নান্দনিক খাবার টেবিল

টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ। মডেল: অহনা, প্রমা ও মাহা। ছবি: কবির হোসেন, কৃতজ্ঞতা: গুলশান নাসরীন চৌধুরী
টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ। মডেল: অহনা, প্রমা ও মাহা। ছবি: কবির হোসেন, কৃতজ্ঞতা: গুলশান নাসরীন চৌধুরী

খাবারটা খুব ভালো করে রাঁধলেন। খেতেও হলো সুস্বাদু। এতেই শেষ? পরিবেশনটা সুন্দর না হলে যে আট আনাই মিছে হয়ে যাবে। পরিপাটি পরিবেশনায় অতিথির মনটাও ভরে উঠবে। খাবার টেবিলটাকেও সেজে উঠতে হবে নান্দনিক সাজে।

টেবিল সাজানোতে এখন যুক্ত হয় নানা অনুষঙ্গ। এসবের ব্যবহারে খাবার টেবিল পায় ভিন্ন এক মাত্রা। এখন তো আবার পারিবারিক বা সামাজিক উৎসবের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে খাবার টেবিলের পরিবেশনাটাও বদলে যায়। এ ছাড়া দিন বা রাতের পরিবেশনার ব্যাপারও আছে। দিনে একরকম, রাতে আবার অন্য রকম টেবিলসাজ। শুধু খাবারঘরেই নয়, ঘরের লবি, বারান্দা বা ছাদজুড়েও থাকে খাবার পরিবেশনার আয়োজন।

টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ।
টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ।

যেমনটা সাজবে উৎসবের দিন
বাড়িতেই হয়তো আয়োজন করা হলো এক অনুষ্ঠানের। অতিথি আপ্যায়নের কতই না আয়োজন। কিন্তু খাবার টেবিলটা যদি থাকে সাদামাটা, তাহলে পুরো আয়োজনই যেন পানসে হয়ে যায়। বিশেষ দিনে খাবার টেবিলে কীভাবে আনবেন উৎসবের আমেজ, সেই বিষয়ে জানালেন রেডিয়েন্ট ইনস্টিটিউটের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার গুলশান নাসরীন চৌধুরী।
অনেক দিন ধরেই টেবিল টপে রানারের ব্যবহার চলছে। গোলাকার বা লম্বা আকৃতিটা যা-ই হোক না কেন, পুরো টেবিলে রানারের ব্যবহারেই ফুটে ওঠে উৎসবের আমেজ। বললেন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। অনেক বাড়িতেই দেখা যায় খাবারের টেবিলের ওপরের (টপ) অংশটা স্বচ্ছ কাচের। এ জন্য একরঙা, যেমন সাদা বা ঘিয়ে রঙের কাপড়ে গাঢ় রঙের সুতার নকশার কাজ করা রানার ব্যবহার করতে পারেন। পুরো রানারে থাকতে পারে ফুলেল মোটিফ। চাইলে রানারের দুই ধারে সুতার ঝালরও বসিয়ে নিতে পারেন।
খাবার পরিবেশনের জন্য ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছ সিরামিকের বাসনকোসন। বৈচিত্র্য আনতে চার কোনা প্লেট নির্বাচন করার কথা বললেন গুলশান নাসরীন চৌধুরী। সঙ্গে যোগ করলেন, বাসনকোসন সাদা বা স্বচ্ছ হলে প্লেসম্যাট বা টেবিলম্যাটে থাকতে পারে গাঢ় কোনো রং। ন্যাপকিন রাখার ধারায়ও আনতে পারেন নতুনত্ব। যেমন ন্যাপকিন ভাঁজ করে তা রেখে দিতে পারেন কাচের গ্লাসে। ফুল ছাড়া যেন উৎসবের আয়োজনটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ফুলের পাশাপাশি খাবার টেবিলে রুপার ফুলদানি আর মোমের শো-পিস আনতে পারে আভিজাত্যের পরশ।

