করোনা প্রকোপ: কোরিয়ায় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মতবিনিময়

প্রবাসী গবেষকদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত
প্রবাসী গবেষকদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাসের প্রকোপে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং এ ক্ষেত্রে কৃষি খাত কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে, এ বিষয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। রাষ্ট্রদূতের সভাপতিত্বে ৪ জুলাই বাংলাদেশ হাউসে অনুষ্ঠিত হয় এ সভা। এতে কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় গবেষণারত ও উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি গবেষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে করোনা মহামারির বর্তমান পরিস্থিতি ও জাতীয় অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে আলোকপাত করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুই চালিকা শক্তি হলো রপ্তানি ও রেমিট্যান্স। রপ্তানি আয় কমে যাওয়ার কারণে দেশের শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিকদের আয় কমে যাচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত মত প্রকাশ করেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বিপর্যয় হতে উত্তরণ এবং দেশে বেকারত্ব ও দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্যে এই মুহূর্তে কৃষি খাতকে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে ‘প্রযুক্তি হস্তান্তর’, ‘স্মার্ট কৃষি’ ইত্যাদির ওপর গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

আলোচনা সভায় বাংলাদেশি গবেষক, বিজ্ঞানী ও শিক্ষার্থীরা বিস্তারিত আলোচনা করে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন, যা নিম্নরূপ—
*বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোরিয়ায় গবেষণারত বাংলাদেশি গবেষকদের সরাসরি/ কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।

*গবেষণার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার গবেষকেরা যৌথভাবে গবেষণা কর্ম পরিচালনা করতে পারেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে একজন গবেষক। ছবি: সংগৃহীত
দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে একজন গবেষক। ছবি: সংগৃহীত

*বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সম্পন্ন করা যেতে পারে, যাতে প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এ দেশে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।

*Korea International Cooperation Agency (KOICA) বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে আসছে। যেহেতু কোরিয়ায় গবেষণারত বাংলাদেশি গবেষকদের একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও কোরিয়া সম্পর্কে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থাকে, সে ক্ষেত্রে KOICA-এর প্রকল্পসমূহ সঠিকভাবে প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কোরিয়ায় গবেষণারত বাংলাদেশি গবেষকদের KOICA-এর কর্মসূচিগুলোতে সংযুক্ত করা যেতে পারে।

*বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশে গবেষণারত বাংলাদেশি গবেষকদের অভিজ্ঞতা, প্রকাশনা, প্রোফাইল ইত্যাদির ভিত্তিতে অগ্রাধিকার প্রদান করা যেতে পারে। বিশেষ করে নবগঠিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে/বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে।

*বিদেশে গবেষণারত বাংলাদেশি গবেষকেরা যদি তাঁদের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশে গবেষণা প্রতিষ্ঠান/ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী হন, সে ক্ষেত্রে সরকার হতে প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা ও প্রণোদনা প্রদান করতে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

লেখক।
লেখক।

*দক্ষিণ কোরিয়ায় যাঁরা কৃষি/প্রাণিসম্পদ বিষয়ে গবেষণা করছেন, তাঁদের ডেটাবেজ তৈরি ও সংরক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যেগ নেওয়ার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়। এ ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পেনশন–সুবিধা পেতে কোরিয়া সরকারের কাছে প্রস্তাব উত্থাপনের অনুরোধ করা হয়।

*কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একত্রীকরণের মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষিপণ্যের গুণমানের মূল্যায়ন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সামগ্রিক সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। এ অবস্থায়, ‘খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষিপণ্যের গুণগত মান উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ দেশের প্রধান ফসলগুলোতো ও রপ্তানিসম্ভাব্য কৃষিপণ্যে দূষিত কেমিক্যাল এবং কীটনাশকের জন্য নিরাপদ মাত্রা নিশ্চিত করে ভবিষ্যতে কৃষিপণ্যগুলোর অনিরাপদ ব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে জোর প্রদান করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশি গবেষকেরা এ ধরনের যৌথ আন্তর্জাতিক গবেষণায় সরাসরি সম্পৃক্ত থেকে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে কোরিয়াসহ উন্নত বিশ্বের বাজারে কৃষিপণ্যের জন্য রপ্তানি ক্ষেত্র সৃষ্টির বিষয়টি আলোচিত হয়।

রাষ্ট্রদূত একজন গবেষককে শুভেচ্ছা উপহার দিচ্ছেন। ছবি: লেখক
রাষ্ট্রদূত একজন গবেষককে শুভেচ্ছা উপহার দিচ্ছেন। ছবি: লেখক

বাংলাদেশের প্রান্তিক কৃষকদের প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। সাথে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন কৃষিজাত পণ্য কোরিয়াতে রপ্তানির পাশাপাশি, মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য যেমন চিংড়ি রপ্তানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়। সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশকে প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া হতে প্রয়োজনীয় RT-PCR ডায়াগনস্টিক কিট দেশে সরবরাহের অনুরোধ করা হয় এবং গবেষকদের পক্ষ থেকে সরকার চাইলে এই বিষয়সহ দেশমাতৃকার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তার অঙ্গীকার করা হয়।

রাষ্ট্রদূত মহোদয় সবার আলোচনা শোনেন এবং এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং সবশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

*লেখক: পিএইচডি গবেষক, বুসান, দক্ষিণ কোরিয়া