মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাছাইপর্ব থেকে শুরু করে চূড়ান্ত নির্বাচনের দিন পর্যন্ত নিজ দল রিপাবলিকান পার্টিতেই বিভেদ ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই সে সময় ট্রাম্পকে সমর্থন দেননি। আগামী জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণের আগেই দলে ঐক্য আনতে উদ্যোগী হচ্ছেন ট্রাম্প। দলের যেসব নেতা তাঁর বিরুদ্ধে ছিলেন, তাঁদের কাছে টানছেন। দলের নেতাদের সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছেন তিনি। মত বিনিময় করছেন। একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও করছেন।
বলা হচ্ছে, টানা এক বছরের নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প শুধু আমেরিকাকেই বিভক্ত করেননি, বিভক্তি এনেছেন নিজের দলেও। দলের জাতীয়ভাবে পরিচিত নেতারা নির্বাচনে ট্রাম্পের সঙ্গে ছিলেন না। এমনকি দলের সাবেক দুই প্রেসিডেন্ট বুশ সিনিয়র ও বুশ জুনিয়রও ছিলেন না ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে।
তবে ৮ নভেম্বর অনেক হিসাবই পাল্টে দিয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে যাঁরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি বিরোধিতা করেছেন, তাঁরাও এখন জয়ের নৌকায় ভাসছেন। নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে দল ও দেশকে ঐক্যবদ্ধ করার কথা বলেছেন।
আগামী জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে যাবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতার পালাবদলের নেপথ্যের কাজ এর মধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। ট্রাম্প প্রশাসনে কারা আসছেন, এ নিয়ে প্রতিদিন চলছে নানা আলোচনা। কতটা রক্ষণশীল লোকজন যোগ দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে, সেদিকেই এখন নজর সবার।
দৃশ্যত, ট্রাম্প এখন সময় দিচ্ছেন তাঁর নিজের ঘরকে ঐক্যবদ্ধ করতে। গত এক বছরে নানা কথায় দলের যাঁদের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছিলেন, এখন প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের কারও না কারও সঙ্গে বৈঠক করছেন। নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ার থেকে নিউজার্সির বেডমিন্সটারের ট্রাম্প গলফ ক্লাবে চলছে একের পর এক বৈঠক। গত শনিবার ট্রাম্প সাক্ষাৎ করেছেন ২০১২ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মিট রমনির সঙ্গে। বাছাইপর্ব থেকেই মিট রমনি কড়া সমালোচনা করে আসছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের। লাগামহীন নানা বক্তব্যের কারণে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘জালিয়াত’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন মিট রমনি।
বাছাইপর্বে দলের ১৬ জন প্রার্থীকে ধরাশায়ী করেছিলেন ট্রাম্প। ওই সময় বাছাইপর্বে হেরে যাওয়া অনেকের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিলেন মিট রমনি। শনিবারে দেড় ঘণ্টার বৈঠকের পর দুজনই বলেছেন, চমৎকার আলোচনা হয়েছে। যদিও বৈরী আচরণের জন্য পরস্পরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কি না, তা জানা যায়নি। ওই বৈঠকের পর থেকেই মিট রমনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন বলে গণমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে মিট রমনির আদৌ আগ্রহ আছে কি না, তাও এখনো জানা যায়নি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র রুডি জুলিয়ানি, জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি জন বল্টন, টেনেসির সিনেটর বব ক্রোকার ও সাউথ ক্যারোলাইনার গভর্নর নিকি হিলির নামও আলোচনায় আছে। উদারনৈতিক রিপাবলিকান হিসেবে পরিচিত গভর্নর নিকি হেলি বাছাইপর্বে প্রকাশ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। তবে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর নিকি হেলি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন।
বাছাইপর্বে ট্রাম্পের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ। শেষ পর্যন্তও তিনি নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানাননি। তবে ট্রাম্পের বিজয়ের পর ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ারে ছুটে আসেন তিনি। ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ক্রুজ বলেছেন, খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণে একসঙ্গে কাজ করার কথাও বলেছেন ট্রেড ক্রুজ।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্বাচনের পর ডেমোক্র্যাটরা নিজেদের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব মিলাতে এখনো ব্যস্ত। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-পরবর্তী রাজনীতিতে ডেমোক্র্যাট পার্টিকে নাড়া দেওয়ার জন্য ভিন্ন নেতৃত্বের প্রত্যাশায় আছেন সমর্থকেরা। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের উত্থানের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান পার্টি নিজেদের মতভিন্নতা ও বিভেদ কাটিয়ে কতখানি ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে, তা দেখতে আগ্রহী এখন রাজনৈতিক মহল।