শুধু সময় দেখা নয়, সজ্জাও

.
.

একটা সময় ছিল, যখন সময় গণনা ও দিকনির্দেশনার জন্য সূর্য-চাঁদ ছিল ভরসা। পরে আবিষ্কৃত হয় ঘড়ি। কিন্তু এখন শুধু সময় দেখার প্রয়োজনেই ঘড়ির ব্যবহার হয় না। বর্তমানে ঘড়ি ফ্যাশনের একটি অনুষঙ্গও বটে।
মুঠোফোনে সময় দেখার ব্যবস্থা থাকায় এই শতাব্দীর শুরুর দিকে তরুণদের মধ্যে হাতঘড়ি পরার অভ্যাসটা কমে গিয়েছিল। তবে হাতঘড়িকে সেকেলে বলে সরিয়ে রাখার প্রবণতা আবার কমে আসছে দিন দিন। এখন প্রয়োজন আর ফ্যাশন—এ দুইয়ের মিশেল ঘটেছে হাতঘড়ি ব্যবহারে।
ঢাকার একজন শৌখিন ঘড়ি সংগ্রাহক শাহজামান মজুমদার। তাঁর সংগ্রহে রয়েছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৫০টির মতো ঘড়ি। তিনি বলেন, ‘ফ্যাশনের জন্য পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে ঘড়ি পরার অভ্যাস। তাই প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাই কোন ঘড়ি পরব। তেমন ঘড়িই পরি, যা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায়।’
আজকাল হাতঘড়ির ডিজাইনে তরুণ-তরুণীরা বেছে নিচ্ছেন মোটা চেইন আর বড় ডায়ালের ঘড়ি। তবে উঠতি বয়সীরা স্পোর্টস ঘড়ি পরতেই বেশি পছন্দ করেন। এসব ঘড়িতে সময় দেখার পাশাপাশি দিকনির্দেশনা, তাপমাত্রাসহ স্টপওয়াচের সুবিধা যুক্ত থাকে। ঘড়ির আদলেও এসেছে পরিবর্তন। চৌকোনা, ত্রিভুজ, ষড়ভুজ, আয়ত, ঢেউ তোলা—কী আকারে হয় না ঘড়ি। আর গোলাকার আদলের ঘড়ি তো রয়েছেই।
বাংলাদেশে ঘড়ির বাজারে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোই ভরসা। ব্র্যান্ড হিসেবে ক্যাসিও বা সিটিজেন একসময় জনপ্রিয় ছিল বেশি। কল্লোল গ্রুপের ঘড়ির দোকান ‘টাইম জোন’-এ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ঘড়ি বিক্রি করা হয়।
টাইম জোনের নিউমার্কেট শাখার কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ওমেগা, গুচি, ফাস্ট ট্র্যাক, সিকো, টাইটান, রোলেক্স, মনটেক্স, টিশট, ওয়েস্টার, সেলক্স, পিয়েরে কার্ডিন, লঙ্গিংস, ক্রিডেন্স প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ষোড়শ শতাব্দীর দিকে হাতঘড়ি পরতেন মূলত নারীরা। আর পুরুষেরা ব্যবহার করতেন পকেট ঘড়ি। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত অ্যানালগ ঘড়িই প্রচলিত ছিল। ১৯৬৯ সালে কোয়ার্টজ ঘড়ির আবিষ্কার হাতঘড়ি প্রযুক্তিতে নিয়ে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
ভবিষ্যতে ঘড়ির ব্যবহার
সুইজারল্যান্ডের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল লাক্সারি গ্রুপের এক গবেষণায় দেখা গেছে, চীনে ২০১৩ সালে নারীদের ঘড়ির বিক্রি বেড়েছে ৭ দশমিক ৫ ভাগ। নারীদের অভিজাত ঘড়ির চাহিদা ১৯৯৫ সালের চেয়ে ৩৫ ভাগ বেড়েছে। আর নারীদের তুলনায় পুরুষদের ঘড়ির চাহিদা কমে যাচ্ছে।
ফলে সুইস ঘড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো মনে করছে, ভবিষ্যতে নারীরাই ঘড়ি ব্যবহার করবেন বেশি। ওমেগা ব্র্যান্ডের কর্ণধার স্টেফেন উকুহার্ট বলেন, বর্তমানে ঘড়ি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানগুলো উঠেপড়ে লেগেছে, কীভাবে নতুন নতুন ডিজাইন দিয়ে নারী ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করা যায়।
সূত্র: ডিজিটাল লাক্সারি গ্রুপ, সুইজারল্যান্ড।

.
.

দরদাম এবং কোথায় পাবেন
রাজধানীর নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, বায়তুল মোকাররম, পাটুয়াটুলীসহ বিভিন্ন শপিং কমপ্লেক্সে হাতঘড়ির দোকান রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপহারসামগ্রীর দোকানে পাওয়া যাবে নানান বৈচিত্র্যের ঘড়ি। সাধারণত ব্র্যান্ড ও মানের ওপর নির্ভর করে ঘড়ির দাম। ব্র্যান্ডের ঘড়ি পাবেন দুই হাজার থেকে পাঁচ লাখ টাকায়। নন-ব্র্যান্ড কালারফুল রাবার, চেইন ও কাপড়ের বেল্টের বিভিন্ন ঘড়ির দাম পড়বে ২২০ থেকে ১০০০ টাকা। আর এলইডিযুক্ত ডিজিটাল ঘড়ির দাম ৩৫০ থেকে ৬৫০ টাকা।

.
.

পরামর্শ
১. বিক্রয়োত্তর সেবার কার্ডটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করুন।
২. শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে মুঠোফোন নিষিদ্ধ, তাঁদের ঘড়ি পরার অভ্যাস করা উচিত।
৩. ঘড়ি পানিরোধী (ওয়াটারপ্রুফ) না হলে, বর্ষা মৌসুমে হাতঘড়ি ব্যবহারে একটু সাবধানি হওয়া ভালো।
৪. যাঁরা মোটরসাইকেল চালান, তাঁদের হাতঘড়ি ব্যবহার করা ভালো। কারণ, চলন্ত অবস্থায় মুঠোফোন বের করে সময় দেখা বিপজ্জনক।
সূত্র: টাইমজোন ডটকম