সার্বিয়া তথা দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সংস্কৃতিতে আরও দুটি জিনিস লক্ষ করলাম, যা সচরাচর ইউরোপের অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোয় নারী-পুরুষের সম–অধিকারের বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখা হয়, সচরাচর আমরা রক্ষণশীল দেশগুলোয় যে রকম দেখি। যেমন সার্বিয়া, মেসেডোনিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, গ্রিস, মন্টেনেগ্রো, আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া—এসব দেশে আপনি যদি কোনো মেয়েকে ডেটিংয়ের জন্য প্রস্তাব দেন এবং তাঁকে কোনো রেস্টুরেন্টে আমন্ত্রণ জানান, তাহলে আপনাকে ওই মেয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। এমনকি রেস্টুরেন্টে খাবার গ্রহণ শেষে এর বিলও আপনাকে পরিশোধ করতে হবে।
আমাদের এ উপমহাদেশের মতো এসব দেশের মেয়েরাও বিয়ের আগে ছেলের সক্ষমতা যাচাই করে। বলকান উপদ্বীপের দেশগুলোয় পরিবারপ্রথা এখনো জোরালোভাবে প্রচলিত। আরেকটা জিনিস, সার্বিয়া কিংবা বলকান রাষ্ট্রগুলোয় আপনি যদি জুতা পায়ে কারও বাড়িতে ঢোকেন, তাহলে বিষয়টিকে সেখানকার মানুষ স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করবে না। আপনাকে জুতা খুলে বাইরে রাখতে হবে অথবা জুতা হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকতে হবে।
ফেরার সময় নেভেনাকে জড়িয়ে ধরলাম এবং তাঁর সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে কিছু ছবি রাখলাম।
বলকান অঞ্চলের ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কতটা অনন্যসাধারণ, সেটা নিশে না এলে কোনো দিনও বুঝতাম না। নিশের প্রেমে সত্যি আমি দিওয়ানা, তাই যখন মস্তিষ্কের স্মৃতিপটে নিশের সে রঙিন মুহূর্তগুলো ভেসে ওঠে, কেনও জানি তখন নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মাঝেমধ্যে আফসোস হয়, যদি নিশে ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্তকে ভিডিওর মতো রেকর্ড করে রাখতে পারতাম।
বলকান উপদ্বীপের সৌন্দর্য যিনি অবগাহন করতে পেরেছেন, তিনি কোনো দিনও তা ভুলতে পারেন না। তাই পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তাঁর কাছে ভালো লাগে না। এ জন্য মিলান কয়েকবারের চেষ্টার পরও ডেনমার্কে গিয়ে থিতু হতে পারেনি, তাকে ফিরে আসতে হয়েছে নিশের ভূপ্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে। সার্বিয়ার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধুর হলেও নিশের প্রতি আমি সব সময় দুর্বল। ক্লাসমেট ইলিয়ার কথাগুলোর তাৎপর্য আমার চোখের সামনে কখনো ধরা দিত না, যদি নিশে ভ্রমণের সুযোগ না হতো। বলা বাহুল্য, আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে নিশে একটি। শেষ...
*লেখক: রাকিব হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া