবে, সঙ্গে পূরণ হবে ভিটামিন সি।

লেখক: পুষ্টিবিদ