বেফাঁস কথা বলে বিপাকে?

বেফাঁস কথা বললে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। ছবি: অধুনা
বেফাঁস কথা বললে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। ছবি: অধুনা

‘সেময় মনে হয়েছিল মাটি যদি দুই ফাঁক হয়ে যেত তবে আমার বড় উপকার হতো। অন্তত তার ভেতর ঢুকে এমন লজ্জা থেকে বাঁচতাম!’ পুরোনো সে কথা মনে করে হাসতে হাসতে এভাবেই বলছিলেন সরকারি চাকরিজীবী খায়রুল হক। চাকরিতে তখন সবে তাঁর দ্বিতীয় বছর। একদিন মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে কয়েকজন সহকর্মী গল্প করছেন, কথাপ্রসঙ্গে বসের ‘টাকমাথা’ চলে আসে। ‘মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড...’ বলতেই সবাই একদম চুপ, পেছন ফিরে দেখেন বস কিছুটা রাগ, কিছুটা হতাশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন। তিনি বলেন, ‘এমন বেফাঁস কথা বলেছিলাম বলে আজ খুব লজ্জা লাগে, আর এখন দেখ আমার নিজেরই টাকমাথা।’
বেফাঁস সব কথা বলে ফেঁসে যাওয়ার ঘটনায় অনেকেই লজ্জায় পড়েছেন। কেউ কেউ রীতিমতো বিপদ ডেকে এনেছেন। দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ফাটল ধরার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এ থেকে বাঁচার উপায় দুটি। প্রথমত, বেফাঁস কথা বলা বাদ দিতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে যেন মুখ ফসকে এমন কিছু বেরিয়ে না যায়, যা পরিবেশকে ভারী করে তুলবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্রী এমন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার কৌশল জানতে হবে। এ ব্যাপারে জীবনযাপনভিত্তিক সাময়িকী রিয়াল সিম্পল-এর প্রশ্নের উত্তরে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ তাঁদের দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তর দিয়েছেন। এতেই গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পাওয়া যায়।
মজার কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন
‘আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তিন বাক্যে কিছু বলুন, দেখি আমি প্রতিষ্ঠানটির নাম আন্দাজ করতে পারি কি-না?’ অথবা কোনো বিষয়ে তাঁদের মত জানতে চাইতে পারেন। যেমন, ‘আমার বন্ধু বলছে, এই গাছটি বড়জোর ১৫ ফুট উচ্চতার হবে। আমি মনে করে ১০ ফুটের বেশি না। আপনার কী মনে হয়?’ পরিস্থিতি বিবেচনা করে এমন মজার কিছু করতে পারেন যাতে পরিবেশটা হালকা হয়ে আসে। উপস্থিত লোকজন যেন নতুন কিছু ভাবার বা আলোচনার বিষয় পান। এমনটাই জানিয়েছেন দ্য আর্ট অব মিংলিং লেখিকা জিনি মারটিনেট।

তাই বলে কাউকে এড়িয়ে যাওয়া নয়
এদিকে নিউইয়র্ক পাবলিক রেডিওর অনুষ্ঠান সঞ্চালক অ্যানা সেল বলেন, কাউকে এড়িয়ে যাওয়া কোনো কাজের কথা না। তাই হুট করে নতুন কোনো বিষয়ে কথা শুরু করার আগে শেষ কথাটা থেকে শুরু করতে পারেন। হয়তো এমন কিছু, ‘আপনি যা বলতে চাচ্ছেন তা বুঝেছি। এবার অন্য প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।’ এরপর হয়তো শুরু করতে পারেন, ‘আপনার মেয়ের খবর কী? শেষবার যখন দেখেছিলাম তখন সে মাত্র পাঁচ বছরের এক শিশু।’

