অস্ট্রেলিয়ার ‘চুক-চ্যাট-হ্যাক’-এ উদ্ভাবনী আইডিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সাফল্য

অস্ট্রেলিয়ার ‘চুক-চ্যাট-হ্যাক’-এ উদ্ভাবনী আইডিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সাফল্য বাংলাদেশি পিএইচডি ফেলো ডা. মো. সোহেল রানা তাঁর ইনোভেটিভ আইডিয়ার জন্য প্রথম স্থান অর্জন করেছেন পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত ‘চুক- চ্যাট-হ্যাক’ প্রতিযোগিতায়
ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার ‘চুক-চ্যাট-হ্যাক’-এ উদ্ভাবনী আইডিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর সাফল্য
বাংলাদেশি পিএইচডি ফেলো ডা. মো. সোহেল রানা তাঁর ইনোভেটিভ আইডিয়ার জন্য প্রথম স্থান অর্জন করেছেন পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া আয়োজিত ‘চুক- চ্যাট-হ্যাক’ প্রতিযোগিতায়। ২০৫০ সালে ৯ বিলিয়ন বৈশ্বিক জনসংখ্যার স্বাস্থ্য ও পুষ্টি রক্ষায় ক্রমবর্ধমান ডিম ও মুরগির চাহিদা মেটাতে ইনোভেটিভ আইডিয়া আহ্বান করেছিল পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও গবেষক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তাঁদের ইনোভেটিভ আইডিয়া নিয়ে। মুরগির ‘লেইং সাইকেল (ডিম প্রদানের সময়সীমা)’ ৭২ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১০০ সপ্তাহ করতে পারলে পোলট্রির সংখ্যা না বাড়িয়েও ডিমের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা যাবে’- সোহেল রানার এই আইডিয়া প্রতিযোগিতার জুরিবোর্ডকে মুগ্ধ করেছে। তিনি জিতে নিয়েছেন ৩ হাজার ডলার মূল্যের মর্যাদাকর পুরস্কার।
 
‘পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া’ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণমূলক নানা রকম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে থাকে। এ ছাড়া পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্ডাস্ট্রিয়াল গবেষণার আওতায় স্কলারশিপ, ফেলোশিপ ও আইডিয়া এক্সচেঞ্জ কনফারেন্স স্পনসর করে থাকে।

বর্তমান বিশ্বে ডিমের উৎপাদন ১৫৭০ বিলিয়ন। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সালে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৫০০ বিলিয়ন। শুধু পোলট্রির সংখ্যা বাড়িয়ে এই বিশাল চাহিদা মেটানো কঠিন কাজ। কাজেই গবেষণার মাধ্যমে মুরগির লেইং সাইকেল বাড়ানো সবচেয়ে উপযোগী, পরিবেশবান্ধব ও স্বাশ্রয়ী অপশন। এর জন্য দরকার হলিস্টিক গবেষণা ও বিনিয়োগ।

ওসটিওপোরোসিস (হাড় ক্ষয়), লেয়ার মুরগির ওয়েলফেয়ার ইস্যু এবং ডিম উৎপাদন হ্রাস ও ডিমের গুণগত মান কমে যাওয়া লেইং সাইকেল বাড়াতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। তবে জেনেটিক ইমপ্রুভমেন্ট, পোলট্রি খাদ্যের মানোন্নয়ন, ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন ও প্রিসিশন ফার্মিংসহ ইনোভেটিভ গবেষণার মাধ্যমে লেইং সাইকেল বাড়ানো সম্ভব। সোহেল রানা তাঁর আইডিয়াতে এই গবেষণার রূপরেখাটাই তুলে ধরেছেন। তাঁর এই আইডিয়া ‘পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া’ কর্তৃক বিভিন্ন নিউজ লেটার, প্রত্রপত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই সার্কুলেট করা হয়েছে। গবেষকেরা এ বিষয়ে গবেষণা করার জন্য প্রপোজাল জমা দিলে বাস্তবসম্মত প্রপোজালগুলোয় ফান্ড দেবে ‘পোলট্রি হাব অস্ট্রেলিয়া’। সর্বোপরি, সোহেল রানার আইডিয়া পোলট্রি গবেষণা খাতে নতুন ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে ডিমের উৎপাদন ১৭ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালে ডিমের চাহিদা বেড়ে হবে ২৮ বিলিয়ন। আমাদের দেশীয় লেয়ার মুরগির লেইং সাইকেল গড়ে ৭০ সপ্তাহ। ফলে মুরগির লেইং সাইকেল বাড়াতে পারলে দেশে ডিমের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বহির্বিশ্বে ডিম রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলে মনে করেন এ গবেষক। এ জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গবেষণা সহায়তা ও বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বিসিএস (প্রাণিসম্পদ) ক্যাডারের সদস্য (৩৩তম ব্যাচ) কৃষিবিদ মো. সোহেল রানা ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ডে পিএইচডি করছেন ‘Precision Livestock Farming in Egg Production’ নিয়ে। নীলফামারীর জলঢাকার ছেলে সোহেল রানা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিভিএম ডিগ্রি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএস (সার্জারি) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চান।