রূপের গ্রীষ্মকাল

কৃষ্ণচূড়া চূড়ায় সাজে...ছবি: পল্লব মোহাইমেন
কৃষ্ণচূড়া চূড়ায় সাজে...ছবি: পল্লব মোহাইমেন

কাগজে-কলমে বসন্ত ঋতুরাজ হলেও মূলত পুষ্প উৎসবের ঋতু গ্রীষ্মকালকেও বলা যায়৷ এ মৌসুমে গাছে গাছে চটকদারি রঙের যে উন্মাদনা, তা অন্য ঋতুতে প্রায় অনুপস্থিত৷ সত্যি, গ্রীষ্মের পুষ্পবীথির রং এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো যায় না৷ চলুন গ্রীষ্মের এই পুষ্পরাজ্যে খানিকটা ঘুরে আসা যাক৷

লালসোনাইলের রূপও কম নয়
লালসোনাইলের রূপও কম নয়

গ্রীষ্মের পুষ্পতালিকায় প্রথম স্থান কৃষ্ণচূড়ার৷ ফুলটির রং এতই তীব্র যে অনেক দূর থেকেও চোখে পড়ে৷ সমকক্ষ এমন দূরভেদী আরেকটি ফুল শিমুল৷ কিন্তু কৃষ্ণচূড়া সে তুলনায় আরও বেশি আকর্ষণীয়৷ পত্রহীন ডালপালাজুড়ে ফুলের অবারিত উচ্ছ্বাস বিশাল এক পুষ্পস্তবকের মতো৷ ঢাকাসহ সারা দেশেই এই ফুল সহজদৃষ্ট৷ শেরেবাংলা নগরে ক্রিসেন্ট লেকের পাড়ে কৃষ্ণচূড়ার একটি সুদৃশ্য বীথি চোখে পড়ে৷ আরেকটি দীর্ঘ বীথি দেখা যায় রাঙামাটি শহরে৷ আবার হলুদ কৃষ্ণচূড়া দেখা যাবে ঢাকার ফুলার রোডে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভেতরে৷

সোনালু ফুলের হলুদ ছায়া
সোনালু ফুলের হলুদ ছায়া

চৈত্রের কয়েকটা দিন হাতে থাকতেই জারুল ফুটতে শুরু করে৷ গ্রীষ্মকে বর্ণিল করতে জারুলের অবদান অপরিসীম৷ একসময় গ্রামেও অঢেল ছিল, এখন সংখ্যায় কমেছে৷ ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও পথের পাশে বেশ কিছু গাছ চোখে পড়ে৷ সবচেয়ে বেশি গাছ দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায়৷ ইদানীং অবশ্য গ্রীষ্মে জ্যাকারান্ডার নীলচে বেগুনি রংও আমাদের প্রকৃতিতে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে৷ কৃষ্ণচূড়া ও সোনালুর সঙ্গে রঙের বৈপরীত্য সৃষ্টিতে জারুল অতুলনীয়৷
সোনালুর হলুদ-সোনালি রং কারোই দৃষ্টি এড়ায় না৷ এ ফুলের নামও অনেক: সোঁদাল, সোনাইল, বানরলাঠি৷ নান্দনিক এই পুষ্পতরু ঢাকায় আছে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রাঙ্গণ, সংসদ ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে৷ সংসদ ভবন প্রাঙ্গণের গাছটি সবচেয়ে দীর্ঘ৷ ফুল ডালপালা থেকে ঝাড়-লন্ঠনের মতো এমনভাবে ঝুলে থাকে, তাতে চারপাশ সোনালি আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে৷ গুলাচ পাতাহীন ডালপালা নিয়ে বসন্তের শেষ সময় পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকে৷ তারপর চৈত্রের শেষে দু-একটি ফুল ফুটতে শুরু করে৷ একসময় ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় গোটা গাছ৷ এ যেন গাছ নয়, বিশাল এক পুষ্পস্তবক৷ এদের অনেক রং: সাদা, লাল, গোলাপি, হলদেটে৷ রঙের মতো নামও বেশ কয়েকটি: কাঠগোলাপ, কাঠচাঁপা, গৌরচাঁপা, গরুড়চাঁপা, চালতাগোলাপ ইত্যাদি৷ ঢাকার বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সমানে কয়েকটি সুদৃশ্য গুলাচ চোখে পড়ে৷
গরমের শুরুতেই চারপাশ আলোকিত করে ফোটে কনকচূড়া৷ প্রায় সারা দেশেই এ গাছ দেখা যায়৷ সংসদ ভবনের খেজুরবাগান থেকে চন্দ্রিমা উদ্যান পর্যন্ত এই ফুলের দীর্ঘ একটি বীথি আছে৷

অনেকেই রাধাচূড়া ভাবলেও এর নাম অাসলে কনকচূড়া
অনেকেই রাধাচূড়া ভাবলেও এর নাম অাসলে কনকচূড়া

স্বর্ণচাঁপা এ মৌসুমের সুগন্ধি ফুল৷ ঢাকার বিভিন্ন পার্ক, উদ্যান ও পথের পাশে এই গাছ চোখে পড়ে৷ শাহবাগে বিক্রি হয় এই ফুলের তোড়া৷ গ্রীষ্মে ক্যাসিয়া জাভানিকা নামের একটি সুন্দর ফুলও ফোটে৷ এর বাংলা নাম লালসোনাইল৷ রং গোলাপি বা সাদাটে৷ হালকা সুগন্ধিযুক্ত৷ ঢাকায় চন্দ্রিমা উদ্যান, হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ, রমনা পার্কসহ অনেক উদ্যান ও পথের পাশে চোখে পড়ে৷ পাপড়ির ফুলগুলো সাদা ও সুগন্ধি৷
মাত্র এক দিনের ফুল পাদাউক৷ গ্রীষ্মের কোনো একদিন অসংখ্য হলুদ-সোনালি রঙের ফুলে গাছ ভরে যায়৷ পরের দিন আর ফুলের কোনো ছিটেফোঁটাও থাকে না৷ এমন আশ্চর্য ফুলটি দেখতে হলে গ্রীষ্মের সব দিন হেয়ার রোডের গাছগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে৷ বৈশাখের প্রথম ভাগেই রমনা নার্সাির ও শিশু একাডেমীর বাগানে পালামের লাল রঙের ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে৷ পাহািড় এই ফুল ঢাকায় বেশ দুর্লভ৷ আলোচিত এই ফুলগুলো আমাদের গ্রীষ্মকে অনেক বেশি ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে৷

সবুজের ওপর উঁকি দিয়েছে বেগুনি জারুল
সবুজের ওপর উঁকি দিয়েছে বেগুনি জারুল