বিরতি দিন, কথা গুছিয়ে নিতে পারেন
কথার পিঠে কথা বললেই সমস্যার সমাধান হয় না। আর তাই পোলিশ ইয়োর পইজ উইথ মাদাম চিক বইয়ের লেখিকা জেনিফার স্কট কথার মধ্যে বিরতি দেওয়ার পক্ষপাতী। পরের বাক্য কী বলবেন তা ভেবে নিন। ‘আমি যেন কী বলছিলাম?’ বা ‘কেন যেন বলছিলাম?’ জিজ্ঞেস করে অন্যের কথা আগে শুনুন। এই ফাঁকে নিজের কথা গুছিয়ে ফেলতে পারেন। এবং অবশ্যই পরিকল্পনা করে নেবেন। কারণ আলোচনার ধারা পরিবর্তনের চেয়ে শুরুটা এমনভাবে করা ভালো যেন আপনি যেভাবে চাচ্ছেন সে পথেই কথা এগোতে থাকে।

কখন থামতে হয় তা জানতে হবে
কোনো কিছু নিয়ে ‘ত্যান্যা প্যাঁচানো’ যাবে না। আপনার ভালো লাগছে না, আপনি উঠে চলে যান। তবে সেটা যেন অবশ্যই ভদ্রভাবে হয় বলে এক সাক্ষাৎকারে জানান, দ্য অকওয়ার্ড হিউম্যান সারভাইভ্যাল গাইডের সহলেখক অ্যাডাম ডাচিস। ‘আমার গলাটা শুকিয়ে আসছে’ কিংবা ‘আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল, তবে আমার আবার একটু কাজ পড়ে গেছে, পরে কথা হবে’ এ ক্ষেত্রে উপযুক্ত। অবশ্য ক্ষুধা-তৃষ্ণার কথা বললে কেউ আপনার সঙ্গে আসতে চাইতে পারে, যেমন, ‘চলুন আমিও একটু খাব’। সেসব ক্ষেত্রে ‘আমাকে একটি জরুরি ফোন কল সারতে হবে’ বলে উঠে আসতে পারেন, কেউ আপনার পিছু নেবে না।

ক্ষমা চাইতে জানতে হবে
ক্ষমা করা যেমন মহৎ গুণ, কিছু কিছু সময়ে ক্ষমা চাওয়াটাও মানবিক গুণের মধ্যেই পড়ে। হয়তো বেফাঁস কিছু বলেই ফেলেছেন। সেটা ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই, কাটিয়ে ওঠারও সুযোগ নেই। সে ক্ষেত্রে সরাসরি ক্ষমা চাইতে পারেন। ‘আমি জানি, এমনটা বলা একদমই উচিত হয়নি, এ জন্য খুবই দুঃখিত।’ খুব কম মানুষ আছেন যাঁরা আপনার এমন সরল স্বীকারোক্তি মেনে নেবেন না।

ক্ষমা করতেও শিখতে হবে
মনে করুন ব্যাপারটা উল্টো। কেউ আপনার সম্পর্কে উচিত নয় এমন কিছু হুট করে বলেই ফেলল। আপনিও বুঝতে পারছেন যে এ কথাগুলো তিনি বলতে চাননি, নিদেনপক্ষে আপনার সামনে বলতে চাননি। কিন্তু বলার পর সে লজ্জিত। সেসব ক্ষেত্রেও না শোনার ভান করে নতুন কিছু নিয়ে কথা শুরু করতে পারেন। আবার তাঁকে আগেই থামিয়ে দিতে পারেন। মানব যোগাযোগ বিষয়ের ব্লগার এলেন ভ্রানা যেমন লিখেছেন, ‘সে কি প্রেসিডেন্ট ওবামা? পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নেওয়ার আগেই তাঁকে থামিয়ে দিন।’
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে শেখা। এক পরিবেশে যে কথাটি প্রযোজ্য, অন্য পরিবেশে তা-ই অনুপযুক্ত হতে পারে। আর তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমস্যা সামাল দেওয়াই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।