এই কোরবানিতে রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের হাসিখুশি হারিয়ে গেল

ঈদুল আজহা আজ শুক্রবার (৩১ জুলাই) উদযাপিত হয়েছে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও কোরিয়াসহ নানান দেশে। তবে এবার ভিন্ন ধরনের ঈদুল আজহা উদযাপন করছে মুসলিম বিশ্ব। একই সঙ্গে নতুন তিক্ত অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিছু দেশে ঈদ জামাতের অনুমতি পেলেও এবার জামাতবিহীন ঈদ কাটে অধিকাংশ প্রবাসীর। ঈদ মানে আনন্দ, এই সর্বজনীন বাণীটি যেন এবার ঈদের জন্য বেমানান। বৈশ্বিক মাহামারি করোনাভাইরাসে প্রবাসীদের ঈদ ম্লান করে দিয়েছে। নেই কোনো কোলাহল, নেই তেমন পশু কোরবানির উৎসব। লকডাউন, চাকরিহীন জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে রেমিট্যান্স সৈনিকদের।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারি মানুষের যাপিত জীবনকে পাল্টে দিয়েছে! বেসুরে করে তুলেছে জীবনের ছন্দকে। সুখ-আনন্দের পরিবর্তে বেঁচে থাকার সংগ্রাম যেন প্রতিপাদ্য ও মুখ্য হয়ে উঠেছে রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের করোনা মহামারি কেড়ে নিয়েছে আনন্দ, কেড়ে নিয়েছে অনেকের চাকরি, বর্ণিল স্বপ্ন। এক অনাবিল স্বর্গীয় আনন্দে আর বিলিয়ে দেওয়া ভালোবাসা যেন কোথায় হারিয়ে গেল। প্রবাসীরাও প্রবাসজীবনের শত কষ্ট, শত ব্যস্ততার ও বঞ্চনার মধ্যে ঈদুল আজহার দিন পশু জবাই দিয়ে, আড্ডা দিয়ে অন্তত খুঁজে নিত আনন্দ। প্রবাসে অবস্থানরত পরিচিতজনদের সঙ্গে ভাগাভাগি করত প্রবাস জীবনের নানা না-বলা কথা, না-বলা ব্যথা। পুরো পৃথিবীতে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মিলে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। বাংলাদেশি অভিবাসীদের যাঁদের পাঠানো অর্থ দেশের অর্থনীতির একটি বড় জোগান, এঁদের প্রেরিত অর্থে চলমান অর্থনীতির চাকা ঘুরছে।

অথচ এই করোনা মহামারির কারণে তারাই নানা সংকটে, নানা বিপদে, নানা হয়রানিতে। প্রবাসীদের মন ভালো নেই, চাকরি হারানোর কারণে অনেকেই বাড়িতে অর্থ পাঠাতে পারেননি, অনেকে ঘর খরচ দিতে পারেননি, বাচ্চাদের স্কুলের বেতন দিতে পারেননি, শহরে ঘরভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় পরিবার গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন অনেকে। কোরবানির জন্য টাকা পাঠাতে পারেননি। কী বেদনা তাঁদের হৃদয়ে। প্রবাসীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ প্রবাসী ছাড়া কেউ বোঝে না, বুঝবে না। অধিকন্তু লাখো প্রবাসী চাকরি হারিয়েছেন এই করোনা মহামারিতে। করোনাকালে এই কোরবানিতে রেমিট্যান্স দিকপালদের হাসিখুশি কোথায় যেন হারিয়ে গেল, কোথায় হারাল।

পৃথিবী লড়ছে অদৃশ্য এক ভাইরাসের সঙ্গে। পুরো স্থবির করে দিয়েছে পৃথিবীকে, ঘরবন্দী করে রেখেছে মানুষকে, সভ্যতাকে। তবে সবুজের পৃথিবী আবার হাসবে। পৃথিবী মুখরিত হবে অনাবিল আনন্দে। পবিত্র ঈদুল আজহার আলোয় দূরীভূত হবে, সব অসুন্দর। দ্রুত দূরীভূত হবে করোনা নামক ভাইরাস। এমনটাই আশা করেন প্রবাসীরা।