করোনাকাল নয়, প্রজাপতিকাল

গত ৯ মাস আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় সময়। সারা পৃথিবী যখন যুদ্ধ করছে করোনা নামক ভয়ংকর ভাইরাসের সঙ্গে, পরাজিত হয়ে অকালে ঝরে যাচ্ছে অগণিত প্রাণ, আমি তখন নিজের মাঝে অনুভব করছি নতুন প্রাণের স্পন্দন!

প্রতিটি দিন কেটেছে অসম্ভব অজানা আতঙ্কে। নিজেকে আর নিজের মাঝের অনাগত প্রাণকে বাঁচানোর প্রবল চেষ্টা করে যাচ্ছি আমি আর আমার পরিবার! সব প্রতিকূলতাকে জয় করে গত ১৩ জুলাই এই অস্থির এবং নজিরবিহীন সময়ে জন্ম নিল আমার ছোট্ট প্রজাপতি। ওর এই ছোট্ট শরীর আর প্রথম কান্না দিয়ে চিৎকার করে পৃথিবীকে জানিয়ে দিল, ‘দেখো আমি এসেছি!! আমি ভয় পাইনি!!আমি ভয় পেতে শিখি!’

সমস্ত সময়টা আমার ছোট্ট মেয়েটা পর্বতের মতো অটল থেকেছে। আমি শুধু চুপিচুপি রোজ রাতে বলতাম, ‘ভয় পেয়ো না মা, আমি আছি তোমার জন্য সব সময়, প্রতিটি মুহূর্তে!’

আমার আজকের লেখা আমাদের মা আর মেয়ের কঠিন সময় পার করে আলোর মুখ দেখার!
এটি আসলে আমাদের দুজনের ডায়েরি...
করোনাকাল নয়, প্রজাপতিকাল!

১২ ডিসেম্বর ২০১৯
শরীরটা বেশ খারাপ লাগছে বেশ কিছুদিন ধরে। তাই প্রেগনেন্সি টেস্ট করলাম। রেজাল্ট পজিটিভ! বাসায় কেউ নেই। বসে ভাবলাম ১০ বছর, লম্বা সময় বিরতি, পারব তো?!

ছেলেমেয়েরা স্কুল থেকে এসেছে। ওরা আমার বন্ধুর মতো। সবকিছু শেয়ার করি। ওদের বললাম। দুজনের চোখ চকচক করে উঠছে। মেয়ে জিজ্ঞেস করল,
-মা, is it a boy or a girl?
হেসে বললাম,
-এখনো জানি না!!
ছেলে বলল, বাবা জানে?
-not yet!!

সন্ধ্যায় ওদের বাবা এল। আমি বলার আগে আমার উত্তেজিত ছেলে-মেয়ে কলকল করে উঠল!! ও আমাকে এসে জিজ্ঞেস করল,
-তুমি কি রেডি নতুন বেবির জন্য?
বললাম,
-৩ বছর আগে একবার হারিয়েছি। এবার আর হারাতে পারব না!

৩০ ডিসেম্বর ’১৯
প্রচণ্ড পেটব্যথা, বমি!! কুইন্স হসপিটাল!!
ডক্টর বলছে, অ্যাডমিট হতে হবে। May be ectopic pregnancy again!
ও খোদা! সব ঠিক করে দাও! আবার নিতে পারব না!
রাতে থাকলাম। সারা রাত দোয়া পড়লাম।
সকালে স্ক্যান। ডক্টর বললেন, এবার সব ঠিক আছে।
সত্যি? সত্যি সব ঠিক হবে এবার?

৩১ ডিসেম্বর ’১৯
বছরের শেষ রাত। আমি বিছানায়। দুর্বল। বাচ্চাদের মন খারাপ। কোনো পার্টিতে যাওয়া হলো না। কোনো উৎসব আয়োজন হয়নি। মা অসুস্থ!! জানালা দিয়ে ফায়ার ওয়ার্কস দেখলাম চারজন একসঙ্গে। ওরা দাঁড়িয়ে, আমি শুয়ে। বললাম, নতুন বছর এবার অন্য রকম হবে আমাদের জন্য। ওই মুহূর্তে কি সত্যিই জানতাম, নতুন বছর কতটা অন্য রকম হবে শুধু আমাদের জন্য নয়, পৃথিবীর সবার জন্য?

