গরমে শীতল হাওয়া

পাখার চাহিদা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
পাখার চাহিদা বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

‘ঘাম ঝরে দরদর গ্রীষ্মের দুপুরে/মাঠঘাট চৌচির জল নেই পুকুরে’ শৈশবে পাঠ্য এই পঙ্ক্তিমালার সঙ্গে বেজায় মিলে যাচ্ছে এখনকার দিনগুলো। বরং গরমের দাপট এখন আরও প্রবল। কেবল দুপুরেই নয়, মাঝরাতেও শরীর ঘামে ভিজে ওঠে মাথার ওপর ফ্যান বন্ধ হয়ে গেলে। আর বন্ধ যে হচ্ছে না তা তো নয়। বিদ্যুৎবিভ্রাট অতীতের চেয়ে কমলেও লোকজন একেবারে এই যন্ত্রণা থেকে নিষ্কৃতি পাননি। এমন মুহূর্তে যে জিনিসটির কথা সবার আগে মনে পড়ে সেটি হলো হাতপাখা।
পাখা বলতে একসময় হাতপাখাকেই বোঝাত। তালপাতার তৈরি হাতপাখা এখন দুর্লভ না হলেও হাত বাড়ালেই পাওয়া যাবে এমন সুলভও না। এর অনেক কারণের মধ্যে একটি দেশে তালগাছের পরিমাণ কমে যাওয়া, অন্য প্রধান কারণটি হলো প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বিকল্প হিসেবে নানা প্রকারের বৈদ্যুতিক পাখার বহুল প্রচলন। বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে যে সাময়িক অসুবিধা, তা আসান করতেও বাজারে এসেছে ব্যাটারিচালিত ‘চার্জার পাখা’।
বৈদ্যুতিক পাখা হাতে পাখা হাঁকানো, ঘোরানো বা টানার ক্লেশ কমিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বিলুপ্তি ঘটেছে একটি জীিবকারও। অফিস-আদালতে ‘পাঙ্খাপুলার’ বা ‘পাঙ্খাবরদার’ বলে একটি পদ ছিল ব্রিটিশ-পাকিস্তান পর্বে। আদালত, এজলাস বা বিভিন্ন দপ্তরে ‘টানাপাখা’র চল ছিল সেকালে। ঘরের ছাদের সঙ্গে আংটা দিয়ে লালসালুর ঝালরে কিনার মোড়ানো সপ বা পাটি ঝুলিয়ে রাখা হতো। তার সঙ্গে যুক্ত থাকত লম্বা রশি। দূরে বসে সেই রশিতে মৃদুমন্দ টান দিয়ে পাঙ্খাবরদারেরা ঘরে শীতল হাওয়া দিতেন। আরও আগে পাঙ্খাবরদারেরা রাজা-বাদশাহদের শীতল করতেন ময়ূরপুচ্ছের পাখা বা চমর দুলিয়ে। এসব এখন রীতিমতো ঐতিহাসিক নিদর্শনের তালিকাভুক্ত। আমজনতার ভরসা ছিল তালপাতা আর সূচিকর্মখচিত হাতপাখার ওপর। প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে তারও এখন যাই যাই দশা।
গরমে এখন পাখার ব্যবসা রমরমা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ও বায়তুল মোকাররম মার্কেটের ইলেকট্রনিক সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা গেল দেশি-বিদেশি বিচিত্র আকার–আকৃতির বৈদ্যুতিক পাখার সমারোহ। স্টেডিয়াম মার্কেটের অপু ইলেকট্রনিকসের ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম জানান, ছাদে ঝোলানো তিন ব্লেডের পাখার মধ্যে দেশে তৈরি ন্যাশনাল, যমুনা, বিআরবি, সুপারস্টার, ভিশনের দাম ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। পাকিস্তানের জিএফসি, পাক, ওসাকা, ভারতের খৈতান, বাজাজ, হ্যাভেলস প্রভৃতির দাম ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৬ হাজার টাকা। ব্লেডগুলো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি চার ও পাঁচ ব্লেডের পাখার দাম ৪ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
টেবিল বা স্ট্যান্ড পাখার দাম ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে। প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ব্লেডের পাখার দাম দেড় হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। চার্জার ফ্যান আছে ২ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এগুলো ব্যাটারির শক্তি অনুসারে ৩ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত একটানা চলতে পারে। এক্কেবারে মিনিয়েচার ধরনেরও পাখা পাওয়া যায় চার থেকে ছয় শ টাকায়।
কেবল রাজধানী নয়, সারা দেশেই এখন হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় এসব পাখা। কাজেই মাঝরাতেও যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় তবে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পাখা ঘোরানোর ক্লেশ আর সইতে হবে না। প্রযুক্তি কত ক্লেশ-বিড়ম্বনা থেকেই না মুক্ত করেছে জীবনকে।