পদোন্নতি না পেলে কী করবেন?

পদোন্নতির ক্ষেত্রে  কর্মীর কর্মদক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা ও প্রয়োজনটাও বিবেচ্য। ছবিটি প্রতীকী।
পদোন্নতির ক্ষেত্রে কর্মীর কর্মদক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা ও প্রয়োজনটাও বিবেচ্য। ছবিটি প্রতীকী।

পেশাজীবনে পদোন্নতির প্রত্যাশা সবারই থাকে। কিন্তু সব সময় সবার কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি না-ও হতে পারে। প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উপযুক্ততা বিবেচনা করে কাউকে কাউকে পদোন্নতি দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে  কর্মীর কর্মদক্ষতা, বিশ্বাসযোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক তেমনি প্রতিষ্ঠানের সার্বিক অবস্থা ও প্রয়োজনটাও বিবেচ্য। এই দুইয়ে দুইয়ে চার না মিললে অনেক ক্ষেত্রে হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে কাঙ্ক্ষিত পদোন্নতি। কিন্তু পদোন্নতিবঞ্চিত ব্যক্তি যদি হতাশ হয়ে পড়েন, তাহলে মুশকিল। এ সময় নিজেকে সামলে সঠিক পরিকল্পনা করতে পারাটাই পেশাদারির পরিচয়। তা না করতে পারলে পেশাজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যক্তিজীবনেও হতাশা, উদ্বেগ আর অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। তাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটা জরুরি।  

তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া
পদোন্নতির বিষয়ে ‘না-সূচক’ খবর শুনে অপ্রস্তুত হয়ে যান অনেকেই। ক্ষোভে ফেটে পড়েন, হতাশায় মুষড়ে পড়েন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সবাই আপনাকে লক্ষ করছে। আপনি যে পদোন্নতি-প্রত্যাশী সে বিষয়টি সহকর্মীরা কম-বেশি সবাই জানেন। মুহূর্তের অপেশাদার মনোভাব, বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ আপনার সম্পর্কে ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে। আপনার দীর্ঘদিনের সুনাম বিনষ্ট করতে পারে। তাই তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে আত্মনিয়ন্ত্রণ বজায় রাখুন। ব্যক্তিত্ব অক্ষত রেখে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি নিয়ে ভাবুন। প্রয়োজনে একান্ত শুভাকাঙ্ক্ষী সহকর্মীর  সঙ্গে কিছু সময় কথা বলে বিষয়টিকে হালকা করার চেষ্টা করুন।

অন্যদের অভিনন্দন জানান

নিঃসংকোচে অন্যদের অভিনন্দন জানান। আপনার চেয়ে উঁচু পদের হোক বা নিচু পদের, যাঁরাই পদোন্নতি পেয়েছেন, তাঁদের সবাইকেই অভিনন্দন জানান। নিজ বিভাগের বাইরে অন্যদেরও খোঁজ নিন, শুভেচ্ছা জানান। অফিসের পরিচিত অনেকেই নিজে থেকে আপনার কাছে তাঁদের খবর নিয়ে আসতে পারেন। সবাইকে হাসিমুখে অভিনন্দিত করুন। নিজের বিষয়ে হীনমন্যতায় ভোগার কিছু নেই। কারণ, পদোন্নতি না পাওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনার দীর্ঘদিনের অর্জন বৃথা হয়ে গেছে। তাই কর্মস্থলের অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে কথাবার্তায় যেন আপনার ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ না থাকে।

ভারসাম্য বজায় থাক

ব্যক্তিজীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ পেশাজীবন। আমাদের সারা দিনের বেশির ভাগ সময়ই কাটে কর্মক্ষেত্রে, পেশাগত ব্যস্ততায়। তাই দিন শেষে আপনার হাসিমুখ দেখা থেকে পরিবারের অন্যরা যাতে বঞ্চিত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখুন। কর্মক্ষেত্রের নেতিবাচক কোনো বিষয় যেন পরিবারের অন্যদের প্রভাবিত না করে। স্বাভাবিক সম্পর্ক বা যোগাযোগে যেন ভাটা না পড়ে। প্রয়োজনে পরিবারের ঘনিষ্ঠজনকে নিজে থেকেই বিষয়টি জানিয়ে দিতে পারেন। এতে আপনি চাপমুক্ত হবেন, স্বাভাবিক থাকবেন। দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন সহজে।

বসের সঙ্গে বোঝাপড়া

বসের কাছ থেকে সময় চেয়ে নিন। বিনয়ের সঙ্গে আপনার প্রত্যাশা ও না-পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করুন। নম্রভাবে প্রকৃত কারণটি জানতে চান। পুনর্বিবেচনার সুযোগ না থাকলে নিজের যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতার ফিরিস্তি না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অবস্থা, পরিকল্পনা এবং নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন। প্রশ্নের উত্তরেই আপনার প্রতি বসের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হবে। পেশাজীবনে উন্নয়নের জন্য কোন কোন বিষয়ের প্রতি সজাগ থাকা দরকার, এসব বিষয় তিনি বলতে চাইলে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়টিও নিয়ে আসুন বসের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে। এতে আপনার আগ্রহ প্রকাশ পাবে। ভবিষ্যত্ পরিকল্পনায় তিনি আপনাকে কীভাবে রাখতে চান সেটাও জেনে নিতে চেষ্টা করুন। তাহলে আপনার জন্য নিজের বিষয়ে পরিকল্পনা করাটাও সহজ হবে।

নিজে বুঝুন, নিজেকে বোঝান

ঠান্ডা মাথায় আত্ম-মূল্যায়নে মনোনিবেশ করুন। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন। প্রয়োজনে কাগজে লিখে ফেলুন। বিগত ছয় মাস থেকে এক বছরে প্রতিষ্ঠানের কী কী কাজ সফলভাবে করেছেন, তার একটা তালিকা তৈরি করুন।  পাশাপাশি যা করতে পারেননি, তা-ও লিখে ফেলুন। এই কাজগুলো করতে পারা না-পারার মাঝে নিজের ভুলগুলো উঠে আসবে। সঙ্গে সঙ্গে নিজের শক্তিগুলোও আরেকবার অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। কারণ আপনিই সবচেয়ে ভালো জানেন আপনি কী পারেন এবং কী করেছেন বা কী করতে পারেননি। মিলিয়ে দেখুন আরও কী কী করা দরকার ছিল। এবার নিরপেক্ষভাবে ভেবে দেখুন আপনার কতটুকু প্রাপ্য ছিল, আর কতটুকু বঞ্চিত হয়েছেন।

পরিকল্পনা থেকে প্রস্তুতি

আত্ম-মূল্যায়ন শেষে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাবই আপনাকে তাগিদ দেবে নতুন করে শুরু করার। হতে পারে সেটা আগের প্রতিষ্ঠানেই কিংবা অন্যত্র। প্রতিষ্ঠানের অবস্থা ও কর্তৃপক্ষের মনোভাবেই বোঝা যাবে এই বছরটি আপনার জন্য কতটুকু সুগম। ভুলগুলো শুধরে এখানে কাজ করলে কত দূর যাওয়া সম্ভব, তা-ও ভেবে দেখুন। ইতিবাচক সম্ভাবনা থাকলে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। তা না হলে কর্ম-পরিবেশ ও পেশার পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনায় আনুন। উন্নতির অন্তরায় যদি আপনি নিজে না হয়ে এসব পারিপার্শ্বিক অবস্থা হয়, তাহলে তো চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে বসুন, নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করুন এখনই।