২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০
আমাদের বিবাহবার্ষিকী!! ১৯ বছর হলো। লম্বা সময় পথচলা। ফুল, কেক, মোমবাতি—সব আগের মতো। আমি আগের মতো নেই। পানিও পেটে রাখতে পারছি না।
না, আমাকে হসপিটালে নিয়ে যাও। দাঁড়াতে পারছি না।
আবার কুইন্স!! আবার কলি ফ্লাওয়ার ওয়ার্ড!! ডাক্তার, ওষুধ, গন্ধ!

৮ মার্চ ’২০
একটু ভালো লাগছে। আম্মু, ভাইয়াকে জানিয়েছি। আম্মু খুশি কিন্তু আমার কষ্ট সহ্য করতে পারে না। আসার কথা ছিল আমার কাছে। এখন আর সম্ভব নয়। মায়ের হাতের রান্না খাওয়া এবারেও হলো না। আম্মু শুধু কাঁদে আর দোয়া পড়ে। ভাইয়া ফার্মাসিস্ট। অনেক জানে। বলে, আগের মতো সব সহজ হবে না এবার, শক্ত হও।

কী একটা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। চীনের উহান প্রদেশ থেকে শুরু হয়ে ইউরোপে, আমেরিকায় ধেয়ে আসছে। ইরান এরপর ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন—সব জায়গায় শুধু ছড়াচ্ছে না, কেড়ে নিচ্ছ অগণিত প্রাণ।

নতুন ভাইরাস, কোনো ভ্যাকসিন নেই, কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। কী ভয়ংকর! ইংল্যান্ডে আমরা নিরাপদ আছি তো?

২০ মার্চ ’২০
অবশেষে সব স্কুল কলেজ বন্ধ হয়ে গেল সমগ্র ইউকে-তে। আমি ওদের আগেই পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছি স্কুলে আমার এই অবস্থার কথা বলে। স্পেন, ফ্রান্স, ইতালির মৃতের সংখ্যা শুনে ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। ইংল্যান্ডের গভর্নমেন্ট এখনো রিলাক্স মুডে আছে। কী হবে কে জানে!!!

ভাইয়া ফোন করে জানায়,
-আমেরিকার নিউইয়র্কসহ সব স্টেটে খুব খারাপ অবস্থা। ঘর থেকে বের হবি না। বাজার করে রাখ। সুপারমার্কেটগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে। কিছু পাওয়া যায় না। কী লাগবে বাজার? দুই মাস হলো কিচেনে যাই না। কী আছে না আছে জানি না। আমার স্বামীকে জানালাম। ও খুব ব্যস্ত। বলছে, শিগগিরই লকডাউন শুরু হবে। সুপারমার্কেট থেকে মন খারাপ করে ফিরে এসে বলল, কিছু নেই শেলফে। সব খালি। অন্য শপে দেখতে হবে। মেয়ে ওপর থেকে চিৎকার করছে,
-মা, we are out of toilet tissue!!
ছেলে বলছে—মা, I am running out of snacks.
চাল আর পাউরুটি শেষ!! আমি কী খাব??!!
মাথা ঘুরছে। আর ভাবতে পারছি না!!
আমরা কি সত্যি ইংল্যান্ডে আছি??!

২৩ মার্চ ’২০
অফিশিয়ালে লকডাউন শুরু হলো ইংল্যান্ডে। আমার স্বামী সব ফাইলপত্র নিয়ে ঘর থেকে কাজ করা শুরু করল। এতে আমি অনেক নিশ্চিন্ত হলাম। আমার এই অবস্থায় ওকে কাছে পাব। বাচ্চাদের নিয়ে ভাবতে হবে না।

বেচারা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। সারা দিন অফিসের কাজ, হাজারটা ইনকোয়ারি। অ্যাকাউন্ট্যান্ট হওয়ার যন্ত্রণা কাকে বলে এবার বুঝলাম! সরকারের দেওয়া অর্থনৈতিক সহায়তাগুলো এতবার ক্লায়েন্টদের বোঝাতে হয়! আমি আর আমার বাচ্চারা মোটামুটি ‘ফারলো’, সেলফ এমপ্লয়েড স্কিম, বাউন্স ব্যাক লোনে এক্সপার্ট হয়ে গেছি।
হেসে বললাম, ‘আমার মেয়ের প্রথম কথা হবে ‘ফারলো’!!

বেচারা রাত ১১-১২টা পর্যন্ত কাজ করে। রান্না করে, বাজার করে আর আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। ওর রান্না মুখে দিতে পারি না। বললে মন খারাপ করে। কিছুই খেতে পারি না। এভাবে কী করে বাঁচব জানি না!!

