বাড়িতে চলুক অ্যারোবিকস

নাচের মতো করে চলছে ব্যায়াম, এর নাম অ্যারোবিকস। মডেল: উষা, ছবি: কবির হোসেন
নাচের মতো করে চলছে ব্যায়াম, এর নাম অ্যারোবিকস। মডেল: উষা, ছবি: কবির হোসেন

লাফ দিয়ে উঁচুতে উঠে যাওয়া, আবার নিচে শুয়ে পড়া। কখনোবা পা চালাতে হচ্ছে শূন্যে। কখনো সুরে সুরে চলছে এসব। অভ্যস্ত নন, এমন কেউ দেখলে অস্বস্তিতে পড়বেন। কিন্তু এসব অঙ্গভঙ্গির প্রতিটিই একধরনের ব্যায়ামের অংশ। প্রতিটি ব্যায়ামের কিছু ভাষা আছে। বুঝতে পারলে করাটাও সহজ হয়ে যায়। অ্যারোবিকসের ক্ষেত্রেও তা–ই। সহজ থেকে কঠিন—অনেক ধরনের ব্যায়ামই খুঁজে পাওয়া যাবে অ্যারোবিকসে। 

অ্যারোবিকসের মধ্যে সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হলো হাঁটা। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতরানোও অ্যারোবিকসের মধ্যে পড়ে। একেবারে কম যন্ত্রপাতি, এমনকি যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করেও এই ব্যায়াম করা যায়। ১৭ বা ১৮ বছর বয়স থেকে শুরু করা যেতে পারে। তবে যেসব শিশুর বয়সের তুলনায় শারীরিক অবকাঠামো বাড়ন্ত, তারা ১৫ বছর বয়স থেকেও করতে পারবে। শরীরের বাড়তি চর্বি কমানোর পাশাপাশি শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়াকেও ঠিক রাখে। ফুসফুস, হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে। মনোবল বাড়াবে, কমাবে দুশ্চিন্তা ও অবসাদ। এখন যেহেতু বাইরে যাওয়া হচ্ছে না, বাড়ির ভেতরে একটু খোলা জায়গায় বা ছাদে এই ব্যায়ামগুলো করা যায়। তবে করার আগে ওয়ার্মআপ আবশ্যক। 

যাঁদের জন্য অ্যারোবিকস প্রথম, স্ট্যান্ড জগিং দিয়ে শুরু করতে পারেন। প্রথম দুই–তিন দিন পাঁচ মিনিটের মতো করুন। তাড়াহুড়া করার প্রয়োজন নেই। নতুন ব্যায়াম শরীরের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময়টাও দিতে হবে। কোনো ব্যায়ামই প্রথম দিকে দ্রুততার সঙ্গে করবেন না। ধীরে ধীরে বাড়ালেই হবে। 

কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াও করা যায় অ্যারোবিকস। মডেল: রিচি
কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াও করা যায় অ্যারোবিকস। মডেল: রিচি

জাম্পিং জ্যাকস, স্টেয়ার ট্রেইনিংও করা যাবে সহজেই। ১৫-২০ মিনিট সিঁড়ি দিয়ে ওঠা–নামা করতে পারেন, অবশ্যই ধীরে ধীরে। অভ্যাস হয়ে এলে দ্রুত ওজন কমাতে সহায়তা করবে। বাট কিক, মাউন্টেন ক্লাইমবার, বারপি, বিয়ার ক্রল, স্কোয়াট জ্যাকস, হাই নি, ডংকি কিক, প্ল্যাঙ্ক জ্যাকস, বক্স জাম্প, ইনভিজিবল জাম্পরোপ, কিক বক্সিং সবই অ্যারোবিকসের অংশ। গুগলকে (ইন্টারনেট) জিজ্ঞাস করলেই দেখিয়ে দেবে আপনাকে। নামগুলো শুনে ঢোক গেলার কারণ নেই। যেমন ইনভিজিবল জাম্পরোপ হচ্ছে দড়িলাফ। তবে এখানো হাতে দড়ি থাকবে না। শুধু মনে করতে হবে হাতে দড়ি আছে। এবার হাত ঘুরানোর ছন্দে লাফালেই হবে। যাঁদের বাড়িতে জায়গা নেই দড়ি দিয়ে লাফানোর জন্য, অনায়াসেই করতে পারেন। 

সকালের দিকে ব্যায়াম করা ভালো। না করতে পারলে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে করার চেষ্টা করুন। ভালো ফলাফল পাবেন। এই সময়ের ব্যাখ্যা হলো, ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় আমাদের শরীরের হরমোনগুলো শিখরে অবস্থান করে। 

পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ও পুষ্টিবিদ (ডায়েটিশিয়ান) শওকত আরা সাঈদার মতে, হৃদ্​রোগের সমস্যা আছে, পেসমেকার লাগানো আছে বা ওজন বেশি, অ্যারোবিকস করা থেকে দূরে থাকুন। কারণ, অ্যারোবিকসে বেশির ভাগ সময় লাফানোর কাজ থাকে। সে ক্ষেত্রে মাংসপেশিতে টান (মাসল ক্রাম্প) লাগার আশঙ্কা থাকে। হৃদ্​রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়। সাধারণত ৮০-১১৫ পর্যন্ত হৃৎস্পন্দন থাকাটা ভালো। পিঠে ব্যথা থাকলেও না করা ভালো।

প্রথম দিনে ৭-৮ ধরনের ব্যায়াম না করলেই ভালো। প্রথম দিকে স্ট্যান্ডিং জগিং, বাট কিক, মাউন্টেন ক্লাইমবার—এই ধরনের ব্যায়ামগুলো ১৫ মিনিট করে করতে পারেন। ধীরে ধীরে সময় বাড়ান। প্রথম দিন ৩০ মিনিট করার পর হাত-পায়ের ব্যথার জন্য পরের দিন আর কিছু করতে ইচ্ছা করবে না। প্রথম দুই সপ্তাহ ৩০ মিনিট, এরপর বাড়িয়ে ৪৫ মিনিটে নিন। কোনো কারণে হাতে ব্যথা থাকলে পায়ের ব্যায়াম করতে পারেন। ঘাড়ে ব্যথা থাকলে সে জায়গাটার ওপর চাপ না দিয়ে অন্য জায়গার ব্যায়াম করা যাবে।

অ্যারোবিকস তারকারা

অ্যারোবিকস মনোবল বাড়ায় এবং শারীরিকভাবে ফিট থাকার জন্য সহায়তা করে। এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যাঁরা, তাঁরা এই ব্যায়ামটিকে জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়েছেন। এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা অ্যারোবিকসের প্রশিক্ষক ছিলেন, পরবর্তী সময়ে খুব খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন। আবার এমনও আছেন, যাঁরা অ্যারোবিকস করেই বিখ্যাত হয়েছেন।

জেরাল্ড ফোল্ড

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড জীবনের একটা সময়ে ছিলেন অ্যারোবিকস প্রশিক্ষক। ১৯৪২ সালে ইউএস ন্যাভাল রিজার্ভে যোগদান করেন। নর্থ ক্যারোলাইনার চ্যাপেল হিলের উড়োজাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ স্কুলের অ্যারোবিকস প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন।

মিল্টন টিয়াগেল রিচার্ড সিমনস

মিল্টন টিয়াগেল রিচার্ড সিমনস যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় অ্যারোবিকস প্রশিক্ষক। তিনি ওজন কমানোর জন্য ‘সোয়োটিন টু দ্য ওল্ডিস’ নামে অ্যারোবিকস করার ভিডিওগুলো বানিয়েছেন খুব মজা করেই।

শেরিল স্যান্ডবার্গ

লিন ইন ডটঅর্গের প্রতিষ্ঠাতা এবং ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) শেরিল স্যান্ডবার্গও একসময় অ্যারোবিকসের প্রশিক্ষক ছিলেন। কাজের ক্ষেত্রে তাঁর পোশাক বদলে গেছে। তবে জীবনের সে সময় অ্যারোবিকসের কারণে মনোবল খুঁজে পেতেন তিনি। হাসতে ইচ্ছা না করলেও জোর করে হাসতেন। জীবনের এই সময়েও তিনি হাসার গুণটি ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

জেন ফন্ডা

হলিউড অভিনেত্রী জেন ফন্ডা আশির দশকের জনপ্রিয় অ্যারোবিকস প্রশিক্ষকদের একজন। শুধু তাঁর করা অ্যারোবিকসের ভিডিও দেখার জন্য অনেকে ভিসিআর কিনেছিলেন সেই সময়ে। জেন ফন্ডার করা ২৩টি অ্যারোবিকস ভিডিও আছে। সেগুলোর প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। ২০১০ সালে তিনি বয়স্কদের জন্য আরও দুটো ভিডিও বের করেন। তিনি এখন রাজনৈতিক কর্মী ও অভিনেত্রী।