শিশুর গ্রন্থি ফোলা

ছোট শিশুদের প্রায়ই শরীরের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে গলার দুই পাশের গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড ফুলে যায়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন মা-বাবারা। মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশে অনেক লিম্ফ নোড বা লসিকা গ্রন্থি রয়েছে। জীবাণু বা বাইরের কোনো বস্তুর প্রতি প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলাই গ্রন্থিগুলোর কাজ। শিশুরা নিত্যনতুন বাহ্যিক বস্তু, জীবাণু, খাবার, ধূলিকণা ইত্যাদির সংস্পর্শে আসে। ফলে গলা, কটিদেশ বা বগলের গ্রন্থি কখনো কখনো ফুলে যেতে পারে। এগুলো আবার নিজে নিজেই কমে যায়। ফলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে গ্রন্থি যদি বেশি ফুলে যায় এবং বেশ কিছু এলাকার গ্রন্থি একসঙ্গে ফোলে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এখন দেখা যাক কী কী কারণে গ্রন্থি ফুলতে পারে।

• ভাইরাসের সংক্রমণে গ্রন্থি ফুলতে পারে। সাধারণ ফ্লুতেও গ্রন্থি ফুলতে পারে। এর জন্য আলাদা কোনো চিকিৎসার দরকার হয় না।

• যে এলাকার গ্রন্থি ফুলেছে, সেই এলাকায় কোনো সংক্রমণ হয়েছে কি না তা দেখতে হবে। যেমন, কান পাকা রোগে কানের পেছনে, টনসিলাইটিসের কারণে গলার দুদিকে এবং দাঁত-মুখের সংক্রমণে চোয়ালের নিচের দিকের গ্রন্থি ফুলতে পারে। মাথার ত্বকে খোসপাঁচড়া হলে মাথার পেছন দিকে গ্রন্থি ফোলে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো ইনফেকশন বা প্রদাহ থাকলে সেই এলাকার গ্রন্থি ফুলে যায়। সাধারণত সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে জ্বর আসে, ফুলে যাওয়া গ্রন্থি ব্যথা করে। কখনো লালচে দেখায়।

• যক্ষ্মা রোগের কারণে বিভিন্ন জায়গায় গ্রন্থি ফুলতে পারে। একে বলে টিবি লিমফ্যাডিনাইটিস। অনেক সময় ফোলা গ্রন্থি পেকে পুঁজ বের হতে পারে। রাতে জ্বর, অরুচি, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকতে পারে।

• লিউকেমিয়া, লিম্ফোমার মতো রোগেও গ্রন্থি ফোলে। দীর্ঘদিনের জ্বর, কাশি, বারবার সংক্রমণ, ওজন কমে যাওয়া, হাড়ে ব্যথা, বিভিন্ন জায়গার গ্রন্থি বড় আকারে ফুলে যাওয়া হতে পারে এসব রোগের লক্ষণ।

কী করবেন

• সাধারণ ভাইরাস জ্বর বা কোনো সংক্রমণে অসুখ না সারা পর্যন্ত গ্রন্থি ফোলা থাকতে পারে। তাই চিন্তার কিছু নেই।

• দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, অরুচি, ওজন কমে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে যক্ষ্মার পরীক্ষা করতে হবে।

• গ্রন্থি যদি টানা ২ সপ্তাহ ধরে ক্রমাগত বড় হতে থাকে এবং ৪-৬ সপ্তাহ পরও ফুলে থাকে কিংবা ৮-১২ সপ্তাহেও স্বাভাবিক না হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

• শিশুর ওজন কমে যাওয়া, বারবার অসুস্থ হওয়া, হাড়ে ব্যথা, রক্তপাত ইত্যাদি সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