ফাগুন লেগেছে মনে মনে

প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে পয়লা ফাল্গুনে সময় কাটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে! মডেল: রাজ ও নাজিফা, পোশাক: লা রিভ, সাজ: হারমনি স্পা, ছবি: কবির হোসেন
প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে পয়লা ফাল্গুনে সময় কাটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী আছে! মডেল: রাজ ও নাজিফা, পোশাক: লা রিভ, সাজ: হারমনি স্পা, ছবি: কবির হোসেন
পোশাক: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা
পোশাক: বিশ্বরঙ বাই বিপ্লব সাহা

বসন্ত প্রায় এসে গেছে। কোকিলের কুহু কুহু ডাকে মুখরিত চারদিক। শুধু কি কোকিল? বসন্তের প্রথম আর ভালোবাসার দিনটিকে তরুণ–তরুণীরাও তো মুখরিত করে রাখেন। সকাল থেকে জুটি বেঁধে বা দলবল নিয়ে চলতে থাকে ঘোরাঘুরি৷
এই সময়ে একই সঙ্গে অনেক উৎসব চলছে। বইমেলা, বিভিন্ন শিল্প প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র উৎসব, মসলিন উৎসব আরও কত–কী৷ অনেকে বেড়াতে যান সেখানেও। মাথায় ফুলের মুকুট পরা তরুণীরা দলে দলে বের হন এদিন। চলে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া, মজা আর হইহুল্লোড়। এই সময়ের আবহাওয়াটা অদ্ভুত। কখনো হালকা শীত, রোদ উঠলেই আবার উষ্ণ। তবে শীত বা গরম, কোনোটাই বেশি থাকে না বলে আরাম আরাম লাগে। এমন সময়ে সুতি বা জর্জেট পোশাকই সারা দিন পরে বেড়ানোর জন্য উপযোগী। ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহা বলেন, তাঁরা বিশেষ কোনো উৎসব ধরে যেমন কাজ করেন, তেমনি বিভিন্ন বার্তাও তাঁদের পোশাকের নকশার মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা থাকে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী মোটিফগুলোকে কেন্দ্র করে পোশাকে তাই নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়।

এখন তো সময় ভালোবাসার
এখন তো সময় ভালোবাসার

বিপ্লব সাহার মতে, এ দেশে ফাল্গুনের প্রথম দিনটিই ভালোবাসার দিন, আর এই উৎসবও সর্বজনীন। ভালোবাসা দিবস নিয়ে যেমন তরুণমহলেই বেশি মাতামাতি দেখা যায়, পয়লা ফাল্গুনের দিনটি কিন্তু তেমন নয়। মনে যদি বসন্ত থাকে, তবে হোক তিনি আশি বছরের বৃদ্ধ, তাঁর বসন্তও হয়ে ওঠে নানা রঙে রঙিন। ভালোবাসা দিবসে অনেক জুটিকে দেখা যায় রেস্তোরাঁয় নতুন স্বাদের খাবার খেতে৷ অনেক রোস্তোরাঁতে তাই ভালোবাসা দিবসে বিশেষ খাবারের আয়োজন থাকে রাতে বা দুপুরের মেন্যুতে৷ এক দিনের পরিকল্পনা করে অনেকে বেরিয়ে পড়েন কাছাকাছি বেড়িয়ে আসতে৷ এ ছাড়া শহরের মধ্যেই হয়তো বিশেষ কোনো প্রদর্শনী বা মেলা ঘুরে সময় কাটাতে পারেন৷ শহরের আশপাশে বেড়াতে গেলে নিজস্ব গাড়ি সঙ্গে নিলেও শহরের মধ্যে বেড়াতে পারেন রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা হেঁটে৷ পথের ধারের খাবার, চা, পানিপুরি, ভেলপুরি, ফুচকা বা চটপটি চেখে দেখার সুযোগও হাতছাড়া করেন না অনেকে৷
বন্ধু বা ভাইবোন মিলে বসন্তে দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায়। অনেকেই এদিন মিলিয়ে পোশাক পরেন। তরুণীরা শাড়ি পরতে বেশি ভালোবাসেন। শাড়ি পরে সারা দিন বেড়াতে স্বচ্ছন্দ্যবোধ না করলে বেছে নিতে পারেন সুতি বা লিনেনের টপ, কুর্তি বা সালোয়ার–কামিজ।
অনেক প্রতিষ্ঠান এবার ফিউশনধর্মী কাজ করেছে। নেটের কিছু লম্বা জ্যাকেটও দেখা গেল। এটি পোশাকের ওপরে পরার জন্য। আর বসন্তের পোশাক সংগ্রহে ফ্লুরোসেন্ট রংগুলো নিয়েই বেশি কাজ হয়েছে এবার। হলুদ তো আছেই, তার সঙ্গে রয়েছে কমলা ও সবুজের মতো রং। এই রঙের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে ম্যাজেন্টা ও লালের।

