'সবকিছু ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
মেহতাব খানম
মেহতাব খানম

সমস্যা
আমার ছোটবেলার স্বপ্ন দেশসেরা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া। সে লক্ষ্যেই পড়াশোনা করেছি। আমার ফলাফল ভালো। দুটোতেই জিপিএ-৫ পেয়েছি। কিন্তু পরিবারের সবার সঙ্গে আমার ইচ্ছার কোনো মিল নেই। তাদের ইচ্ছা আমি যেন ডাক্তার হই। পরিবারে কোনো ডাক্তার নেই, সেই খালি জায়গা যেন আমি পূরণ করি। ইতিমধ্যে আমাকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফরমও পূরণ করানো হয়েছে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। সবকিছু ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাচ্ছে, ভয়ে কিছু বলতেও পারছি না। নিজের ইচ্ছাটাকে গুরুত্ব দেব নাকি পরিবারের ইচ্ছাকে! মানসিক অস্থিরতায় ভুগছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, ঢাকা।

পরামর্শ
তোমাকে বাবা-মা পৃথিবীতে এনেছেন তাঁদের স্বপ্ন পূরণের জন্য এবং সেই কারণে তোমার ইচ্ছাটিকে তাঁরা সম্মান দেখাবেন, সেটি তুমি প্রত্যাশা করতেই পারো। আগের ফলাফলগুলো তোমার তো খুবই ভালো হয়েছে। তুমি যে ডাক্তারি না পড়ে নিজের পছন্দের বিষয়টি পড়তে চাইছ সেটি তো অন্যায় নয়। কেবল পরিবারে কোনো ডাক্তার নেই বলে তোমার নিজের ইচ্ছাকে বিসর্জন দিতে হবে এটি সুবিচারের পরিচায়ক নয়।

তুমি যদি সম্পূর্ণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ ধরনের একটি সেবামূলক পেশায় নিযুক্ত হও, তাহলে আন্তরিকভাবে মানুষকে উপকৃত করতে পারবে না। অনেকেই তাদের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তী সময়ে বিষণ্নতায় ভোগে। মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে কোনো মানুষই নিজের পরিবারে ও সমাজে বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারে না। মনে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তোমার একটি ভয়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে নিঃসংকোচে নিজের ইচ্ছার কথা প্রকাশ করার সৎসাহস দেখাতে পারছ না। হয়তোবা তাঁরা পরিবারে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে পারেননি। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, পরিবারের অভ্যন্তরে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সন্তানদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখে।

মনের ভয়টিকে জয় করে অত্যন্ত ভদ্রভাবে এবং যুক্তি ব্যবহার করে তোমার মনের অবস্থাটি ব্যক্ত করো। তাঁরা যে তোমার কাছে এ ধরনের প্রত্যাশা রাখতে পারেন, সেটির প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান রেখে অকপটে তাঁদের বল যে তুমি কেবল মানসিকভাবে ভালো অনুভব করলেই একজন মনোযোগী ছাত্র হতে পারবে। যেহেতু মেডিকেলে অনেক বেশি পড়াশোনা করতে হয়, সে কারণে মানসিক স্থিতিশীলতা একটি পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করে।

দেশের সেরা ইঞ্জিনিয়ার হওয়া বলতে তুমি কী বুঝিয়েছ, সে ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ধারণা রাখাও প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ কোনো বিষয়ের ওপরে তোমার কোনো গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে কি না, সেটি ভেবে দেখবে।

যদি মৌখিকভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে অসুবিধা হয়, তাহলে লিখিতভাবেও তুমি মনের কথাগুলো জানাতে পারো। এমন কোনো আত্মীয় যদি থাকেন, যার কথা পরিবার মূল্য দেয়, তাঁর সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করো। তাঁকে দায়িত্ব দিতে পারো বাবা-মায়ের কাছে এ বিষয়টি তুলে ধরার জন্য।

এ ছাড়া একটি কাগজে বাবা-মায়ের ইচ্ছা পূরণ করলে তোমার কী সুবিধা ও অসুবিধা হতে পারে সেটি লিখলে তুমি আত্মোপলব্ধির জায়গায় কিছুটা হলেও পৌঁছাতে পারবে। নিজের ইচ্ছাকে ধরে রেখে চললে কী সুবিধা-অসুবিধা হবে তা-ও লিখে ফেলবে। তারপর, দেখো কোনদিকে অসুবিধা বেশি রয়েছে। তখন অসুবিধা যেদিকে বেশি দেখবে, সেই দিকটা বর্জন করে তুমি সিদ্ধান্ত নাও।