ঘরের বাইরে সেহরি

বিশ্বকাপের খেলা দেখে বন্ধুরা এসেছেন সেহ্‌রি খেতে
বিশ্বকাপের খেলা দেখে বন্ধুরা এসেছেন সেহ্‌রি খেতে

‘বাসার বাইরে সেহ্রি খেতে কেমন লাগে, সেটা বুঝতেই এখানে এসেছি।’ বনানীর স্টার

সেহ্‌রিতে পরিবার নিয়ে বাইরে খাওয়া। ছবি: অধুনা
সেহ্‌রিতে পরিবার নিয়ে বাইরে খাওয়া। ছবি: অধুনা

হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে সেহ্রি খেতে আসার কারণটা এভাবেই জানালেন পল্লবীর ফারনাজ। সঙ্গে এসেছেন তাঁর স্বামী রকিব, বোন ওবায়দা, তাঁর স্বামী ফারহান। এবারই প্রথম বাইরে এসে সেহ্রি খাওয়া। সঙ্গে আছে পাঁচ বছরের ফাইয়াজও। রাত তখন দুটো পেরিয়ে গেছে। ফাইয়াজের থালায় চিকেন বিরিয়ানি। তোমার ঘুম পাচ্ছে? ‘মোটেও না।’ কেমন লাগছে? উত্তর না দিয়ে ফাইয়াজের মনোযোগ তখন খাবারে। তার মুখ দেখেই বোঝা গেল শেষ রাতের এই খাবার সে বেশ উপভোগই করছে।
রমজান মাসে রাতের বেলায় রেস্তোরাঁয় গিয়ে সেহ্রি খাওয়ার ব্যাপারটা গত কয়েক বছর হলো বেশ দেখা যাচ্ছে। এটা এখন এক নাগরিক অনুষঙ্গেই পরিণত হয়েছে। আর এই ধারায় গতি দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একা নয়, বরং পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের নিয়ে শেষ রাতের শেষ পাতে বসতে দেখা যায়। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোও ইফতার আয়োজনের পাশাপাশি সেহ্রির আয়োজনও রাখছে বেশ ঘটা করে। পুরান ঢাকার পাশাপাশি উত্তরা, বনানী, গুলশানেও মধ্যরাতের পর সেহ্রির আয়োজন বেশ জমজমাট।
বনশ্রী থেকে এসেছেন পাঁচ বন্ধু—সাইদুল ইসলাম, শাহনেওয়াজ, জারিফ, সায়ের ও রিফাত। সবাই ‘এ’ লেভেলের ছাত্র। সে রাতে (৫ জুলাই) ছিল বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা-বেলজিয়াম কোয়ার্টার ফাইনাল। একজনের পরনে আর্জেন্টিনার জার্সি। খেলা দেখেছেন? ‘হ্যা। আমরা সবাই একসঙ্গে খেলা দেখেছি। তারপর চলে এলাম।’ এবারে এই প্রথম? ‘না। এবার আরও দুইবার এসেছি সেহ্রি খেতে। সামনে আরও কয়েকবার বাইরে সেহ্রি খাব।’ কিশোর দলটির উত্তর।

.
.

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার জন্য এখনো সেহ্রির সময়ে ভিড় কিছুটা কম। তবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভিড়টা ভালোই হয়। রেস্তোরাঁর কর্মীরা জানালেন এ তথ্য। খাবারবিষয়ক ফেসবুক গ্রুপ ঢাকা ফুডিজের আশিকুর রহমান জানালেন, যেসব রেস্তোরাঁয় খেলা দেখানো হচ্ছে, সেসবে সেহ্রি খেতে আসা মানুষের সংখ্যাটা বেশি। গুলশান-২-এর ধানসিঁড়ি রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই ভেসে এল গ্যালারির শব্দ। রাত তখন তিনটা পেরিয়ে গেছে, চলছে বিশ্বকাপের শেষ কোয়ার্টার ফাইনালে হল্যান্ড-কোস্টারিকার খেলা। ধানমন্ডি থেকে খেতে এসেছেন সোহানা ও শাহীন দম্পতি। খাচ্ছেন, খেলাও দেখছেন। সোহানা বললেন, ‘বিশ্বকাপের খেলা চলছে, সেটা যাতে মিস না হয় আবার সেহ্রিও যাতে খাওয়া যায়, সে জন্য এখানে আসা। এবার আমরা এই প্রথম এলাম, আরও হয়তো কয়েকবার সেহ্রি খাওয়া হবে।’
মোটামুটিভাবে রাত একটা-দেড়টার পর থেকে রেস্তোরাঁগুলোতে শুরু হয় সেহ্রির আয়োজন। খোলা থাকে সেহ্রির শেষ সময় পর্যন্ত। খাবার তালিকায় থাকে নানা রকম বিরিয়ানি, মোরগ মোসাল্লাম, খাসির লেগ রোস্ট, গরুর মাংসের ভুনা, মাছের কোপ্তা, তরকারি নানা কিছু। সঙ্গে নানা রকম বোরহানি, লাবাং, মাঠা, শরবত, ফালুদা ইত্যাদি। একেক রেস্তোরাঁর মেন্যু একেক রকম। তবে সব রেস্তোরাঁতেই সাদা ভাত থাকছেই।
পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক, স্টার, বিসমিল্লাহ, নানা রেস্তোরাঁর মতো অনেকগুলো রেস্তোরাঁয় আছে সেহ্রির ব্যবস্থা। ঐতিহ্যবাহী খাবারের স্বাদ পেতে পুরান ঢাকার জুড়ি নেই। সেহ্রির আয়োজন রাখার ধারাটা এখন পুরো রাজধানীজুড়েই। উত্তরার ব্যাক ইয়ার্ড শেফ, বনানী-গুলশানের হোটেল ওয়েস্টিন, বিবিকিউ বাংলাদেশ, প্লাটার, নানদোস, হরীতকী; মগবাজারের ক্যাফে ডি তাজসহ বেশ কিছু রেস্তোরাঁয় আছে সেহ্রির আয়োজন। এসব আয়োজনে যেমন যাচ্ছেন তরুণেরা, তেমনি বয়স্কদেরও দেখা যাচ্ছে। পরিবার হলে সেখানে শিশুরাও থাকছে। শেষ রাতে চেখে দেখছেন মজার খাবার। সেহ্রির স্বাদ বদল করছেন মাঝেমধ্যে।