বাড়তি প্রসাধন ব্যবহারে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি!

.
.

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই কিশোরী-তরুণীদের মধ্যে প্রসাধনীর সাজ (মেকআপ) নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কারও আবার পছন্দ মেকআপে একেবারে পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে ফেলা। সচেতন অভিভাবকেরা আবার এ রকম চেহারা পাল্টে ফেলার মতো মেকআপের বিরুদ্ধে। যুক্তরাজ্যের একদল গবেষকও এবার মেকআপের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের প্রমাণ পেয়েছেন। তাঁরা বলছেন, অল্প বয়সে অতিরিক্ত মেকআপ করলে মেয়েদের ত্বকের নানা সমস্যা হতে পারে। পাশাপাশি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার ঘাটতি দেখা দেয়। 
ওয়ান পোল নামের একটি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যের ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী একদল কিশোরীর মেকআপ ব্যবহারের অভ্যাস নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে। এতে দেখা যায়, ওই কিশোরীদের প্রতি পাঁচজনের একজনই বাইরে বেরোনোর আগে পুরো মুখ মেকআপ করে।
নারীবিষয়ক ওয়েবসাইট ফিমেলফার্স্টের এক জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিশোরীদের মধ্যে দিনে অন্তত কয়েকবার নতুন করে মেকআপ নেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। ওই গবেষণায় অংশগ্রহণকারী কিশোরীদের ৪৬ শতাংশই এমনটা করে থাকে।
ত্বক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অল্প বয়সে অধিক মেকআপ ব্যবহার ত্বকের মারাত্মক ক্ষতি করে। মেকআপের উপাদানগুলো নানা রকম রাসায়নিক পদার্থের মিশ্রণে তৈরি। সবার ত্বকের সঙ্গে এগুলো খাপ খায় না। কারণ, একেকজনের ত্বকের বৈশিষ্ট্য একেক রকমের হয়ে থাকে। মেকআপের সংস্পর্শে তাৎক্ষণিকভাবে ত্বকের কোনো সমস্যা থাকলে তা প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি নতুন সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে।
মেকআপ ব্যবহারের ক্ষতি এখানেই শেষ নয়। কৃত্রিম প্রসাধনীর প্রভাবে ত্বকের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে। কারণ মেকআপের ফলে যে অবয়ব তৈরি হয়, তা আসল নয়। জেনেশুনেই কিশোরী-তরুণীরা এটি ব্যবহার করে। এতে তাঁদের মধ্যে হীনম্মন্যতা দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক, এ কারণে মনে হতে পারে সৌন্দর্যের ঘাটতি আড়াল করতেই মেকআপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অনেকটা ছদ্মবেশের মতো।
যুক্তরাজ্যে পরিচালিত অপর এক সমীক্ষায় দেখা যায়, মেকআপ নেওয়ার পর কিশোরীদের ৪০ শতাংশ সেটি তুলে ফেলতে ভুলে যায়। আর ৩৬ শতাংশ এটি তোলে না অলসতার কারণে। গবেষকদের মতে, কিশোরীদের জন্য বাড়তি মেকআপ ক্ষতিকর। কারণ, এটি ত্বককে শুষ্ক করে। এ ছাড়া মেকআপের কারণে ত্বকে জ্বালাপোড়ার অনুভূতিও দেখা দেয়।
অতিরিক্ত মেকআপ ক্ষতিকর বলে সব প্রসাধনীকেই খারাপ বলে মনে করার কারণ নেই। ত্বকের সুস্থতার জন্য অনেক প্রয়োজনীয় প্রসাধনীও রয়েছে। ত্বক বিশেষজ্ঞ ক্যারোলিন ফ্রেজার বলেন, ফেসওয়াশ ও ক্লিনসারের মতো কিছু প্রসাধনী রয়েছে, যেগুলো ত্বকের পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করে এবং দাগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার ধ্বংস নিশ্চিত করে। আর ময়েশ্চারাইজারসমৃদ্ধ প্রসাধনী ত্বকের আর্দ্রতা ঠিক রাখে। একই ধরনের প্রসাধনীর মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর রশ্মিরোধী উপাদান এসপিএফ। এটি সূর্যের আলোর অতিববেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। মাত্রাতিরিক্ত মেকআপ ত্বকের দাগ ও ক্ষত ঢেকে দেয়। কিন্তু নতুন দাগ সৃষ্টির জন্য ব্যাকটেরিয়াকে সুযোগ করে দেয়। তাই ত্বকের সুরক্ষায় কিশোরী-তরুণীদের মাত্রাতিরিক্ত মেকআপ নয় বরং ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। আর মানুষের স্বাভবিক সৌন্দর্যই সব সময় আকর্ষণীয়। কৃত্রিম মেকআপে সেটা আড়াল না করাই ভালো। আইএএনএস।