একুশে ফেব্রুয়ারি ঘরে এনে দিল বাংলা স্কুল জুরিখ

প্রবাসে বাংলাদেশি ছেলেমেয়েদের বাংলা শেখাতে পারা একটা গর্বের বিষয়। এরপর যদি ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছু একত্রে শেখানো যায়, তাহলে তো বলতে গেলে পুরো বাঙালি হিসেবে রূপ দেওয়া গেল। তবে এ ক্ষেত্রে মা-বাবাকে অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। কেননা, শিশুদের সঙ্গে শুধু পারিবারিক দৈনন্দিন আলাপ হয়। বাইরের জগতের ভাষার ব্যবহার তা অপূর্ণ থেকে যায়। যে দেশে বসবাস করে, সে দেশেই নির্দিষ্ট ভাষা রয়েছে। সেই ভাষায় সন্তানেরা লেখাপড়ায় বেড়ে ওঠে।

এর আগে অনেকবার লিখেছি, ভাষা হচ্ছে ইতিহাস-ঐতিহ্যের চাবিকাঠি। ভাষা জানলে আপনি ইতিহাস-ঐতিহ্য–কালচার সব জানবেন, অন্যথায় কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মা–বাবা সন্তানদের ভাষা কিছুটা বুঝলেও ইতিহাস বোঝাতে সক্ষম হন না। কারণ, ইতিহাস জানতে গেলে প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এই প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা করছে বাংলা স্কুল জুরিখ।

করোনা মহামারির কারণে অনলাইনে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে বাংলা স্কুল থেকে নিজ দেশের বিভিন্ন শহরে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুরা বাংলা শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারছে। ফলে, ফেব্রুয়ারি মাস শুরুর দিন থেকেই তারা বাংলা ভাষার গৌরবের ইতিহাস শিশুদের মধ্যে তুলে ধরতে পারছে এবং মাতৃভাষা বাংলার যে মমত্ব, তা সৃষ্টি করেছে। আমাদের শৈশবের সেই প্রভাতফেরির গল্প থেকে শুরু করে সবকিছুই তাদের মধ্যে চিত্রিত করা হয়েছে।

তাই তো প্রত্যেক শিশু নিজ হাতে শহীদ মিনার অঙ্কন করেছে এবং পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সময় একুশের প্রথম প্রহরে নিজ ঘরে নিজের বানানো শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের জন্য পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। ফলে, সেই প্রভাতফেরির স্বাদ না পেলেও বাংলা স্কুল জুরিখের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার গৌরবের তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস বোধগম্য করতে পেরেছে।

বাংলা স্কুল জুরিখ প্রতিটি শিক্ষার্থীর ঘরে একেকটি শহীদ মিনার তৈরি হয়েছে। সেই শহীদ মিনারে তারা ভালোবাসার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে, এ এক অকৃত্রিম উপলব্ধি। গল্পের মতো সেই সাত সমুদ্র তেরো নদী দূর দেশান্তরে বসে বাংলার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে। এ তো বাংলারই জয়, এটাই তো সেই সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারদের আত্মত্যাগের কৃতজ্ঞতা বহিঃপ্রকাশ। সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ নিজেদের বোধের জায়গা তৈরি করে দিচ্ছে।