ফুলেল দিনে ফুলের উপহার তো থাকবেই
ফুলেল দিনে ফুলের উপহার তো থাকবেই

তাঁত, থামি, কোটকি শাড়ি চলবে এই বসন্তে। সুতির শাড়িতে ব্লক প্রিন্টও থাকতে পারে। শুধু যে হলুদই পরতে হবে এমন নয়, এর সঙ্গে থাকতে পারে নানা উজ্জ্বল রঙের মিশেল।
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের পোশাক নিয়ে কথা হলো ফ্যাশন হাউস লা রিভের হেড অব ডিজাইন মন্নুজান নার্গিসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভালোবাসা দিবসে তাঁরা তরুণীদের জন্য ট্রেন্ডি পোশাক এনেছেন। জাম্পস্যুট, শ্রাগ এগুলো পাওয়া যাবে তাঁদের সংগ্রহে। এদিন তরুণ–তরুণীদের লাল, ফিরোজা, নীল—এই রঙের পোশাকে দেখা যাবে।এক রঙের জাম্পস্যুটের সঙ্গে প্রিন্টের শ্রাগ বা জ্যাকেট মানায় ভালো এবং প্রিন্টের পোশাক হলে জ্যাকেটটি হবে একরঙা এবং তা নেট বা জর্জেট কাপড়ের হলেই সুন্দর দেখাবে।

চলছে বইেমলা, সেখানেও যেতে পারেন বই কিনতে
চলছে বইেমলা, সেখানেও যেতে পারেন বই কিনতে

ছেলেরা ভালোবাসা দিবসে পরতে পারেন টি-শার্ট। কেউ চাইলে পোলো টি-শার্টও বেছে নিতে পারেন। পাঞ্জাবির ঝুল এখন হাঁটুর নিচ পর্যন্ত রাখা হচ্ছে, আর ঢিলেঢালা নয়, ছেলেদের ফিটিং পাঞ্জাবির চল এসেছে এখন। পাঞ্জাবির সঙ্গে পরা কটির কাপড় ও কাটেও এসেছে বৈচিত্র৵৷
সারা দিনের ঘোরাঘুরির সময় কেমন হবে এদিনের সাজসজ্জা? পরামর্শ দিয়েছেন ক্লিওপেট্রা বিউটি স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। মুখে দাগ না থাকলে শুধু কমপ্যাক্ট পাউডার আর হালকা গোলাপী আভার ব্লাশনেই কাজ হয়ে যাবে।চোখে ন্যাচারাল রঙের আই শ্যাডো, কাজল আর ঘন করে মাশকারা লাগালে আকর্ষণীয় দেখাবে। এই দুই উৎসবে পোশাকেই হরেক রঙের খেলা থাকে, তাই মুখে বেশি রংচঙের কোনোই প্রয়োজন নেই। মানিয়ে গেলে টকটকে লাল রঙের লিপস্টিক অবশ্য দেওয়া যেতে পারে। ত্বকে দাগ থাকলে খুব সামান্য ফাউন্ডেশন দিয়ে তা ঢেকে নিন। আর ফাল্গুনের সাজে ফুল তো অবশ্যই থাকা চাই। চুলটা আধা খোলা, আধা বাঁধা ঢঙে আটকে নিয়ে তাতে ফুল গুঁজে দিতে পারেন। তা না হলে ফুলের মুকুট বা টায়রাও আজকাল পরছেন অনেকে। আর ছেলেদের আর সাজ কী! চুলগুলো জেল দিয়ে সেট করে নিতে পারেন, অথবা যে হেয়ার স্টাইল মানানসই, সেটি করে নিতে পারেন।তো এবার জমিয়ে আড্ডা ও বেড়ানো চলুক৷