রান্নাতেও পাকা ইরেশ যাকের

ইরেশকে যখন জানানো হলো বর্ণিল খাবারদাবার ম্যাগাজিনের জন্য রান্না করতে হবে। কোনো রকম ভাবনা ছাড়াই বললেন, ‘ঠিক আছে, আমি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যে রান্নাগুলো ঈদের দিন করতাম সেগুলো করব।’ অভিনেতা ইরেশ যাকের। অভিনয়ের মতো রান্নার হাতও তাঁর বেশ পাকা। পাঁচফোড়ন খাসির কালিয়া করার সময় সুঘ্রাণ যখন নাকে এসে লাগল, বোঝা গেল রান্নার ব্যাপারেও সিরিয়াস তিনি।

রান্না করতে পছন্দ করেন। কিন্তু বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে খুব একটা রান্না করেননি। রান্নাটা শিখেছেন বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার সময়। প্রথম প্রথম একটু অসুবিধা হতো। যুক্তরাষ্ট্রে এক মামা থাকতেন।

.
.

তরকারিতে বিশেষ করে মাংস রান্না করতে কতটুকু মসলা দিতে হবে, তাঁর কাছ থেকে শিখেছেন ইরেশ যাকের। ‘ওখানে জীবনযাপনের ধরন এমন রান্নার জন্য খুব একটা সময় পাওয়া যায় না। খাসি ও গরুর মাংসের খুব দাম ছিল। তাই মুরগির কিমা কিনে এনে রান্না করতাম। ঘি দিয়ে ভাত ভাজি করে ফেলতাম। শুধু ঈদের দিন খাসির মাংসের কালিয়া বা গরুর মাংস রান্না করা হতো। সঙ্গে থাকত ভুনা খিচুড়ি।’ বলেন ইরেশ যাকের।

.
.

রান্না নিয়ে মজার ঘটনাও জানা গেল তাঁর কাছ থেকে। একবার বসন্তকালীন ছুটিতে এক মার্কিন বন্ধুর সঙ্গেই পরিকল্পনা করেছিলেন বেড়াতে যাওয়ার। যাওয়ার আগ মুহূর্তে গাড়ি নষ্ট হয়ে গেল। মেজাজ এমন খারাপ হয়েছিল ইরেশ যাকেরের যে রাগ কমাতে মুরগির মাংসে অনেক মরিচ দিয়েছিলেন। অতিরিক্ত ঝালের কারণে পরে তাঁদের দুজনের খেতে খুব কষ্ট হয়েছিল। দেশে ফিরে কি রান্না করা হয় না? ইরেশ বলেন, ‘মাঝেমধ্যে করি। অভিনয়, অফিস সবকিছু সামলে সময় থাকে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর কথা মনে হলে এগুলো রান্না করি। বন্ধুরা বেড়াতে এলেও  করা হয়।’

নিজে যতই ভালো রান্না করুন না কেন, মা সারা যাকেরের হাতের ডিমের সেমাই ও বিরিয়ানি খেতে খুব পছন্দ করেন। ঈদের দিনে এটা ছাড়া চলবেই না।

.
.

পাঁচফোড়ন খাসির কালিয়া

উপকরণ

খাসির মাংস এক কেজি, তেল আধা কাপ, পেঁয়াজ টুকরা এক কাপ, পাঁচফোড়ন এক চা-চামচ, রসুনবাটা এক টেবিল চামচ, আদাবাটা দুই টেবিল চামচ, দারুচিনি দুই ইঞ্চি, এলাচি দুটি, লবঙ্গ দুটি, এক চা-চামচ আর কাশ্মীরি মরিচ বা সাধারণ লাল মরিচের গুঁড়া দেড় চামচ, কাঁচা মরিচ পাঁচটি।

প্রণালি

প্রথমে এক কেজি খাসির মাংস মাঝারি টুকরো করে ভালো করে পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। তারপর কড়াইয়ে আধা কাপ তেল দিয়ে এক কাপ পেঁয়াজ টুকরা ভেজে নিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি রং হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে।

পেঁয়াজগুলো পাশে সরিয়ে কড়াইয়ের মাঝে জমা তেলে এক চা-চামচ পাঁচফোড়ন দিন। তেলে এগুলো ফুটে উঠলে তাতে এক টেবিল চামচ রসুনবাটা, দুই টেবিল চামচ আদাবাটা, দুই ইঞ্চি দারুচিনি, দুটি এলাচি ও দুটি লবঙ্গ একটু ছেঁচে নিয়ে দিতে হবে। হলুদ এক চামচ আর দেড় চামচ কাশ্মীরি মরিচ বা  সাধারণ লাল মরিচ দিতে হবে। এবার ভালোভাবে মসলাগুলো কষিয়ে নিতে হবে। আদা, রসুনের কাঁচা গন্ধ চলে গেলে মাংস দিয়ে আবার কষাতে হবে। ভালোভাবে কষানো হলে দমে অথবা প্রেশারকুকারে বসিয়ে দিতে হবে। প্রেশারকুকারে আধঘণ্টা রাখলে মাংস সেদ্ধ হয়ে যাবে। এবার ঝোলের আন্দাজ বুঝে গরম পানি ঢালতে হবে। শেষে কাঁচা মরিচ দিয়ে দমে রেখে চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করতে পারবেন।

ভুনা খিচুড়ি
ভুনা খিচুড়ি

ভুনা খিচুড়ি

উপকরণ

পোলাও চাল ৪ কাপ, ভাজা মুগডাল ২ কাপ, আদা মিহিকুচি ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজকুচি ৪ টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ ৮-১০টি, তেজপাতা ২টি, দারুচিনি ৪ টুকরা, ছোট এলাচি ৪টি, লবঙ্গ ৪টি, লবণ পরিমাণমতো, চিনি আধা চা-চামচ, হলুদ আধা চা-চামচ, তেল আধা কাপ, ঘি সিকি কাপ, গরম পানি ৪ কাপ।

প্রণালি

চাল-ডাল ধুয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে পানি ঝরাতে হবে। তেল, ঘি, একসঙ্গে গরম করে আদা ও পেঁয়াজকুচি দিয়ে ঘিয়ে রং করে ভেজে গরমমসলা, তেজপাতা, চাল-ডাল দিয়ে ৭-৮ মিনিট ভেজে লবণ, হলুদ দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ফুটে উঠলে মাঝারি জ্বালে রান্না করতে হবে। খিচুড়ির পানি কমে গেলে চিনি, কাঁচা মরিচ দিয়ে ২০-২৫ মিনিট দমে রেখে নামাতে হবে।

.
.