ঘরবন্দী ইউরোপে ঘরোয়া জিমের গল্প

জিম এভাবেই প্রতিদিন চলে ট্রেনিং। ছবি: সংগৃহীত
জিম এভাবেই প্রতিদিন চলে ট্রেনিং। ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস নিঃসন্দেহে এ শতাব্দীর বড় বিপর্যয়। কোনো ধরনের যুদ্ধ নয়, নয় কোনো ধরনের পারমাণবিক বোমা কিংবা কোনো ধরনের সামরিক অস্ত্র, এমনকি কোনো বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগও নয়। সামান্য কয়েক ন্যানোমিটারের এক অতি ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ অসহায়। চীনের উহান থেকে শুরু করে এশিয়ার সিঙ্গাপুর, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া হয়ে ইউরোপের ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, জার্মানি, ফ্রান্স; এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া—বাদ যায়নি পৃথিবীর কোনো দেশ, যেখানে ভাইরাসটি বিস্তার লাভ করেনি।


অতিকায় ক্ষুদ্র ভাইরাসটি পৃথিবীর মানুষকে গৃহবন্দী করে ফেলেছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করতে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে মানুষের বহির্মুখী যাতায়াত সংকুচিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানুষ বলতে গেলে ঘরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও সীমিত পরিসরে অনেক জায়গায় বিভিন্ন ধরনের কারখানা চালু আছে। পাশাপাশি ব্যাংক, বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান, সুপারশপ, পেট্রল স্টেশন, ফার্মেসি, হাসপাতাল ও ক্লিনিক এ ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবামূলক কিছু প্রতিষ্ঠানও খোলা রয়েছে, যদিও তাঁদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়েছে। স্লোভেনিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়, এ পরিস্থিতি আমাদের জীবনটাকে একধরনে অস্বস্তিতে ঠেলে দিয়েছে।


ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, অনলাইনে যদিও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে, তারপরেও ইউনিভার্সিটি খোলা থাকলে যেভাবে সরাসরি আমাদের শিক্ষকদের তত্ত্বাবধায়নে সবকিছুর সংস্পর্শ পেতাম, এখন সেটা হচ্ছে না বলে একটি বড় ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। অন্যদিকে এ মুহূর্তে আমাদের কারও কোনো কাজ নেই বাসায় বসে থাকা ছাড়া।


গত ১৯ মার্চ স্লোভেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। আমাদের বাসা ভিপাভা এলাকায়। আমি স্টুডেন্ট ডরমিটরিতে থাকি। ভিপাভা পশ্চিম স্লোভেনিয়ায় অবস্থিত একটি ছোট মফস্বল এরিয়া। যদিও এ এলাকাকে গ্রামের সঙ্গে তুলনা করলেও ভুল হবে না। পুরো স্লোভেনিয়াতে ভিপাভা দুটি কারণে প্রসিদ্ধ। প্রথমটি হচ্ছে এখানে প্রবাহিত বাতাস, যা স্লোভেনিয়ানদের কাছে ‘বুরইয়া ভেটের’ নামে পরিচিত। সম্পূর্ণ স্লোভেনিয়া বলতে গেলে সুউচ্চ আল্পস এবং ডিনারাইডস পর্বতমালা দ্বারা আচ্ছাদিত। হাঙ্গেরির সীমানা অতিক্রম করে যখন কেউ স্লোভেনিয়ায় প্রবেশ করবেন, তাঁর চোখে ধরা পড়বে সারি সারি উঁচু পাহাড় আর ঘন বন-জঙ্গল। বলা হয়ে থাকে, সমগ্র ইউরোপ মহাদেশের মধ্যে সুইডেন ও ফিনল্যান্ডের পর সবচেয়ে বেশি ঘন বন–জঙ্গল রয়েছে স্লোভেনিয়ায়। ভিপাভা থেকে আইডোসচিনা—প্রায় সাত কিলোমিটার এই এলাকা মোটামুটিভাবে বলতে গেলে অনেকটা সমতল; কারণ, জায়গাটি পর্বত–মধ্যবর্তী উপত্যকা অঞ্চল। শীতের শেষের দিকে এবং বসন্তের শুরুতে এই অঞ্চলে তীব্র বেগে বাতাস প্রবাহিত হয়। তুলনামূলক তেমন কোনো বাধা-বিঘ্ন না থাকায় নিকটবর্তী পাহাড় থেকে যখন বাতাস এ সমতল স্থানের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন এর গতিবেগ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। কোনো কোনো সময় ঘণ্টাপ্রতি ২০০ কিলোমিটার বেগের বাতাস এখানে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা এবং বলা হয়ে থাকে, বুরইয়া ভেটের নাকি ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহের মধ্যে একটি। এ জন্য ভিপাভা কিংবা আইডোসচিনায় বেড়াতে এলে আপনি দেখতে পাবেন যে এখানকার বেশির ভাগ ঘরবাড়ি পাথরে নির্মিত, যাতে বাতাসের এ শক্তিশালী প্রবাহ থেকে এখানকার ঘরবাড়িগুলোকে রক্ষা করা যায়। বাইরে ঘণ্টায় দুই শ কিলোমিটার বেগের বাতাস প্রবাহিত হলেও ভেতরে পাথরের তৈরি ঘরে বসে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হয়। অন্যদিকে এই উপত্যকা অঞ্চলকে ঘিরে স্লোভেনিয়ায় গড়ে উঠেছে বিখ্যাত সব ওয়াইনারি। ‘ametnaČrnina’ নামক এক বিশেষ ধরনের আঙুর থেকে ওয়াইন প্রস্তুতির জন্য স্লোভেনিয়ার কদর বিশ্বব্যাপী। উত্তর-পূর্ব স্লোভেনিয়ার মারিবোর এবং পশ্চিম স্লোভেনিয়ার এ ভিপাভা উপত্যকা অঞ্চল সম্পূর্ণ স্লোভেনিয়া এমনকি মধ্য ইউরোপেও জনপ্রিয় ওয়াইন উৎপাদনের জন্য। শীতের শেষ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ভিপাভা উপত্যকা অঞ্চলের সমভূমিতে স্থানীয় কৃষকেরা আঙুরের চাষ করেন এবং এই আঙুর ওয়াইন উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। উপত্যকা অঞ্চলের জলবায়ু ওয়াইন উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হওয়ায় এবং একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের পৃষ্ঠপোষকতার কারণে এখানে স্লোভেনিয়ার প্রসিদ্ধ ওয়াইনারি গড়ে উঠেছে। এসব ওয়াইনারি দেখতে এবং একই সঙ্গে এখানকার ওয়াইনের স্বাদ নিতে স্লোভেনিয়ায় তো বটেই, আশেপাশর দেশগুলো থেকেও অসংখ্য দর্শনার্থী প্রতিবছর ভিপাভাতে জড়ো হন।

বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত
বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে লেখক। ছবি: সংগৃহীত

তবে স্বাভাবিকভাবে এক অর্থে স্লোভেনিয়া অনেকটা নিরস প্রকৃতির একটি দেশ। স্লোভেনিয়ানরা জাতিগতভাবে অনেকটা শীতল প্রকৃতির ও ইন্ট্রোভার্ট ধাঁচের। যেখানে ইতালি, স্পেন, গ্রিস কিংবা পর্তুগালে ছুটির দিন মানেই পার্টি, আনন্দ, গান-বাজনা; সেখানে স্লোভেনিয়ায় ছুটির দিন মানেই একেবারে ফাঁকা এবং জনশূন্য রাস্তাঘাট। শুক্রবার সন্ধ্যা না হতেই সবাই কাজ কিংবা ইউনিভার্সিটি শেষ করে ছুটে চলে বাড়ির দিকে। শনিবার, রোববারসহ ছুটির দিনগুলো সবাই পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করেন। লুবলিয়ানা এবং মারিবোরের মতো বড় শহরের কিছু জায়গা ছাড়া পুরো স্লোভেনিয়ায় রাতের বেলায় মানুষের পদচারণ চোখে পড়বে না কখনো। এমনকি নিউ ইয়ার উদ্‌যাপনের সময়ও দেখা যায়, সবাই কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে একত্র হয়ে আতশবাজি ও নাচ–গানের পরিবর্তে পরিবারের অন্যদের কিংবা অনেক সময় নিজের বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে নতুন বছর উদ্‌যাপন করতে বেশি ভালোবাসে। স্লোভেনিয়ার সাধারণ মানুষ ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনকে বেশি ভালোবাসে আর এ জন্য সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে স্লোভেনিয়ায় বিবাহবিচ্ছেদের হার সবচেয়ে কম।