১৪ এপ্রিল
পয়লা বৈশাখ, এক অন্য রকম বর্ষবরণ! গ্রুপ কলে সবাইকে শুভেচ্ছা জানালে কি মন ভরে? দুপুরে অনেক দিন পর লাল জামা পরলাম, লাল টিপ আর হাতভর্তি লাল চুড়ি! নিজে নিজেই গাইলাম গান ‘এসো হে বৈশাখ’!!
সবাই ফোন করে খবর নেয়। অনেক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু, অনেক দিন না দেখা আত্মীয়—সবাই।
সামাজিক দূরত্ব থাকলেও মানসিক দূরত্ব কমে আসছে সবার সঙ্গে! মন্দের ভালো, তাই না?

২০ এপ্রিল
কত দিন ঘর থেকে বের হই না!! ব্যাক গার্ডেনে রোদ আসলে এসে বসি। আমার বাড়ির পাশে পার্ক ফুল, প্রজাপতি, পাখি আর কাঠবিড়ালি দেখে সময় বেশ কেটে যায়। প্রতি বৃহস্পতিবার NHS-কে ধন্যবাদ জানাই এক মিনিট হাততালি দিয়ে। এটাই একমাত্র বিনোদন আমাদের এখন!!

আশপাশের বন্ধুরা শুনছি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। কারও কারও অবস্থা খুব খারাপ। পরিচিত অনেক বাঙালি মারা যাচ্ছেন!!

আমার প্রতিবেশী জিফা, একজন নার্স। ওকে আজ অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে গেল। ভয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। মেয়েটা বাড়ি ফিরে আসবে তো?
হে খোদা!! রহম করো!!

২৩ এপ্রিল
আজকে নিউজে বলল, এ লেভেল আর জিসিএসি পরীক্ষা বাতিল এ বছর। আমার ছেলের খুব মন খারাপ। বলছে
-my future is ruined Ma!! What will happen now?
আমার টিনএজার ছেলের চোখে পানি। বললাম,
-don’t worry Baba! আমরা সুস্থভাবে এখনো বেঁচে আছি, এটাই তো অনেক!!
অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে!
সবাই বারবার ফোন করে খবর নিচ্ছে। বলছে,
-বের হবে না, খবরদার বের হবে না। চারদিকে বিপদ। জানালার কাছে দাঁড়াবে না।
বিবিসি নিউজে প্রতিদিন মৃতের সংখ্যা বাড়ছে!! আর দেখতে চাই না!!
না আর পারছি না। চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে!! আমার ছেলে দৌড়ে এল! বলল
-কাঁদে না মা! এই তো আমরা! সব ঠিক হয়ে যাবে।
ওর নরম কাঁধে মাথা রাখলাম। ঠিক যেমন আব্বুর কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতাম।
তাই তো! এখনো বেঁচে আছি!

২৪ এপ্রিল
পবিত্র রমজান শুরু। আমার ছেলে প্রথম রোজা রাখা শুরু করল। আমার বন্ধুরা বিভিন্ন ইফতার বানিয়ে দরজার কাছে রেখে যায়। দূর থেকে একনজর আমাকে দেখে যায়। আমার স্বামীর কলিগরা খাবার পাঠায়। কিছু খেতে পারি না। এত খাবার দেখে চোখে পানি আসে। আমি তাদের সবার ঋণ কখনো শোধ করতে পারব না। আমার মনের ভেতর থেকে তাদের জন্য কৃতজ্ঞতা!

আমার ছেলেমেয়ে ইফতারের পর বাবার সঙ্গে নামাজ পড়ে। আমি বসে পড়ি। ওদের বলি, বেবি যেন ভালো থাকে দোয়া করো!
আমি রোজ নামাজে বসে বলি,
-হে খোদা, পৃথিবীর সব মানুষকে বাঁচাও। আর যেন একটা প্রাণও অকালে ঝরে না যায়।
উনি শোনেন কি না জানি না। কিন্তু আমি রোজ একই প্রার্থনা করে যাই!! ওনাকে একদিন শুনতেই হবে!!

২৩ মে
আজ ঈদ। শুনলাম বাংলা একাডেমি ‘ঈদ’ বানান বদলে ‘ইদ’ করেছে। বানানের সঙ্গে ঈদের আনন্দও বদলে গেছে এবার। অন্য রকম এক ঈদ। আমি অনেক খুশি আজ। আমার ছেলে এই প্রথম ৩০টা রোজা রেখেছে। বিকেলে পার্কে গেলাম। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আমাদের সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলি অথবা আত্মার আত্মীয় বলি, তাদের ঈদ মোবারক জানাতে, শ্বাস নিতে!!

