মুঠোফোনে অপরাধের শিকার হলে

দিন যত যাচ্ছে, প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার মান তত আধুনিক হচ্ছে। এর পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। মুঠোফোনে বিরক্ত কিংবা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার শিকার হলে নির্দিষ্ট আইনে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা সম্ভব এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তির শাস্তি পেতে হবে। সিম কার্ড বা মুঠোফোনের নতুন সংযোগের মালিকানা অর্জন, মালিকানা পরিবর্তন, নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন-সংক্রান্ত তথ্য সংস্করণ করা প্রভৃতি বিষয়ে নিয়মকানুন রয়েছে। এ আইন মানা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে মুঠোফোনের সিম নিবন্ধন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর ফলে সহজে মুঠোফোনের মাধ্যমে অপরাধ সংগঠনকারী ব্যক্তিকে সহজেই বের করা সম্ভব হচ্ছে, যদিও সিম নিবন্ধন নিয়েও একধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে। মুঠোফোন-সংক্রান্ত যেকোনো ধরনের অপরাধের বিচার চাওয়ার সুযোগ আইনে রয়েছে।

আইন কী বলে
সুনির্দিষ্টভাবে মুঠোফোন অপরাধ সংঘটিত হলে সাজার পরিমাণ কী হবে, তা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০১ (সংশোধিত ২০১০)-এ বলা আছে। কেউ অশ্লীল কোনো ছবি বা বার্তা মুঠোফোনে আদান-প্রদান করলে ৬৯ ধারা ক, খ দফায় বলা আছে, ওই ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় সাজা ভোগ করতে হবে। এ ছাড়া ৬৯ ধারার গ-তে বলা হয়েছে, কেউ যদি চাঁদা আদায়ের উদ্দেশ্যে খুদে বার্তা বা কল করে হুমকি দেয়, তবে তার পাঁচ বছর জেল অথবা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে।
৭০ ধারায় বলা হয়েছে, ফোনের মাধ্যমে কাউকে বিরক্ত করলে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে। কারও ফোনে যদি আড়ি পাতা হয়, তবে ৭১ ধারায় বলা হয়েছে, দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের অতিরিক্ত কারা ভোগ করতে হবে। এই আইনের ৯৭ ধারার ক-তে বলা হয়েছে, সরকার যদি মনে করে, তবে সে ক্ষেত্রে দেশের প্রয়োজনে যেকোনো সময় যে কারও মুঠোফোনে আড়িপাতার অধিকার সরকারের আছে। এ আইনের ৬৬ ধারায় বলা আছে, কাউকে উদ্দেশ করে যদি মিথ্যা বার্তা পাঠানো হয়, সে ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০০ কোটি টাকা জরিমানা করা হবে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। মুঠোফোনের মাধ্যমে কোনো আপত্তিকর বা অশালীন কোনো ছবি বা ভিডিও ইন্টারনেটে আপলোড করলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনেও প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।

কীভাবে প্রতিকার চাইতে হবে
এ আইনে প্রতিকার চাইতে হলে অপরাধের শিকার ব্যক্তি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের নিকট তাঁর অভিযোগ লিখিতভাবে জানাতে পারেন। কমিশন এ অপরাধের তদন্ত সাপেক্ষে থানায় গ্রাহকের পক্ষে মামলা করতে পারে। এ আইনের আওতায় অপরাধের বিচার হয় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরে প্রথম শ্রেণির বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে। আদালত কোনো পরিদর্শক বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কোনো লিখিত প্রতিবেদন ছাড়া অপরাধের বিচার শুরু করবেন না। অপরাধের অভিযোগ গঠনের দিন হতে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার সমাপ্ত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