বাঙালির ছয় পদ: অণিমা রায়

নিজের হাতেই লুচি-লাবড়া-পায়েস রাঁধেন সংগীতশিল্পী অণিমা রায়। ছবি: সুমন ইউসুফ
নিজের হাতেই লুচি-লাবড়া-পায়েস রাঁধেন সংগীতশিল্পী অণিমা রায়। ছবি: সুমন ইউসুফ

মা ছিলেন না বাড়িতে সেদিন। বাবাকে খুশি করার জন্যই রান্নাঘরে ঢোকা। বেশ উৎসাহ নিয়েই খাসির মাংস রেঁধে ফেলেছিলেন। বিপত্তি বাধে খাওয়ার সময়। মুখে দিয়ে বোঝা গেল খাসির মাংস অর্ধেক সেদ্ধ হয়েছে। ভালোভাবে রান্না হতে যে অনেক সময় লাগে, এই তথ্য পরে জেনেছিলেন। সংগীতশিল্পী অণিমা রায় জীবনে প্রথম রান্নার স্মৃতি তুলে ধরলেন এভাবেই। আধা সেদ্ধ খাসির মাংস পরে বাবাই ঠিকমতো রান্না করে দিয়েছিলেন।

বাড়িতে ঢুকতেই বোঝা গেল জম্পেশ রান্নার আয়োজন চলছে। বাইরে চলছে ঝুম বৃষ্টি। একটু পরই টেবিলে গরম গরম লুচি-লাবড়া পরিবেশন করলেন অণিমা রায়। উৎসবের সময় কী ধরনের রান্না করে থাকেন, সেটা জানতেই হাজির হয়েছিলাম তাঁর বাড়িতে। গল্পচ্ছলে অণিমা রায় বলেন, ‘আমাদের উৎসবগুলো পূজাকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। কালীপূজা ছাড়া সব পূজাতেই সাধারণত নিরামিষ রান্না হয়। পূজা মানেই খিচুড়ি খাওয়া। তাতে বাদাম থাকত অনেক পরিমাণে। নারকেল থাকত। ছোটবেলায় খিচুড়ি থেকে খুঁজে খুঁজে নারকেল আর বাদাম খাব, এটাই অনেক উপভোগ্য মনে হতো।’

অণিমা রায় মনে করেন, রান্না উপলব্ধির বিষয়। পুরোপুরিভাবে হাতে-কলমে শেখা যায় না। বড়দির হাতের রান্না বেশি পছন্দ করেন। তাঁর কাছ থেকেই রান্না শেখার চেষ্টা করেন। তবে উৎসবের দিনগুলোতে নিজের হাতেই খুন্তি তুলে নেন। বর্ণিল খাবারদাবারের আয়োজনে তৈরি রান্নাগুলোয় বিশেষ কিছু ব্যবহার করছেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘প্রতিটি রান্নার মধ্যেই চিনি ব্যবহার করেছি। খাবারগুলো জম্পেশ করার জন্যই এই চিনির ব্যবহার; খাবারকে মিষ্টি করার জন্য না। এটা বরং স্বাদটাকে একট বাড়িয়ে দেয়। আমি রান্নায় স্বাদ লবণ ব্যবহার করি না। চিনিটা স্বাদ লবণের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করে ফেলে।’

লাবড়া
লাবড়া

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের উপাদানগুলো হাতের নাগালের মধ্যেই পাওয়া যায় বলে মনে করেন তিনি। লাবড়ার মধ্যে যে সবজিগুলো থাকে, সেগুলো আমাদের নিজস্ব সবজি-মিষ্টিকুমড়া, আলু, মিষ্টি আলু, কাঁচকলা, বেগুন প্রভৃতি। বেগুন দেওয়া হয় একটু জম্পেশ করার জন্যই।

লাবড়া
মিষ্টিকুমড়া, কাঁকরোল, কাঁচা পেঁপেসহ সব সবজি এক মাপে কাটতে হবে। এরপর সবজিগুলো সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার কড়াইতে তেল দিয়ে পরিমাণমতো তেজপাতা, দারুচিনি, এলাচি, আদাবাটা, আস্ত জিরা, পাঁচফোড়ন ও শুকনা মরিচ দিন। মরিচ গুঁড়া, হলুদ গুঁড়া, ধনে গুঁড়া ও চিনি দিয়ে কষিয়ে নিতে হবে। এবার সবজিগুলো দিয়ে কষাতে থাকুন। একটু মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে নিন। এর আগে ঘি, গরমমসলার গুঁড়া ও জিরার গুঁড়া দিয়ে দিন।

পায়েস
পায়েস



পায়েস
দুধ জাল দিয়ে তার মধ্যে তেজপাতা, গরমমসলা ও চিনি দিয়ে দিন। এবার চাল দিয়ে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। পছন্দমতো ঘন হয়ে এলে নামিয়ে নিন। পরিবেশনের সময় ওপরে বাদাম দিয়ে নিতে পারেন।

আলুর দম

আলুর দম
আলুর দম


মাঝারি আকারের ১০টা আলু মাঝখান দিয়ে কেটে সেদ্ধ করে নিন। এরপর আলুর খোসা ছাড়িয়ে রাখুন। এবার তেল গরম করে স্বাদমতো তেজপাতা, এলাচি, দারুচিনি, আস্ত জিরা, আধা চামচ মরিচ, আধা চামচ হলুদ, ধনে গুঁড়া আধা চামচ ও পরিমণমতো চিনি দিয়ে নাড়তে থাকুন। এবার আলুগুলো ছেড়ে পানি দিয়ে একটু কষিয়ে নিন। একটু মাখা মাখা চেহারা হয়ে এলে স্বাদমতো গরমমসলা ও জিরার গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে রাখুন।

লুচি
লুচি

লুচি
ময়দার সঙ্গে চিনি ও বেকিং পাউডার মিশিয়ে নিন। এবার ঘি ও বেশি করে তেল দিয়ে ময়ান করে দুই-তিন ঘণ্টা রেখে দিন। তেল যত বেশি হবে, ময়ানটা তত ভালো হবে। এবার গোল করে বেলে নিয়ে তেলে ভেজে ফেলুন।

বেগুন ভাজি
বেগুন ভাজি



বেগুন ভাজি
প্রথমেই বেগুনগুলো গোল করে কেটে নিতে হবে। এবার টুকরাগুলো হলুদ গুঁড়া, লবণ ও চিনি দিয়ে মাখিয়ে নিন। ফ্রাইপ্যানে তেল গরম করে তার মধ্যে বেগুনগুলো ছেড়ে দিন। একদিক ভাজা হলো তা উল্টে দিন। এতে করে বেগুনের টুকরাগুলো ভাজার পরও তেলতেলে ভাব হবে না। আবার অল্প তেলেই ভাজা হয়ে যাবে।

বুটের ডাল
বুটের ডাল

বুটের ডাল
২৫০ গ্রাম বুটের ডাল সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন। এবার কড়াইয়ে তেল গরম করে তেজপাতা, শুকনা মরিচ, এলাচি, দারুচিনি, আদাবাটা, আস্ত জিরা ও ধনে দিন। একটু কষিয়ে ভেজানো ডালগুলো দিন। ডাল কষে যাওয়ার পরে তিন কাপ পানি দিতে হবে। পানি এমন পরিমাণে দিতে হবে, যাতে করে ডাল ভেঙে না যায়। নামিয়ে নেওয়ার আগে গরমমসলার ও জিরার গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে নিন।