কানাডায় এ বছর ছিল না বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা

বড়দিনের আলোকসজ্জা
ছবি: সেলিম হায়দার

করোনা মহামারির কারণে এ বছর কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্স থেকে শুরু করে কানাডার কোথাও  বড়দিন উদযাপিত হয় নি। প্রতিবছর বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা নিয়ে বড়দিন উদযাপিত হলেও এ বছর মানুষ যার যার ঘরে ছিল। অন্যান্য বছরে সারা ডিসেম্বরজুড়ে পরিবারগুলো বিভিন্ন পার্টির আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন অফিসে থাকে লাঞ্চ পার্টি। এ বছর অনেকে বাসায় বসে কাজ করার কারণে অফিসে কোনো পার্টি হয়নি। যে অফিসগুলো খোলা ছিল, সেখানে এই ধরনের পার্টি বাতিল করা হয়।

সারা মাসজুড়ে প্রায় প্রতি রাতে কারও না কারও বাসায় ক্রিসমাস পার্টি থাকলেও এ বছর সরকারি নিষেধাজ্ঞা এবং কোভিড-১৯–এর ভীতির কারণে এ বছর তা হয়নি। সব রেস্টুরেন্ট ও বার বন্ধ ছিল। তবে টেক আউট খোলা, অর্থাৎ অনলাইনে অর্ডার দিয়ে খাবার নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। ফলে বার-রেস্টুরেন্ট–কেন্দ্রিক সব ধরনের বিনোদন এ বছর ছিল না। কানাডার অধিকাংশ প্রভিন্সে গত এক মাসের বেশি সময় ধরে কোনো বাড়িতে অতিথি নিষিদ্ধ থাকার কারণে এবার এ দেশের মানুষ তাদের মা–বাবার সঙ্গে বড়দিন উদযাপন করতে পারে নি। শুধু একক পরিবারের সদস্যরা বড়দিন উদযাপন করেছে। এমনিতেই কানাডায় যৌথ পরিবারের ধারণা একেবারে নেই বললেই চলে।

শুধুমাত্র ঘরের লোকজন তাদের সন্তান-পরিবার নিয়ে বড়দিন উদযাপন করেছে। অনেকে তাদের বাড়িতে নিজ উদ্যোগে আলোকসজ্জা করেছে।

আগের বছরগুলোতে প্রতি টি চার্চে ‘ক্রিসমাস কনসার্ট’ একটি অন্যতম আকর্ষণ ছিল। এ বছর প্রায় সব চার্চ বন্ধ থাকার কারণে এ বছর কেউ চার্চে জমায়েত হতে কিংবা ‘ক্রিসমাস কনসার্ট’ আয়োজন করতে পারেনি।

কানাডায় কোভিড-১৯–এর সেকেন্ড ওয়েভ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতিটি দোকানে ‘নন এসেন্সিয়াল’ পণ্য বিক্রি বন্ধ। জামাকাপড় বলতে শুধু বিক্রির জন্য আছে শীতের জ্যাকেট। কেউ এ বছর দোকানে গিয়ে শীতের পণ্য ছাড়া আর কিছুই কিনতে পারছে না। তবে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। মানুষ এখনো অনলাইনে জামাকাপড় কিনতে সেভাবে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। তারপরও যারা অনলাইনে অর্ডার দিয়েছে, তাদের মালামাল অনেক দেরি করে এসেছে।

কানাডার ম্যানিটোবা প্রভিন্সে বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি খ্রিষ্টান পরিবার রয়েছে। তারা প্রতিবছর সব বাংলাদেশিদের নিয়ে ঘটা করে বড়দিন উদযাপন করলেও এ বছর তা হয়নি। তারা এ বছর তাদের পরিচিত বাংলাদেশি পরিবারগুলোর বড়দিনের কার্ড ও চকলেট বিতরণ করেছে। বাংলাদেশি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ডোন হালদার দম্পতি জানান, ‘এ বছর আমরা কিছুই আয়োজন করতে পারলাম না। এই মহামারি কেটে গেলে আগামীতে অনেক বড় করে সবাইকে নিয়ে বড়দিন উদযাপন করব।’

অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সবাইকে বড় খাবারের প্রোগ্রামে অংশ না নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, এ বছরের ক্রিসমাস অন্য বছরের ঐতিহ্যের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি আরও বলেন, ভাইরাসটি যেন না ছড়ায়, তার জন্য কানাডার জনগণ সর্বোচ্চ ত্যাগ শিকার করছে।

এখন পর্যন্ত কানাডাতে এই ভাইরাসে ১৪ হাজার ৫৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ২৮ হাজার ৩৫৪ জন।