তাঁকে দেখলে শক্ত হয়ে যাই

অধ্যাপক মেহতাব খান
অধ্যাপক মেহতাব খান

সমস্যা 
আমি প্রায় ১২ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত। মানসিক রোগের ওষুধ খাচ্ছি। আমার বয়স এখন তিরিশের ওপরে । আমার একটা কাজের প্রয়োজন। কিন্তু রুটিনমাফিক কোনো কাজ করতে পারি না। আমি কীভাবে জীবন কাটাব?
সপ্তম (ছদ্মনাম)

পরামর্শ
তোমার কী ধরনের মানসিক অসুস্থতা রয়েছে তা বলোনি। কিছু কিছু অসুখ আছে যেগুলোতে আক্রান্ত হলে প্রায় সারা জীবনই ওষুধ সেবন করতে হয়। যেমন, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে বেশি মাত্রায় শর্করা থাকলে সব সময় ওষুধ খেয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ঠিক তেমনই মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষার দ্বারা মানসিক রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও ওষুধের প্রয়োজন হয়। কিছু অসুস্থতা রয়েছে যেগুলো তেমন তীব্র নয়। সে ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ সেবনেরও প্রয়োজন হয় না। অনেক সময় শুধু সাইকোথেরাপি বা কাউন্সেলিংয়ের সেবা নিয়েও সুস্থ থাকা সম্ভব। গত ১২ বছরে তুমি কখনো কাউন্সেলিং সেবা নিয়েছ কি না বা যেভাবে মনোরোগ চিকিত্সক পরামর্শ দিয়েছেন, সেভাবে তাঁর কাছে নিয়মিত গিয়েছ কি না, তা জানলে ভালো হতো। যেকোনো মানসিক রোগ বিভিন্ন চাপমূলক পরিস্থিতিতে বেড়ে যায়। সে জন্য কাউন্সেলিং সেবা নিয়মিত গ্রহণ করে চাপ সামলানোর দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন হয়। তুমি যে কিছু করার কথা ভাবছ, সেটি সত্যিই খুব প্রশংসনীয়। তবে নিজেকে আগে সুস্থ রাখা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তুমি যদি নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে কাউন্সেলিং সেবা নাও, তাহলে ভালো হয়।

সমস্যা
আমার বিভাগের এক সহকর্মীকে খুব ভালো লাগে। কিন্তু কখনো তাঁকে বলিনি। তবে তিনি সম্ভবত ব্যাপারটা বোঝেন। আমি তাঁর সামনে গেলে একদম স্বাভাবিক হতে পারি না। ভীষণ নার্ভাস হয়ে যাই। ভয় লাগে। কথা বলতে পারি না। অন্য কারও বেলায় এটা হয় না। আমি একটু লাজুক। কিন্তু তাঁর সামনে গেলে অবস্থা খুবই খারাপ হয়। আমি অনেক চেষ্টা করেছি ব্যাপারটা কাটিয়ে ওঠার। কিন্তু পারিনি। মেডিটেশন শুরু করেছি। অটোসাজেশন দিই নিজেকে। তার পরও ঠিক হচ্ছে না। আমার সঙ্গে তাঁর কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই, কর্মক্ষেত্রে স্রেফ দেখা-সাক্ষাৎ ছাড়া। তাঁর সঙ্গে আমার কাজেরও তেমন সম্পর্ক নেই। তার পরও মাঝে মাঝে তো দেখা হয়ই। তখন ভীষণ নার্ভাস লাগে। তাঁকে দেখলে শক্ত হয়ে যাই। বারবার মনে হয় আমার আবেগ প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে। মনে হয় আমি ধরা পড়ে যাচ্ছি। ভীষণ ছোট মনে হয় নিজেকে। রাগ হয় নিজের ওপর। তার দিক থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া নেই। তাঁর সামনে সহজ, সাবলীল ও স্বাভাবিক থাকতে চাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, চট্টগ্রাম।
পরামর্শ
তুমি এবং তোমার সহকর্মী অবিবাহিত কি না তা লেখোনি। আমি ধরে নিচ্ছি, তোমরা দুজনেই এখনো অবিবাহিত। যদি তা-ই হয় বা না-ও হয়, তার পরও কাউকে ভালো লেগে যাওয়ার ব্যাপার তো ঘটতেই পারে। তুমি কি ভেবে দেখেছ ভালো লাগার আবেগটিকে লুকিয়ে রাখার জন্য তুমি এত যুদ্ধ কেন করছ নিজের সঙ্গে? যদি তোমার কিছু অভিব্যক্তিতে সেটি এই ভদ্রলোকের কাছে প্রকাশিত হয়েই যায়, তাতে তোমার কি অসুবিধা হতে পারে?
তুমি লিখেছ, নিজেকে তোমার ছোট মনে হয়। তুমি তো ইচ্ছে করে নিজের এই অনুভূতি তৈরি করোনি, এটি মনের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এসেছে। অনুভূতির মধ্যে তো কোনো সঠিক বা ভুল ব্যাপার নেই। এটি পুরোপুরি আমাদের হাতেও থাকে না। তোমার মধ্যে কি এমন কোনো মূল্যবোধ বা বিশ্বাস রয়েছে যে একটি মেয়ের কোনো অধিকার নেই একতরফাভাবে কাউকে ভালোবাসার?
শুধু ছেলেরাই প্রথমে তাদের ভালো লাগার কথা বলবে? মেয়েটি তখন হ্যাঁ বা না বলবে?
তুমি নিজের ওপরে রাগও করছ এই আবেগটি অনুভব করার জন্য। এটি কিন্তু নিজের প্রতি বড় ধরনের অবিচার। সহকর্মীটি তোমার মনোভাব বুঝতে পেরেও যে কোনো প্রতিক্রিয়া করছেন না, তাতে তোমার কী মনে হচ্ছে সেটি ভেবে দেখতে পারো। আর তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন না থাকলেও তুমি কিন্তু নিজেকে একটি স্বাধীন মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তার সঙ্গে স্ব-উদ্যোগেই পরিচিত হতে পারো, তাই না?
এতে করে তোমার দুর্বলতা যদি কিছুটা প্রকাশ পায়, সে জন্য সংকুচিত হবার একেবারেই কোনো কারণ নেই। তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি। বরং এই ভালো লাগার মধ্যে পবিত্রতা ও সৌন্দর্য দুটোই রয়েছে। সহকর্মীর সঙ্গে একটি সহজ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশন অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.