২৯ মে
অনেক দিন পর হসপিটাল যাচ্ছি চেকআপ করতে। খোদা, সব যেন ঠিক থাকে। ব্লাড টেস্টে প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে। নার্স কঠিনভাবে খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে বললেন। কিছু খেতে পারি না। আর না খেয়ে কীভাবে আর দুটো মাস পার করব? মনটা খুব খারাপ লাগছে। আর কত ভুগব??!!

১ জুন
মন বেশি খারাপ হলে আমি লিখি। আজকে একটা ছোট গল্প লিখলাম লকডাউনে টিনএজারদের মনমানসিকতা নিয়ে। কী ভেবে ‘পেনসিলে’ দিলাম। হয়তো কেউ পড়বে না। তা-ও মনটা অন্যদিক নেবার জন্যই দিলাম।

ও খোদা, সবাই দেখি পছন্দ করেছে আমার লেখা। প্রায় ১ হাজার ৬০০ বাঙালি আমার লেখা পড়েছে। এত প্রশংসা! সত্যি সব আমার জন্য? ধন্যবাদ পেনসিলকে!

৮ জুন
ঢাকায় আজকে আমার স্বামীর বড় দুলাভাই হঠাৎ করে মারা গেলেন। আমার দেবরের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট এসেছে গতকাল! আমার খালাতো বোনটা অনেক অসুস্থ। ওর টেস্ট করা হচ্ছে। আমেরিকায় মামা হাসপাতালে ভর্তি!

৯ জুন
ঘুম থেকে উঠে বছরের শ্রেষ্ঠ খবর পেলাম। আমার মামাতো ভাইয়ের ছেলে হয়েছে। নবজাতকের স্বর্গীয় মুখের ছবি দেখে মনটা কিছুক্ষণের জন্য ভালো হয়ে গেল। প্রকৃতির কী অদ্ভুত খেয়াল!!

‘নাচে জন্ম নাচে মৃত্যু পাছে পাছে!
তা তা থই থই তা তা থই থই
তা তা থই থই!!’

২৮ জুন
আমার লেখা ‘লকডাউন’ ছাপা হয়েছে প্রথম আলোতে। বিশ্বাস করতে পারছি না। ধন্যবাদ মামাকে যিনি অনবরত উৎসাহ দিয়ে লেখাটা পাঠাতে রীতিমতো বাধ্য করল। বন্ধু, মামারা, আম্মু, ভাইয়া অনেক খুশি! ভাইয়া শুধু বলল,আব্বু থাকলে কত খুশি হতো তোর নাম পত্রিকায় দেখলে! সত্যি! সময়ের সঙ্গে আমরা পেরে উঠি না। কত কিছু হারিয়ে ফেলি আবার কত কিছু না চাইতে পেয়ে যাই!

৯ জুলাই
আজকে আমার বড় ফুপি হঠাৎ করে মারা গেলেন। মনটা খুব খারাপ লাগছে। আমার আব্বুর প্রিয় বোন! কাছের মানুষগুলো একে একে চলে যাচ্ছে! খালা আর খালাতো বোন করোনা পজিটিভ। ওরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আমার শরীর খারাপ লাগছে। দম আটকে আসছে।

১৩ জুলাই
সকাল ছয়টা। হঠাৎ মনে হলো, গরম কিছু পড়ল বিছানায়। এই তো আবার! স্বামীকে ডাকলাম।
-মনে হয় ওয়াটার ব্রেক করল। আমাকে হাসপাতালে নিয়ে চলো। যদিও ৩ সপ্তাহ বাকি!
গাড়িতে যেতে যেতে পুরো ভিজে গেলাম। বেবি ঠিক আছে তো!
হাসপাতালে স্বামীকে ঢুকতে দেবে না। আমাকে হুইলচেয়ারে নিয়ে যাচ্ছে। আমি দূরে সরে যাচ্ছি, ও দাঁড়িয়ে আছে। ছলছল চোখে দেখছে। আর কি দেখা হবে?
‘মরণে ক্ষতি নাই!
যেন একটি করুণাময় স্নেহময় মুখ দেখতে দেখতে এ জীবনের অন্ত ঘটে!’
কে বলেছে শরৎ চন্দ্র, দেবদাস?
না আর ভাবতে পারছি না!
সকাল ৯:৩০
লেবার ওয়ার্ড
-Shaila, Can you hear me??
Your baby’s heart beat is flat. your pressure is very high. Situation is getting worse!!
May be we have to go for c-section.
Are you ready?

