একুশ ও রবীন্দ্রনাথের শেষ বয়সের প্রিয়া

একুশ ও রবীন্দ্রনাথের শেষ বয়সের প্রিয়া
ছবি: সংগৃহীত

প্রবাসে বাংলাদেশের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য দিবস, উৎসব-পার্বণ বেশ ঘটা করেই পালন করা হয়ে থাকে, বিশেষ দিনকে ঘিরে এই উৎসব কখনো মাসব্যাপী চলতে থাকে। তবে বর্তমানে করনাকালে কঠিন সময় এবং লকডাউনের সীমাবদ্ধতার জন্য সবকিছুই সীমিত এবং ভার্চ্যুয়াল হয়ে গেছে। গত ২১ ফেব্রুয়ারি কানাডা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অব রাজশাহী ইউনিভার্সিটি (সিএএআরইউ) আয়োজন করে একটি ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের।

একুশকে বুকে ধারণ করে টরন্টোতে অবস্থানরত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা সাদাকালোতে নিজেদের উপস্থাপন করেন গান-কবিতা-আলোচনায়। জুমে আয়োজনে সেদিন কবিগুরুর পাণ্ডুলিপির সাদাকালো শাড়িটা আমার ভেতর অন্য রকম এক ভালো লাগা সৃষ্টি করেছিল। কারণ, এই পাণ্ডুলিপিজুড়ে ছিল কবিগুরুর চিত্রশিল্প। মজার বিষয় হলো, তাঁর শিল্পের শুরুটা ছিল তাঁর পাণ্ডুলিপিতে। যে শব্দ বা বাক্য তিনি চান না, তা কেটে আবার তাঁর থেকে লাইন বের করে অন্য কেটে ফেলা শব্দের সঙ্গে জুড়ে দিতেন, এভাবেই তৈরি হয়ে যেত বিভিন্ন আকার, যেগুলো কখনো পাখির মতো, লতাপাতা-ফুল, কখনো-বা মানুষের মুখ বা দানবের আকৃতির কিছু দেখাত। পাণ্ডুলিপি থেকে বেরিয়ে যখন তিনি স্বতন্ত্রভাবে ছবি আঁকতে শুরু করেন, তখন বিভিন্ন রকম বিষয়ের ওপর ছবি তিনি এঁকেছেন। তাঁর ছবির বিষয় হিসেবে এমন কিছু প্রাণী দেখা যায়, যার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

বহুগুণে সমৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংগীতস্রষ্টা, ঔপন্যাসিক, অগ্রণী বাঙালি কবি,  নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। এর বাইরেও তাঁর আরও একটি সৃজনশীল দিক ছিল, যা তিনি শুরু করেন ষাটোর্ধ্ব বয়েসে আর তা হচ্ছে চিত্রকলা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘শেষ বয়সের প্রিয়া’ বলেই সম্বোধন করতেন তাঁর শিল্পকলাকে।

কবিগুরু বলতেন, চিত্রকলার একটি মৃত্যুহীন গুণ রয়েছে। অতীতে এবং বর্তমানে তার গুণ অপরিবর্তিত থাকে। ঠিক নোবেল জয়ের মতো তিনিই প্রথম ভারতীয় চিত্রশিল্পী, যিনি ভারতবর্ষের বাইরে রাশিয়া, ইউরোপ, নিউইয়র্কসহ আরও বহু দেশে তাঁর চিত্রের প্রদর্শনী করেছিলেন।

কবিগুরু স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সরাসরি কাগজে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই ছবি রচনা করতেন। প্রথম দিকে কালো কালিতেই ল্যান্ডস্কেপ এঁকেছেন, কিন্তু তিনি প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য রঙের ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর প্রাকৃতিক দৃশ্যে মানুষের অনুপস্থিতি তাঁদের একটা রহস্যময় চেহারা দেয়। বহুগুণে গুণান্বিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিত্রশিল্প আজও অনেকের কাছে এক বিস্ময়।