মুখের দুর্গন্ধ তাড়াতে

জীবনযাপনে কিছু অভ্যাসের নিয়মিত চর্চাই মুখে বা নিঃশ্বাসে গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তির সবচেয়ে ভালো সমাধান। ছবিটি প্রতীকী।
জীবনযাপনে কিছু অভ্যাসের নিয়মিত চর্চাই মুখে বা নিঃশ্বাসে গন্ধের সমস্যা থেকে মুক্তির সবচেয়ে ভালো সমাধান। ছবিটি প্রতীকী।

মুখ থেকে বাজে গন্ধ বেরোচ্ছে এটা শুনতে কারওরই ভালো লাগার কথা না। আর যাঁর মুখে গন্ধ হচ্ছে তাঁকে তা বলাটা সম্ভবত আরও কঠিন কাজ। তবে কেউ যদি এই কঠিন কাজটা করেই ফেলেন তাহলে তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা প্রয়োজন। প্রকৃত বন্ধু বলেই হয়তো তিনি আপনার এই উপকার করলেন। কিন্তু তারপর? মুখের গন্ধ থেকে মুক্তির উপায় কী? আর মুখে গন্ধ হয়ই বা কেন?

এটা কি সাময়িক, না দীর্ঘদিনের?
প্রথমেই খেয়াল করা দরকার মুখে গন্ধ হওয়ার বিষয়টি কি সাময়িক না কি দীর্ঘদিন ধরেই এটা হচ্ছে। অনেক সময় খাবারদাবার থেকেও মুখে গন্ধ হতে পারে। পেঁয়াজ ও বাঁধাকপির মতো বেশি পরিমাণে সালফার জাতীয় উপাদানসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে সাময়িকভাবে মুখে গন্ধ হতে পারে। এসব খাবার হজমের পর রক্তধারার সঙ্গে সালফারটুকু ফুসফুসে চলে যায়। এরপর কথা বলা ও নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সময় তা বেরিয়ে আসে এবং মুখে গন্ধ হয়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করেই মুখে এমন সাময়িক গন্ধ এড়িয়ে চলা সম্ভব। এ বিষয়ে জেনে নিন হেলথ মি আপ অবলম্বনে এই প্রতিবেদনে।

ক্রনিক হেলিটোসিস
শ্বাস ফেলার সময় বা কথা বলার সময় মুখ থেকে বাজে গন্ধ বের হওয়ার বিষয়টা যদি দীর্ঘদিন ধরেই চলতে থাকে তাহলে বুঝতে হবে ঘটনাটা গুরুতর। আমাদের মুখে নানা ব্যাকটেরিয়া থাকে। বিশেষত জিহ্বার ভেতরের দিকটায়। মুখের ভেতর থেকে যাওয়া খাদ্য ভেঙে সেগুলোকে বিশেষ সালফার যৌগে পরিণত করে কিছু ব্যাকটেরিয়া। মুখে বা নিঃশ্বাসে গন্ধের একটা বড় কারণ এই ‘ভিএসসি’ বা ভোলাটাইল সালফার কম্পাউন্ডস। এ থেকে মুক্তি পেতে ‘ক্লোরিন ডাইঅক্সাইড’ সমৃদ্ধ মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। তবে, জীবনযাপনে কিছু অভ্যাসের নিয়মিত চর্চাই এই সমস্যা থেকে মুক্তির সবচেয়ে ভালো সমাধান।

পর্যাপ্ত পানি পান
নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের জন্য শুধু উপকারীই না, এটা প্রয়োজনীয়। শুকনো মুখেই ব্যাকটেরিয়াগুলো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর পানি খেলে গন্ধযুক্ত বিশেষ সালফার যৌগ অনেকটাই পানিতে মিশে যায়। ফলে গন্ধও কমে।

দাঁত মাজুন, ফ্লস ব্যবহার করুন

দিনে এক থেকে দুইবার ফ্লস দিয়ে দাঁতের গোড়া পরিষ্কার করার অভ্যাস করতে পারেন। বিশেষত দুপুরে ও রাতে ভারী খাবারের পর। নিয়মিত দাঁত মেজে মুখ পরিষ্কার রাখা তো সব সময়ই জরুরি। এ দুটো অভ্যাস রপ্ত থাকলে মুখে কখনোই বেশি গন্ধ হওয়ার কথা না।

মুখের রোগের চিকিৎসা

দাঁত বা মাড়িতে কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে কি না, খেয়াল করুন। দন্ত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে মুখ পরীক্ষা করে আসুন। দাঁত, মাড়ি, তালু বা জিহ্বায় কোনা সংক্রমণ থেকেও মুখে বাজে গন্ধ হতে পারে।

তাজা সবজি ও ফল খান

মৌসুমি তাজা ফল ও সবজি চিবিয়ে খান। এতে শরীরে যেমন প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান হবে তেমনি তা মুখের গন্ধও দূর করবে। ফল-সবজি খেলে মুখে স্যালাইভা প্রবাহ বাড়ে বলে মুখ ভেজা থাকে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দুর্বল হয়ে যায়।

কফি খাওয়া কমান

বেশি বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সেটা কমান। কফি জিহ্বার ওপর এমন একটা প্রলেপ ফেলে দেয় যা অক্সিজেনের চলাচল বন্ধ করে দেয় এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ক্যাফেইন প্রয়োজন হলে আপনি চা পান করুন।

চিনিহীন চুইং গাম

মুখের গন্ধ থেকে বাঁচতে তাৎক্ষণিক সমাধান হিসেবে চুইং গাম চিবাতে পারেন। মুখের ভেতরটা ভেজা রেখে স্যালাইভা প্রবাহ চালু রাখতে সাহায্য করবে এটা। তবে, চিনি আছে এমন মিন্টজাতীয় গাম না চিবানোই ভালো।

দই খান

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, দিনে একবার কিছুটা দই খাওয়া হজমে সহায়ক এবং তা মুখ থেকে এমন গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করে। মুখের এমন ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও খুবই সহায়ক দই।

ভিটামিন প্রয়োজন

ভিটামিন-ডি মুখের এমন ব্যাকটেরিয়ার জন্য ক্ষতিকর। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারদাবারে ভিটামিন-ডি আছে। আর সূর্যালোক তো আছেই। ভিটামিন-সির পর্যাপ্ত জোগানও আপনার মুখ সতেজ রাখবে। আর এ দুটো ভিটামিন মুখে গন্ধের সমস্যার পাশাপাশি আপনার মুখের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধেও প্রয়োজনীয়।

তামাক সেবন ছাড়ুন

সিগারেটই হোক বা জর্দা দেওয়া পান। যেকোনো তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন মুখে গন্ধসহ অনেক ধরনের রোগ হতে পারে। ফলে, এমন অভ্যাস থাকলে সেটা ত্যাগ করুন।