হিবাকুশাদের ছবি দেখবে দুনিয়া

‘আগুনের দরিয়ায় দিয়ে দৌড়ে আমি বাড়ির দিকে ছুটি’। শিল্পী: ইয়োশিকো মিচিতসুজি। ১৯৭৪। ছবি: বিবিসি
‘আগুনের দরিয়ায় দিয়ে দৌড়ে আমি বাড়ির দিকে ছুটি’। শিল্পী: ইয়োশিকো মিচিতসুজি। ১৯৭৪। ছবি: বিবিসি

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকার হয়ে বেঁচে থাকা মানুষদের বোঝাতে হিবাকুশা অভিধাটি ব্যবহার করে থাকে জাপানিরা। ভয়াবহতম এই হামলার বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা নিয়ে ছবি এঁকেছেন হিবাকুশারা। জাপানে সে সব ছবির অনেক প্রদর্শনী হলেও এবারই প্রথম বহির্বিশ্বে প্রদর্শনী হতে যাচ্ছে তাঁদের আঁকা ছবির। বিবিসি অনলাইনের খবরে এ কথা জানানো হয়।

‘নারী ও শিশুর মূর্তি’। শিল্পী: ইয়াসুকো ইয়ামাগাতা। ১৯৭৪। ছবি: বিবিসি
‘নারী ও শিশুর মূর্তি’। শিল্পী: ইয়াসুকো ইয়ামাগাতা। ১৯৭৪। ছবি: বিবিসি

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শতবর্ষ উপলক্ষে ‘দ্য সেনসরি ওয়ার ১৯১৪-২০১৪’ শিরোনামের এক প্রদর্শনীতে স্থান পাচ্ছে পারমাণবিক বোমা হামলার শিকারদের আঁকা ১২টি নির্বাচিত ছবি। এটাই জাপানের বাইরে হিবাকুশাদের আঁকা ছবির প্রথম প্রদর্শনী। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার আর্ট গ্যালারিতে আগামী ১১ অক্টোবর থেকে এই প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে। চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত।

‘হাসপাতাল’। ১৯৭৩-৭৪। শিল্পী: ফুমিকো ইয়া। ছবি: বিবিসি
‘হাসপাতাল’। ১৯৭৩-৭৪। শিল্পী: ফুমিকো ইয়া। ছবি: বিবিসি

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে মানব ইতিহাসের যে নিষ্ঠুরতম অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল, তা যেন অনেকটাই মূর্ত হয়ে উঠেছে হিবাকুশাদের আঁকা শক্তিশালী এবং চেতনায় আঘাত হানা সব ছবিতে।

আগুনের লেলিহান শিখা থেকে পালাতে থাকা মানুষ, পারমাণবিক মেঘে ঢেকে যাওয়া দিগন্ত, মাটিতে সূর্য নেমে আসার মতো তাপে তৃষ্ণায় পানি পানি বলে মানুষের আর্তনাদ, পারমাণবিক দূষণের কালো বৃষ্টিতে ভেজা মানুষের অসহায় হাহাকার, শিশুকে কোলে নিয়ে ছুটতে ছুটতেই পুড়ে পাথরমূর্তি হয়ে যাওয়া মা, হামলার পর মাটিতে মিশে যাওয়া নগরের অবশেষ, অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা-দুনিয়ায় নরক নেমে আসা সেই দিনের এমন সব খণ্ড খণ্ড চিত্র ফুটে উঠেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের আঁকা এসব ছবিতে।

‘পারমাণবিক মরুতে আলোর ঝলক’। শিল্পী: গিসাকু তানাকা। ১৯৭৩-৭৪। ছবি: বিবিসি
‘পারমাণবিক মরুতে আলোর ঝলক’। শিল্পী: গিসাকু তানাকা। ১৯৭৩-৭৪। ছবি: বিবিসি

১৯৭০-এর দশকে জাপানের জাতীয় টেলিভিশন এনএইচকের অনুরোধে এসব ছবি আঁকেন পারমাণবিক হামলার শিকার নারী-পুরুষেরা। ১৯৭৪ সালের মধ্যে প্রায় দুই হাজার ছবি জমা পড়েছিল এনএইচকের আহ্বানে। সেখান থেকে নির্বাচিত ছবি নিয়ে প্রথম প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল হিরোশিমা পিস মেমোরিয়াল মিউজিয়ামে। পরে হিরোশিমা ও নাগাসাকিসহ জাপানের বিভিন্ন শহরে এসব ছবির প্রদর্শনী হয়।

‘আগুনে পোড়া নগর, পেছনে কালো মেঘ’। শিল্পী: গোরো কিয়োইয়োশি। ১৯৭৩। ছবি: বিবিসি
‘আগুনে পোড়া নগর, পেছনে কালো মেঘ’। শিল্পী: গোরো কিয়োইয়োশি। ১৯৭৩। ছবি: বিবিসি

আয়োজকেরা জানান, ‘শিল্পীরা কীভাবে মানুষের শরীর, মন, পরিবেশ এবং মানবিক অনুভূতিতে যুদ্ধের অভিঘাতকে দেখেছেন’ তা তুলে ধরাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শততম বার্ষিকীতে এই প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। যুক্তরাজ্যে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মারক এবং এ-সম্পর্কিত শিল্পকর্মের সংগ্রহের আরেকটা বড় অংশই রয়েছে ম্যানচেস্টার আর্ট গ্যালারিতে।

‘ইয়োকোগাওয়া সেতুর কাছে নদীতে লাশের স্রোত’। শিল্পী: মাসাহিকো নাকাতা। ১৯৭৩-৭৪। ছবি: বিবিসি
‘ইয়োকোগাওয়া সেতুর কাছে নদীতে লাশের স্রোত’। শিল্পী: মাসাহিকো নাকাতা। ১৯৭৩-৭৪। ছবি: বিবিসি

জাপানের হিরোশিমা নগরে ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের বোমারু বিমান এনোলা গে থেকে ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমাটি ফেলা হয়েছিল। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ৬০০ মিটার উচ্চতা থেকে বোমাটি ফেলে মার্কিন বৈমানিকেরা। এতে তাৎক্ষণিকভাবেই প্রায় ৬০ থেকে ৮০ হাজার মানুষ মারা য়ায়। পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজারে। আর আগস্টের ৯ তারিখে পাশের শহর নাগাসাকিতে ফেলা হয় ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের আরেকটি পারমাণবিক বোমা। এর ছয় দিন পরই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণ করে জাপানি বাহিনী।