আমিও যাব...

বাইরে গেলে শিশুর আরামের বিষয়টিও নিশ্চিত করুন। ছেলে তাকদিসকে নিয়ে মডেল হয়েছেন তাসরিবা। ছবি: নকশা
বাইরে গেলে শিশুর আরামের বিষয়টিও নিশ্চিত করুন। ছেলে তাকদিসকে নিয়ে মডেল হয়েছেন তাসরিবা। ছবি: নকশা

সকালবেলায় নাশতা করে পোশাক বদলে বাবাকে বাইরে যেতে দেখলেই খুশি হয়ে ওঠে রায়ান। বাবা বাইরে যাবেন মানেই তো তাকেও বেড়াতে নিয়ে যাবেন। ছটফটে ভাব, মুখের হাসি সবটাই মিলিয়ে যায় বাবা যখন তাকে টাটা দিয়ে একাই বেরিয়ে পড়েন। কান্না থামানোই মুশকিল তখন।
বাইরে বেড়াতে শিশু যতই পছন্দ করুক, চাইলেও তো তাকে নিয়ে যখন-তখন বের হওয়া যায় না। নতুন মা হয়েছেন তানজিলা। সারা দিনের জন্য ঢাকার আশপাশে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। সাত মাসের মেয়ে আরিয়াহ এই প্রথম এভাবে বেড়াতে যাবে। বেড়ানোর খুশির সঙ্গে কিছুটা চিন্তাও যোগ হয়েছে। রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত ছোট বাচ্চাকে নিয়ে কীভাবে বাইরে থাকবেন, কী খাওয়াবেন—এসব নিয়েই ভাবছেন। এত কিছুর পর শেষে বেড়ানোটাই না বাদ হয় তাঁদের।
বেড়াতে বের হলে ছোট শিশুর যত্ন এবং মায়েদের প্রস্তুতির বিষয়ে নানা পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের শিশুবর্ধন ও পারিবারিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফাতেমা আফরোজ। তিনি বলেন, ‘নতুন মায়ের সব সময়ের চিন্তা সন্তানকে নিয়ে। কীভাবে তার যত্নআত্তি ঠিকমতো নেওয়া যায়, তাকে সুস্থ রাখা যায় সব সময়। এ সময়ে নিজের দিকে মনোযোগটা কমই থাকে। এমনকি সন্তানের সুস্থতার কথা ভেবে বেড়াতে যাওয়া তো দূরের কথা, তাঁরা বাসা থেকেই বের হতে চান না। কিন্তু এই মায়েদের হাসিখুশি থাকার জন্য তাঁদের মাঝে মাঝে বেড়াতে যাওয়াটাও জরুরি।’
শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হওয়ার আগে ভাবুন কীভাবে দীর্ঘ সময়ের জন্য তাকে স্বস্তিতে রাখবেন। প্রথমেই একটি ব্যাগ আলাদা করে ফেলুন শিশুর জন্য। তার আরামদায়ক জামাকাপড়, পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়াপার, ভেজা টিস্যু (ওয়েট টিস্যু), দু-তিনটি রুমাল, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যাগে ভরে ফেলুন। যেখানে যাবেন, সেখানে যেন শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর পরিবেশ থাকে, সেটা খেয়াল রাখুন। আর যে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি বাইরের দুধ খাওয়ানো হয়, তার জন্য বাসা থেকে বিশুদ্ধ পানি নিতে হবে, যেন প্রয়োজন অনুযায়ী তার খাবার তৈরি করে দেওয়া যায়। সেই সঙ্গে খাওয়ার পানিও বাড়ি থেকেই নিয়ে যেতে হবে। যেসব শিশু বাড়তি খাবার খাওয়া শুরু করেছে, তাদের সারা দিনের খাবার বাসা থেকে তৈরি করে হটপটে নেওয়া যেতে পারে। সেটা হতে পারে খিচুড়ি, সুজি, পায়েস কিংবা ভাত। বিকেলের নাশতা হিসেবে পাউরুটির টোস্ট, নুডলস, কর্নফ্লেক্স, ডিম সেদ্ধ, পুডিং, ফিরনি, সেমাই—এককথায় শিশু যা খেতে পছন্দ করে, সেই রকম খাবার নেওয়া যেতে পারে। শুকনা খাবারের মধ্যে বিস্কুট-কলা রাখতে পারেন। লেবু, মালটা, আনার—এই ফলগুলোর রস করে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। দু-এক রকমের খাবার সঙ্গে থাকলে শিশু খাবার ঠিকমতো খেলে বেড়ানোটা তার জন্য হয়ে উঠবে উপভোগ্য। আসলে সন্তানের খাওয়া নিয়ে মা-বাবা এত উদ্বিগ্ন থাকেন যে, সে ঠিকমতো না খেলে তাঁদের বেড়ানোর আনন্দও ফিকে হয়ে যায়।
শিশু যদি ঘামে, তাহলে তাকে একটু পরপর নরম রুমাল দিয়ে মুছে দিতে হবে। গরমের সময় ইচ্ছা করলে পানিতে রুমালটা ভিজিয়ে মুখ-ঘাড়-হাত মুছে দিতে পারেন, তাতে শিশু সতেজ অনুভব করবে। ছয় মাস থেকে এক বছরের শিশুরা চোখের সামনে যা পায়, তা-ই মুখে দিতে চেষ্টা করে। তাই কোনো ক্ষতিকর জিনিস তাদের হাতের সামনে রাখা উচিত নয়। শিশুর পছন্দের দু-একটি খেলনা সঙ্গে নিতে পারেন। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যাগে রাখুন। শিশুকে খাওয়ানো বা পোশাক পরিবর্তনের আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার করে নিন।