কানাডার ম্যানিটোবায় ঈদুল আজহা উদযাপন

পার্কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায়। ছবি: লেখক
পার্কে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায়। ছবি: লেখক

কানাডার ম্যানিটোবায় কোভিড-১৯-এর মধ্যে এ বছর উদযাপন হলো এক অন্য রকম ঈদ। কোভিড-১৯-এর আগে এখানে একটি কনভেনশন সেন্টারে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হতো। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মুসলিম নারী-পুরুষ অংশ নিতেন। এ বছর তা হয়নি। ছোট ছোট অনেক জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। রাজধানী উইনিপেগের সবচেয়ে বড় মসজিদ গ্র্যান্ড মস্কে ঈদের দিন তিনটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। অন্য মসজিদগুলোতে ২-৩টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সব মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কম মানুষ নিয়ে জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মসজিদ ছাড়াও বিভিন্ন পার্কে জামাতের আয়োজন করা হয়েছিল। এর মধ্যে সেন্ট ভিটাল পার্ক, সেন্ট্রাল পার্ক, মারগ্রেট গ্র্যান্ড পুল পার্ক অন্যতম। বড় বড় অনেক অ্যাপার্টমেন্টের সামনের খালি জায়গায় অনেকে জামাতের আয়োজন করেছেন। এসব জামাতে নারী-পুরুষ-শিশুরা অংশগ্রহণ করেন। সব জামাতে পৃথিবী থেকে কোভিড-১৯ দূর করার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা হয়।

নামাজ শেষে পারিবারিক সদস্যদের কোলাকুলি। ছবি: লেখক
নামাজ শেষে পারিবারিক সদস্যদের কোলাকুলি। ছবি: লেখক

নামাজের পর ঈদের দিন শুক্রবার এবং পরের দিন শনিবার অনেকে ছুটে যান বিভিন্ন ফার্মে পশু কোরবানি করতে। এখানে কোনো কোরবানির হাট বসে না এবং যেখানে-সেখানে পশু জবাই করার নিয়ম নেই। সে কারণে মানুষ ফার্মে গিয়ে পশু কোরবানি দিয়ে এসেছেন। সরকারি স্বাস্থ্যবিধির কারণে এখানে সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ গরু বা ছাগলের মাংস পাওয়া যায় না। এখানে বাংলাদেশের মতোন সবাই ধরাধরি করে পশুকে মাটিতে ফেলে জবাই করা যায় না। ফার্ম থেকে পশু পছন্দ করার পর একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পশুটি এনে বিশেষ ধরনের বন্দুক দিয়ে মাথায় গুলি করা হয়। গুলির সঙ্গে সঙ্গে পশুটি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তারপর যিনি কোরবানি করেন তিনি মহান আল্লাহর নামে গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করেন। জবাইয়ে পর ফার্ম কর্তৃপক্ষ চামড়া, মাথা, কলিজা ও নাড়িভুঁড়ি ফেলে দিয়ে পশুগুলোকে একটি বিশাল হিমঘরে বিশেষ ধরনের হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখে। ঝোলানোর আগে মাথা, কলিজা, নাড়িভুঁড়ি বের করার পর পশুটির ওজন করা হয়। হ্যাঙ্গারে ঝোলানোর তিন-চার দিন পর গরুটি ফ্রোজেন হলে টুকরা করে কেটে সরবরাহ করা হয়।

ফার্মের গরু রাখা। এসব গরুই কোরবানির জন্য কেনা হয়। ছবি: লেখক
ফার্মের গরু রাখা। এসব গরুই কোরবানির জন্য কেনা হয়। ছবি: লেখক

এখানে প্রতিটি গরু ওজন হিসেবে বিক্রি হয়। ফার্মে গরুর সব বর্জ্য ফালানোর পর ওজন মাপা হয়। ফার্ম ও গরুর আকার ভেদে দামের কিছু পার্থক্য হয়। তবে প্রতি পাউন্ড ৩ ডলার ২০ সেন্টস থেকে ৩ ডলার ৯০ সেন্টস দরে বিক্রি হয়। অন্যদিকে একেকটি খাসির দাম পড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কানাডীয় ডলার। উল্লেখ্য, ফার্মগুলো শহর থেকে গড়ে ১০০ কিলোমিটার দূরে।

যাঁরা ফার্মে গিয়ে গরু জবাই করার ঝামেলায় যেতে চান না, তাঁদের জন্য বিভিন্ন মুসলিম মালিকানাধীন গ্রোসারি শপে কোরবানির ব্যবস্থা ছিল। সেখানে গিয়ে আগে নাম দিয়ে আসতে হয়। এসব দোকানে কোরবানির সব ব্যবস্থা করে ৫-৬ দিন পর গ্রাহককে দোকান থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার জন্য ফোন করে। তবে এর জন্য দাম একটু বেশি পড়ে। সে ক্ষেত্রে দাম পাউন্ডপ্রতি ৪ ডলার বা তার অল্প কিছু বেশি পড়ে।

কোরবানির আগ মুহূর্তে একটি ছাগলের ফার্মের ছবি। ছবি: লেখক
কোরবানির আগ মুহূর্তে একটি ছাগলের ফার্মের ছবি। ছবি: লেখক

যাঁরা কোরবানি দেন, তারা গরু বা খাসির চামড়া বিক্রি করতে পারেন না। ফার্ম কর্তৃপক্ষ তা রেখে দেয়। এই নিয়ম যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।

তিন ভাগের এক ভাগ মাংস গরিবকে বিলানোর বিধান থাকলেও এ দেশে সেই অর্থে গরিব খুঁজে না পাওয়ার কারণে অনেকে সমপরিমাণ ডলার বিভিন্ন মুসলিম চ্যারিটিতে দান করেন।

প্রতিবছর ঈদের দিন বা এর পরে একে অন্যের বাসায় দাওয়াতের প্রথা থাকলেও এ বছর কোভিড-১৯-এর কারণে তা ছিল না। সবাই খুবই সীমিত আকারে খুবই কাছের বন্ধুবান্ধব দাওয়াত করে করে ঈদ উদযাপন করেছেন।