বাংলাদেশের মতো দেশ থেকে যাঁরা স্লোভেনিয়ায় আসবেন, তাঁদের কাছে প্রথম দিকে স্লোভেনিয়াকে মৃত একটি রাষ্ট্রের মতো মনে হবে। বাংলাদেশের মতো এখানে নেই কোনো প্রাণচাঞ্চল্য, নেই কোনো জনকোলাহল, নেই কোনো উদ্দামতা। সবকিছুই এখানে নীরব আর সুনসান, এ জন্য একেকটি ছুটির দিন মানে একেকটি বিরক্তিকর দিন অনেক সময়। স্লোভেনিয়ার স্থানীয় শিক্ষার্থীরা সবাই নিজ নিজ বাসায় চলে যায় আর আমরা অল্প কিছুসংখ্যক যেসব ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ডরমিটরিতে থেকে যাই, আমাদের কাছেও সব বিরক্তিকর মনে হয়। আশপাশে নেই কোনো শব্দ কিংবা জীবনের প্রতিধ্বনি। সারা দিন ঘরের ভেতর বসে থাকা। আর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে সবকিছু এমনিতে আরও এক অসহনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। স্লোভেনিয়ায় যদিও খুব বেশি মানুষ ধর্ম পালন করে না, তারপরেও ক্রিসমাস কিংবা ইস্টারের সময় কিছুটা হলেও আনুষ্ঠানিকতা বোঝা যায় আশপাশের রাস্তাঘাট, দোকান, শপিং মলগুলো সজ্জিত হতে দেখে। ক্যাথলিক বিশ্বাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা মেতে ওঠেন ইস্টার উৎসবে। এটি ক্রিসমাসের পর ক্যাথলিক চার্চে বিশ্বাসী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে পরিচিত। ইস্টার উৎসব আয়োজনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছোট আকৃতির খরগোশ ঘিরে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এ বছর সেটিও নেই। নীরবতার চাদরে যেনও ঢেকে গেছে গোটা বিশ্ব। মনে হয় কোনো এক অদৃশ্য শক্তি এসে গোটা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মতো স্লোভেনিয়া থেকেও সব মানুষকে নিমেষে শূন্যে তুলে নিয়ে গেছে।

শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ভিপাভা ভ্যালিতে আঙুর চাষ হয়। ছবি: লেখক
শীতের শেষ থেকে গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ভিপাভা ভ্যালিতে আঙুর চাষ হয়। ছবি: লেখক

ভিপাভা অনেকটা গ্রাম্য এলাকা হওয়ায় এমনিতে এখানে জীবনের গতি অনেকটা শ্লথ। বোগদান পেট্রোভিচ, আমার প্রতিবেশী যিনি ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছাতে ডিপার্টমেন্ট অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অধীনে ব্যাচেলর অব সায়েন্সের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সার্বিয়ার নাগরিক। স্বভাবে কিছুটা পাগলাটে, যখন যেটা মনে হয়, সেটাই করে ফেলতে চান। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি একজন খেলোয়াড়। বিশেষ করে ভলিবল ও ফুটবলের প্রতি তাঁর সব সময় আলাদা আসক্তি এবং প্রতিদিন ভিপাভা থেকে বাসে করে সে সোচাতে যায় চার ইউরো খরচ করে ট্রেনিং নিতে। ভিপাভা থেকে সোচার দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার কিন্তু এ পরিস্থিতির কারণে তাঁর ট্রেনিংয়ে যাওয়া বন্ধ। এ কারণে তিনি অনেকটা হতাশ এবং রাগান্বিত। আমি যেমন একটু ফাঁকা সময় পেলেই বিছানায় চলে যাই এবং হয়তোবা হিসাব করলে দেখা যাবে, ছুটির দিনে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আমার অনেক সময় আঠারো ঘণ্টা কাটে বিছানায় শুয়ে; সেখানে বোগদানের কাছে একটু অবসর সময় মানেই খেলাধুলা, কিছু না পেলে কম্পিউটার গেমস। প্রথমে কয়েক দিন কম্পিউটার গেমস খেলে কাটালেও একটা পর্যায়ে এসে তিনি একেবারে হতাশ হয়ে পড়েন। কারণ, জিমের ট্রেইনিং এবং এর সঙ্গে ফুটবল ও ভলিবল তাঁর কাছে ক্ষুধার মতো।