বাজেট কি কম?
ভাবছেন সুন্দর করে খাবার টেবিল সাজানোর জন্য বাজেট বুঝি অনেক বেশি। তা নয়। চাইলে ঘরে যা যা আছে, সেসব তৈজস দিয়েই নান্দনিক ভাব আনতে পারেন টেবিলে। এমনটাই জানালেন অ্যাসথেটিক্সের ইন্টেরিয়র ডিজাইনার সাবিহা কুমু। মাটির তৈজসেই হতে পারে অতিতি আপ্যায়ন। এসব তৈজস আজকাল কমবেশি সব বাড়িতেই থাকে। তবে উপস্থাপনায় যেন থাকে ভিন্নতা। যেমন: রানার আর টেবিলম্যাটটা হতে পারে মাদুরের। রানারের পাড় থেকে একটি রং বেছে নিয়ে সেই রঙের কাপড়ের ন্যাপকিন রাখতে পারেন মাদুরের ন্যাপকিন হোল্ডারে। টেবিল সাজাতে দামি কোনো কিছু নয়, বরং ফ্রুট কার্ভিংয়ে আনতে পারেন নান্দনিকতা। যেমন: একটি পেঁপের ঝুড়ি বানিয়ে নিন। এবার ঝুড়ির মধ্যে বরবটি ঢুকিয়ে কাঠি দিয়ে গেঁথে দিতে পারেন পেঁয়াজ, বরবটি আর গাজরের ফুল। কিছু গাজরের ছোট ছোট ফুল টুথপিক দিয়ে লাগিয়ে দিন পেঁপের গায়ে।

দেশি পণ্যে বাহারি টেবিলসাজ
দেশি পণ্যে বাহারি টেবিলসাজ

চায়ের টেবিলে
অতিথি আপ্যায়নে বৈঠকখানার চায়ের টেবিলের জুড়ি মেলা ভার। চায়ের টেবিলে হালকা আয়োজনের নাশতাই পরিবেশনার গুণে হয়ে উঠতে পারে অনন্য। খাবারটা তেলে ভাজা হলে জুলিয়ান কাটে কাটা কিছু গাজর আর পেঁপে ছড়িয়ে দিন প্লেটে। শসা, গাজর ও লেটুসপাতার তৈরি পাখি রাখতে পারেন টেবিলে। যে পাত্রে খাবার পরিবেশন করবেন, সেখানেই একটি বড় চামচের মধ্যে সস ঢেলে দিন। কোনো পানীয় পরিবেশনের বেলায় ট্রের পাশাপাশি প্লেট ব্যবহার করতে পারেন। ট্রে সাজাতে রাখতে পারেন কমলার ঝুড়ি। এর ভেতরে ছড়িয়ে দিন আনারের লাল দানা। বিভিন্ন ধরনের রং-বেরঙের মোমের ব্যবহার করতে পারেন এখানেও। একটা গ্লাসে পানি দিয়ে রাখতে পারেন তাজা ফুল আর সবুজ পাতা। একচিলতে বারান্দায়ও এভাবেই করতে পারেন চা পানের আয়োজন।

টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ।
টেবিলসাজে উৎসবের আমেজ।

ছাদেও চলুক আপ্যায়ন
বাসাবাড়ির ছাদেও এখন থাকে অতিথি আপ্যায়নের আয়োজন। ছাদে প্রায়ই এ ধরনের আয়োজন করে থাকেন সাঈদা আহমেদ আর হাসান তারেক দম্পতি। সাঈদা আহমেদ জানান, এখনকার বাসাবাড়ির ঘরগুলো তো বেশ ছোট হয়ে থাকে। স্থানের অভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘরের ভেতর এ ধরনের আয়োজন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ছাদটা তো ফাঁকাই পড়ে থাকে। তাই টিনের ছাউনি বা খড় দিয়ে ছাদের মধ্যে খাবার পরিবেশনার আয়োজন করা যেতে পারে। বসার জন্য মাদুর বিছিয়ে দিতে পারেন মেঝেতে। তবে বিশেষ দিনে তো টেবিল-চেয়ারের আয়োজন লাগবেই। টেবিল-চেয়ারের নকশায় থাকতে পারে শৈল্পিকতার ছোঁয়া। যেমন বসার ঘরের চেয়ারে যোগ করতে পারেন টেরাকেটার নকশা। টেবিল সাজাতে রং-বেরঙের মোম, ফলের ঝুড়ি, গাছের ডাল আর নানা ফলের সমন্বয়ে আনতে পারেন নান্দনিকতার পরশ।