অস্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কোন্দল

ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সরকারি দলে শুরু হয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের কোন্দল। দেশটির ক্ষমতাসীন দল লিবারেল পার্টির সিডনির ল্যাকেম্বা শাখার নতুন কমিটি গঠন নিয়ে এ বিবাদ। এ দ্বন্দ্বের জেরে ধরে পক্ষে-বিপক্ষে তদন্ত করছে দলীয় নীতিনির্ধারক মহল। দলের নীতিবহির্ভূত কোনো কিছু প্রমাণিত হলে শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মূলধারার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ—এমন আশঙ্কা সিডনির স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। কেননা, বাংলাদেশি জনপরিসর ছাড়িয়ে বিষয়টির সমালোচনা করছেন অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। এরই মধ্যে এ নিয়ে সংবাদ পর্যালোচনা প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম প্রধান সংবাদপত্র সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান ফেডারেল সরকার দল হলো লিবারেল পার্টি অব অস্ট্রেলিয়া। দেশটির প্রধানতম শহর সিডনির রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্য সরকারের ক্ষমতায়ও লিবারেল পার্টি। কিন্তু প্রতিপক্ষ লেবার পার্টির তুলনায় দলের আধিপত্য অনেকটায় দুর্বল সিডনির ল্যাকেম্বা নির্বাচনী এলাকায়। তবে এ এলাকাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দোকানপাট ও বসবাস বেশি। লিবারেল পার্টির এ ল্যাকেম্বা শাখার বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৯ মে। এ সভায় দলের নতুন কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির আগের সভাপতি প্রবাসী বাংলাদেশি মোহাম্মদ শাহে জামান আবারও নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে হোয়াইট ক্যাসেল রিসেপশনের সামনে পাহারায় পুলিশ সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

তবে এর এক দিন পর নবনির্বাচিত কমিটির বিরুদ্ধে দলের রাজ্য শাখায় অভিযোগ দাখিল করেন একই দলের প্রতিদ্বন্দ্বী সভাপতি পদপ্রার্থী প্রবাসী বাংলাদেশি রশিদ ভূঁইয়া। অভিযোগ করেন, কমিটি নির্বাচনের ওই সভায় প্রবেশ করতেই দেওয়া হয়নি দলের সিনেটর, নির্বাহী সদস্যসহ বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্যকে। এমনকি তাঁদের প্রবেশ ঠেকাতে রাজ্য পুলিশ এবং প্রাইভেট নিরাপত্তাকর্মী ভাড়া করেছিলেন মোহাম্মদ জামান। এ কারণে নতুন কমিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে অভিযোগ করেন তিনি।
সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের প্রকাশ পাওয়া এক ছবিতে দেখা যায়, সশস্ত্র পুলিশ ও অন্য ব্যক্তিরা সভাস্থল ‘হোয়াইট ক্যাসেল রিসেপশন’–এর সদর দরজায় পাহারা দিচ্ছেন। এ ঘটনায় রাজ্য পুলিশের সম্পৃক্ততায় পুলিশের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘এই দিনে দুজন পুলিশ অফিসার ইউজার-পে ধরনের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁদের কাছে সভায় প্রবেশের ব্যক্তিদের তালিকা রয়েছিল। তালিকায় নাম নেই—এমন অনেকেই এসেছেন এবং অফিসাররা তাঁদের প্রবেশ করতে দেয়নি।’

এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরাও বলছেন, মোহাম্মদ জামান দলীয় সংবিধান অনুসারে শাখা সভাপতির ‘প্রসেডুর‍্যল মোশন’ ক্ষমতাবলেই তালিকার বাইরে অন্য ব্যক্তিদের প্রবেশ করতে দেননি সভায়।

রশিদ ভূঁইয়া তাঁর অভিযোগপত্রে বলেন, ‘হুমকিমূলক কৌশল ব্যবহার করে রাজ্যের নির্বাহী সদস্য ও আমার সমর্থকদের সভায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি, যা একটি ন্যায্য এবং ন্যায়বিচারের পদ্ধতি হতে পারে না। এটি দলের পক্ষে খারাপ দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং আমাদের দলকে অসন্তুষ্টিতে ফেলেছে।’

রশিদ ভূঁইয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদ জামান বলেন, ‘লিবারেল পার্টি নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিয়ে খতিয়ে দেখছে। দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসার আগপর্যন্ত আমরা কিছুই বলতে পারব না।’ অভিযোগটি নিয়ে রশিদ ভূঁইয়ার কাছে তাঁর বক্তব্য জানতে চেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বলেন, ‘দলের কাছে আমরা আমাদের কথা জানিয়েছি, তাঁদের বক্তব্যের আগে আমরা আর কিছু বলতে পারব না।’

অন্যদিকে, সিডনির বাংলাদেশি কমিউনিটিতে সভাপতি মোহাম্মদ জামানকে নিয়ে রয়েছে নানান আলোচনা। এর আগে সিডনির ক্যানটারবেরি-ব্যাংকসটাউন কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মোহাম্মদ জামান। তবে অতিরিক্ত ঋণগ্রস্ত হওয়ার মুখে পদত্যাগ করেন তিনি। তাঁর সভাপতিত্বে চলমান নির্বাচিত কমিটিতে মোহাম্মদ জামানের পারিবারিক সম্পর্কিত সদস্যদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।

এমনকি এবারের কমিটির সম্পাদক পদেও নির্বাচিত হয়েছেন খোদ মোহাম্মদ জামানের স্ত্রী সাজেদা আক্তার। আসন্ন নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সাজেদা আক্তার কাউন্সিলর পদে লিবারেল পার্টি থেকে মনোনয়ন পেতে লড়ছেন। যদি পার্টি থেকে মনোনয়ন পান, তবে ক্যানটারবেরি-ব্যাংকসটাউন কাউন্সিলের মোহাম্মদ জামানের হারানো সিটে লড়বেন তিনি।