হঠাৎ করে আমাদের সবার মাথায় একটি আইডিয়া আসে, আমাদের ডরমিটরির নিচে তিন রুমবিশিষ্ট একটি স্পেস ছিল যেটি বলতে গেলে পাঁচ–ছয় বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ধুলো, ময়লা, মাকড়সার জাল, ফেলে দেওয়া বিভিন্ন জিনিস, অব্যবহৃত কাঠ কিংবা বিভিন্ন ধরনের রং—সবকিছুতে একেবারে বোঝাই হয়ে গেছে প্রতিটি রুম। প্রথমে আমাদের ডরমিটরির কর্তৃপক্ষ থেকে চাবি নিয়ে সেই বেজমেন্ট স্পেসের প্রধান দরজা খোলা হলো, এরপর সেটাকে ভালোমতো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হলো। প্রথম দিকে বোগদান একা কাজ শুরু করলেও পরে আমরা তাঁর আগ্রহ দেখে সবাই তাঁকে সহযোগিতা করতে শুরু করি। স্থানীয় পাহাড় থেকে দুই ব্যাগ ভর্তি পাথর সাইকেলে চড়ে বোগদান নিয়ে আসে এ বেসমেন্টে এবং একটি লম্বা কাঠের টুকরার দুই প্রান্তে এ ব্যাগ দুটি ঝুলিয়ে এটাকে ওয়েট লিফটিংয়ের কাজে ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা হয়। সব মিলিয়ে দুই ব্যাগ ভর্তি পাথরের ওজন দাঁড়াবে পনেরো থেকে বিশ কিলোমিটার এবং এটি প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। আমাদের ডরমিটরি থেকে পাঁচ মিনিটের মতো হাঁটলে একটি ছোট পার্ক রয়েছে, মূলত স্থানীয় বাসিন্দারা কিংবা অনেক সময় আমাদের ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছার অনেক শিক্ষার্থী বিশেষ করে যাঁরা ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্যাকাল্টি অব এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা তাঁদের অবসরের জন্য সেখানে গিয়ে সময় অতিবাহিত করেন। এ মাঠের চারদিকে বেশ কিছু ছোট কংক্রিটের তৈরি চাকতি রয়েছে। এ রকম দুটি চাকতি নিয়ে এসে একটি দণ্ডের সাহায্যে জোড়া লাগিয়ে ডাম্বেলে রূপ দেওয়া হলো। বেসমেন্টের ভেতর একটি পরিত্যক্ত বেডশিট এবং একটি হার্ডবোর্ড ছিল, যেগুলোকে পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ইয়োগা ম্যাটসহ পুশআপ কিংবা অন্যান্য শরীরচর্চার জন্য ব্যবহার করার রূপ দেওয়া হলো। আর পুলআপের জন্য বেছে নেওয়া হলো বাস্কেট বলের গোলপোস্ট দুটিকে আর দুটি কাঠের স্ট্যান্ডের মধ্যে শক্ত করে দুটি নাইলনের দড়ি লাগিয়ে সেটাকে কেব্‌ল ক্রসওভার মেশিনে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হলো। নিয়মিত দড়ি লাফের জন্য স্কিপিং রোপ আর সাইক্লিংয়ের জন্য বাইসাইকেল তো আছেই।

চিরায়ত ভিপাভা যেখানে প্রায় সব ঘরবাড়ি পাথরের তৈরি। ছবি: লেখক
চিরায়ত ভিপাভা যেখানে প্রায় সব ঘরবাড়ি পাথরের তৈরি। ছবি: লেখক

এই হচ্ছে আমাদের ঘরোয়া জিমের গল্প। কোনো ধরনের টাকাপয়সা নয়, একেবারে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে এখানে ব্যায়াম করা যায়। কোনো প্রফেশনাল জিম থেকে এটা কোনো অংশে কম নয়, বরং এটাকে এক দিক থেকে আমরা ‘ইকো-ফ্রেন্ডলি’ বলতে পারি। কারণ, ফেলে দেওয়া জিনিসকে নষ্ট হতে না দিয়ে আমরা সেগুলো ব্যবহার করে জিমের একটি কাঠামো দাঁড় করার চেষ্টা করেছি। বোগদান নিজেই একজন ট্রেইনার এবং আমরা কেউ এ জিমে গিয়ে কোনো ব্যায়াম করতে চাইলে অনেক সময় দেখি, বোগদান নিজে এসে হাজির হয় আমাদের ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশ এবং করোনার এ দুর্যোগ মুহূর্তে ঘরের ভেতরেও আমাদের সবার বিনোদনের এক মাধ্যম এ জিম। একদিকে সম্পূর্ণ সময় শুয়ে–বসে না থেকে শরীরচর্চার মাধ্যমে নিজের শরীরের যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে, অন্যদিকে এ বন্দিদশার মধ্যেও আমাদের সুখের উপলব্ধির জায়গা হচ্ছে এ জিম। যার যখন সুযোগ হয় ছুটে চলি আমাদের সবার তৈরি এ ঘরোয়া জিমে এবং আমাদের দেখাদেখি এখন আশপাশের বাসা থেকেও স্থানীয় বেশ কয়েকজন আসেন এ জিমে। গৃহবন্দীর এ সময়টাতে জিমটি ঘিরেই যেন এখন আমাদের সবার বিনোদন আর সুন্দর মুহূর্ত উদ্‌যাপনের উপজীব্য।


আশা করি খুব শিগগির করোনাভাইরাস পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আবার নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ও মানুষের হাসি ফিরে আসবে। ধরণি ফিরে পাবে তার আগের রূপ। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।


* লেখক: শিক্ষার্থী, দ্বিতীয় বর্ষ, ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিজিকস অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইউনিভার্সিটি অব নোভা গোরিছা, স্লোভেনিয়া