চোখ খুললাম। আমাকে ঘিরে আছে ছয়জনের একটা টিম। সবাই নাম বলছে। আমি শুনতে পাচ্ছি না। সারা শরীর কাঁপছে।
ডক্টর রেণুকা বলছেন, stop shaking please!
Sign the form. I am reading it to you!

ও কী সব যেন বলছে। আমি অসহ্য ব্যথায় ছটফট করছি। সব অন্ধকার হয়ে এল।
Shaila!!wake up Shaila!!
Sign here.
অনেক কষ্টে চোখ মেলে সাইন করে বললাম,
-প্লিজ, আমার স্বামীকে ডাকুন।
-we will. we are making OT ready for you.I am coming within 20 minutes.

বেলা ১১টা
সব চুপচাপ, কেউ নেই। শুধু মিডওয়াইফ মেয়েটা মাথা নিচু করে কিছু লিখছে।
হঠাৎ আব্বুকে দেখতে পেলাম। সত্যি আব্বু, হ্যাঁ ! তাই তো। গম্ভীর মুখে তসবি হাতে আমার বাঁ পাশে বসল। আমার পায়ের কাছে কি আম্মু? বড় বড় উদ্বিগ্ন চোখে তাকিয়ে আছে? ভাইয়া কি পাশে দাঁড়িয়ে? ওর চোখে পানি।
না, আমার আর কোনো ভয় নেই। সবাই আছে পাশে। চোখ বন্ধ করলাম।
হঠাৎ অনুভব করলাম কিছু বের হয়ে আসছে আমার শরীর থেকে। মেয়েটা দৌড়ে এল। প্যানিক বাটন চাপল। চিৎকার করে বলল,
-we are having the baby now!!
কী নাম যেন মেয়েটার, রুবি?
ওর চোখগুলোর কী রং? বাদামি নাকি নীল?
ওর মুখে মাস্ক কেন?
অসম্ভব ব্যথা!
সব অন্ধকার হয়ে আসছে আবার!
Shaila!!! push!!

বেলা ১১.২০
কান্নার শব্দ শুনলাম। বুকের ওপর কেউ ভারী কিছু রাখল।
-অভিনন্দন, শায়লা!
তোমার মেয়ে হয়েছে।
চোখ খোলো।
তাই তো! আমার মেয়ে! আমার কোলে! অবশেষে!!
আলহামদুলিল্লাহ!!

আব্বু কোথায় গেল? জানি চলে গেছে, তার কাজ শেষ! বারবার চলে যায় শুধু! বলে যায় না!!

বেলা ১১.৩০
কোথায় যেন আজান শুনতে পাচ্ছি। তাই তো!
ও! রুবীর ফোনে টাইমার দেওয়া! মেয়েটা মুসলমান। সব কাজের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে।
ডক্টর রেণুকা আমাকে ওটিতে নিতে এসেছে।
রুবী হাসছে। বলছে
-you are too late, Doctor!
ডক্টর হাসছে, রুবী হাসছে।
কী সুন্দর হাসি। পরিরাই মনে হয় এত সুন্দর করে হাসতে পারে।
স্বামীকে ফোন করলাম।
চলে আসো, মেয়ে হয়েছে।
ওর গলা শুনতে পাচ্ছি, আমাকে দেখে হাসল। বেবিকে কোলে তুলে নিল।
বললাম, আমাকে শাওয়ার করতে হেল্প করো।
নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করলাম।
আমাদের মা আর মেয়ের লম্বা সফর শেষ হলো তাহলে। সব বাধা, প্রতিকূলতা, করোনাভাইরাসকে পরাজিত করে আমার ছোট্ট প্রজাপতি উড়ে এল মায়ের কাছে অবশেষে।
এই তো ছোট ছোট অবাক চোখে পিটপিট করে মাকে দেখছে। হয়তো বলতে চাইছে,
-কাঁদছ কেন মা? এই তো আমি চলে এসেছি।
সব বাধা পেরিয়ে। যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি মা!
আমি আর তুমি!
সত্যিই তাই!
আমরা জয় করেছি।
আমার ছোট্ট প্রজাপতি অটল পর্বতের মতো আমার সঙ্গে ছিল আমার সব কষ্ট, ভয় আর প্রচণ্ড মানসিক চাপের মাঝে!
তোমাকে নিয়ে আমার অনেক অনেক গর্ব মা!!
দোয়া করি সারা জীবন সব যুদ্ধে জয়ী হও!!
আমার সাফা!!
আমাদের সাফরীন!!